বিখ্যাত মৈয়মনসিংহ গীতিকার মূল চরিত্র নদের চাঁদ ও মহুয়া। নদের চাঁদের বসতভিটা সুসং দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে এবং ঝাঞ্ছাজাইল বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে বাউরতলা গ্রামের পাশে।  প্রায় সাড়ে তিনশ’ বছর পূর্বে কবি দ্বিজ কানাই (কেন্দুয়া উপজেলা) মহুয়ার পালা নামে একটি পালা গান শুরু করেন। কবি চন্দ্র কুমার দে ১৯২১ সালে ৯ মার্চ মহুয়ার পালা গানটি সংগ্রহ করেন।

১৯২৩ সালের ২৪ নভেম্বর ড. দীনেশ চন্দ্র সেন মহুয়ার পালা গানটি সম্পাদনা করেন। এই পালায় ৭৫৫টি পঙ্ক্তি ও ২৪ অধ্যায় রয়েছে। লোকশ্র“তি রয়েছে, নদের চাঁদের বসতভিটা সুসং দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্ব দিকে এবং ঝাঞ্ছাজাইল বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে বাউরতলা গ্রামের পাশে। সুদর্শন পুরুষ নদের চাঁদ ছিলেন এক জমিদারের দেওয়ান। অপর পক্ষে রূপবতী মহুয়া বেদে সরদার হুমরা বেদের পালিত কন্যা, যাকে শিশুকালে হুমরা বেদে নেত্রকোনার কাঞ্চনপুর থেকে ডাকাতি করে নিয়ে আসে।

বেদে মহুয়াও এক সভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন। বেদেরা ঘাটে ঘাটে নোঙর ফেলত ও হাট বাজারে পাড়ায় সাপের খেলা দেখাত। বেদে মহুয়া যখন নদের চাঁদের গ্রামে সাপের খেলা দেখাতে আসেন তখন মহুয়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে নদের চাঁদ তাকে প্রণয় নিবেদন করেন। মহুয়াও নদের চাঁদের প্রণয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। কিন্তু দুজনের প্রণয়ের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরদার হুমরা বেদে। একদিন নদের চাঁদ মহুয়াকে নিয়ে পালিয়ে যান। এদিকে হুমরা বেদে তা জানতে পেরে দলবল নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া করে। অবশেষে তারা মহুয়া এবং নদের চাঁদকে ধরে ফেলে। হুমরা বেদে নদের চাঁদকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। সরদার মহুয়ার হাতে বিষলক্ষা ছুরি দিয়ে বলে ‘যাও নদের চাঁদকে মেরে ফেল।’ বিষলক্ষা ছুরি নিয়ে মহুয়া নদের চাঁদের দিকে এগিয়ে যান। নদের চাঁদের সম্মুখে পৌঁছে বিষলক্ষা ছুরি দিয়ে তিনি তার নিজের বক্ষ বিদীর্ণ করেন এবং মাটিতে ঢলে পড়েন। প্রণয়নপিয়াসী নদের চাঁদ মহুয়ার এই আত্মত্যাগ সহ্য করতে না পেরে প্রেমের প্রতিদান স্বরূপ বিষলক্ষা ছুরি দিয়ে নিজ জীবন আত্মাহুতী দেয়। মহুয়া ও নদের চাঁদের এই আত্ম ত্যাগ চিরন্তন প্রেমকে মহিমান্বিত করেছে। আজো সেই প্রেমের অমর কাহিনী লোক-মুখে বিরাজমান।