দেশের সর্ববৃহৎ ১৮৩তম ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দান। প্রতিবছর এ মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত। গত ঈদুল ফিতরে আড়াই লাখেরও বেশি মুসল্লি একসঙ্গে এ মাঠে নামাজ আদায় করেছেন। প্রতিবছরই এ মাঠের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে মনোরম পরিবেশে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের অবস্থান। এই মাঠের দক্ষিণ পার্শ্ব দিয়ে নরসুন্দা নদী পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে। বর্তমানে ঈদগাহটির চারদিক অনুচ্চ প্রাচীরে ঘেরা।

শোলাকিয়া মাঠ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মূল মাঠে ২৬৫টি কাতার হয়। প্রতি কাতারে নামাজির সংখ্যা হয় ছয় থেকে সাত শ। সেই হিসাব অনুযায়ী, নামাজির সংখ্যা দাঁড়ায় এক লাখ ৮৫ হাজার ৫০০। ঈদের জামাতে মুসল্লি মাঠ উপচে চারপাশের খালি জায়গা-জমি, বসতবাড়ির আঙিনা ভরে যায়। এ বছর কাতার বাড়ানো হয়েছে পাঁচটি।

কিশোরগঞ্জের এই ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহের সৃষ্টির ইতিহাস সম্পর্কে অনেক জনশ্রুতি আজও প্রচলিত রয়েছে। জানা যায়, ১৮২৮ সালে এই মাঠের গোড়াপত্তন হয়। ওই বছরই স্থানীয় সাহেব বাড়ির সৈয়দ আহম্মদ (র.)-এর তালুক সম্পত্তিতে তাঁরই ইমামতিতে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্থানীয় হয়বতনগর দেওয়ান পরিবারের অন্যতম দেওয়ান মান্নান দাদ খানের বদান্যতায় এ মাঠের কলেবর বৃদ্ধি পায় এবং এর পরিধি বিস্তৃতি লাভ করে। দেওয়ান মান্নান দাদ খান ছিলেন বীর ঈশা খাঁর অধঃস্তন বংশধর।

এ প্রসিদ্ধ ঈদগাহের ময়দানের নামকরণের বিষয়ে জনশ্রুতি হচ্ছে, দীর্ঘকাল আগে একবার এই মাঠে ঈদের জামাতে মুসল্লির সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল এক লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ। এই সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া ও পরে শোলাকিয়ার নামকরণ হয়েছে। অপর একটি ধারণা হচ্ছে, মোগল আমলে এখানে পরগনার রাজস্ব আদায়ের একটি অফিস ছিল। সেই অফিসের অধীনে পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। এটাও শোলাকিয়া নামের উৎস হতে পারে।

এ বছর ঈদুল ফিতরের জামাতে তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের ইছাপশর গ্রামের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ খতিব হিসেবে ইমামতি করবেন। গত বছরও তিনি ইমামতি করেন।

ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে ঈদগাহের পাশে মেলা বসে। এ মেলায় সুন্নতি লাঠি, তসবিহ্, টুপি, রেহাল, সুরমা, জলচৌকি, পিঁড়িসহ বিভিন্ন কাঠের খেলনা ও কুটিরশিল্পজাত দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা এখান থেকে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে বাড়ি ফেরেন।মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, এত বড় জামাত চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। লাখ লাখ মুসল্লি জামাতে অংশ নেন। জেলার বাইরে থেকে যাঁরা আসেন তাঁদের একটি ক্ষুদ্র অংশকে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে, এতে কোনো সমস্যা হয় না। সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয়, মাঠটির চারদিকে অলি-গলিসহ অন্তত ২০টি পথ রয়েছে। ফলে, হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করতে এবং বের হতে কোনো ঝামেলা হয় না। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুসল্লিদের মাঠে আসার জন্য নরসুন্দা নদীর ওপর একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ঝামেলা আরও কমে গেছে। এ বছর তিন লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে অংশ নেবেন বলে তিনি জানান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশের পুকুরটির চারপাশে মুসল্লিদের অজু করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঠের চারদিকে এ বছর মুসল্লিদের জন্য জায়গা খালি রাখা হয়েছে, যাতে সবাই নিবিঘ্নে নামাজ পড়তে পারেন। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল হক ঝুনু জানান, রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, স্থানীয় সরকারমন্ত্রীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দাওয়াত করা হয়েছে মাঠে নামাজ আদায়ের জন্য। তবে গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি কারা আসছেন।

লিখেছেনঃ সাইফুল হক মোল্লা, কিশোরগঞ্জ