কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দিগদাইর হাওরে ফসলি জমির ওপর দিয়ে একটি মাটির রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৪ ফুট প্রস্থের রাস্তা তৈরি করতে শতাধিক কৃষকের দুই হাজার একরের বোরো জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।ইতিমধ্যে প্রায় ৫০-৬০ একর জমির উঠতি বোরো ধান কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কৃষকদের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও থেমে নেই রাস্তা নির্মাণের কাজ।

জানা যায়, স্থানীয় সাংসদের দেওয়া কাবিখার বরাদ্দে দিগদাইর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দিগদাইর থেকে সিংধা গ্রাম পর্যন্ত রাস্তাটি নির্মাণ করছেন। এর জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন প্রকল্প কমিটির সভাপতি।চেয়ারম্যানের দাবি, রাস্তাটি হলে দুটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতে সুবিধা হবে। অপরদিকে কৃষকদের দাবি, ফসলি জমির ওপর দিয়ে না করে একটু ঘুরপথেও রাস্তাটি করা যেত। রাস্তাটি এখন যেখানে হচ্ছে, সেখান থেকে ৩০০ গজ পূর্ব দিকে ঘুরিয়ে নেওয়া যেত বলে মত দিয়েছেন সাধারণ কৃষকেরা। ওই দিকে সরকারি জায়গা আছে।

এদিকে দিগদাইর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক খোকন মিয়া ১৫ মার্চ এবং কৃষক আবুল হাসেমসহ নয়জন ২০ মার্চ কিশোরগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত প্রকল্প কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রাস্তা নির্মাণের জন্য সাংসদ মুজিবুর হক কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় ৬৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেন। ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনকে প্রকল্পের সভাপতি করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ৮ মার্চ থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু করে। বর্তমানে রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে।রাস্তা তৈরির বিরুদ্ধাচরণ করে কৃষকেরা গত শুক্রবার তাড়াইল রাতে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা দাবি করেন, সরকারি রেকর্ডের বাইরে যে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, তা বেআইনি। অবিলম্বে রাস্তা নির্মাণ বন্ধে তাঁরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, দিগদাইর ইউনিয়নের সিংধা গ্রামের আমির উদ্দিনের বাড়ি থেকে শুরু হয়ে সাজিয়া ও ডোবাইল বিলের মধ্য দিয়ে দিগদাইর মাদ্রাসা পুকুরপাড় পর্যন্ত রাস্তাটি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দিগদাইর থেকে শুরু করে এক কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তার মাটি কাটা হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৫০-৬০ একর জমির উঠতি বোরো ধান কেটে ফেলা হয়েছে বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় কৃষক উসমান গণি জানান, তিনি এ বছর মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। জমিটুকু নষ্ট হওয়ায় এ বছর পরিবারসহ তাঁকে এক রকম না খেয়ে থাকতে হবে।

একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাস্তা করায় সেচের পানি চলাচলের নালা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে শতাধিক কৃষকের প্রায় দুই হাজার একর বোরো জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।প্রকল্পের সভাপতি ও দিগদাইর ইউপির চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জানান, এলাকাবাসীর সঙ্গে পরামর্শ করেই রাস্তাটি করা হচ্ছে। এটি হলে দিগদাইর ও মনপুরা এলাকার লোকজনের চলাচলের সুবিধা হবে। তা ছাড়া এলাকার কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

সুত্রঃ প্রথম আলো