কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি ইউনিয়ন পরিষদের পাশ দিয়ে একটি পাকা সড়ক চলে গেছে আউলিয়াপাড়া হয়ে রামপুর বাজার পর্যন্ত। ছয় কিলোমিটারজুড়ে ওই সড়কে অবাধে সরকারি গাছ কাটা চলছে। অপকর্মটি করছেন সড়কের পাশের জমির মালিকেরা। তাঁদের দাবি, সরকারি সড়ক তাঁদের জমির ওপর দিয়ে গেছে, তাই সড়কের গাছগুলো তাঁদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিন্নাটি ইউনিয়নের পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া পাকা সড়কে গত সাত দিনে নজিরবিহীনভাবে ৫০টিরও বেশি রেইনট্রি ও মেহগনিসহ বিভিন্ন জাতের গাছ কেটে নিয়েছেন গ্রামের আরফান উদ্দিন ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন। এলাকাবাসী জানান, এসব গাছ দুই লাখ ১৪ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন আরফান উদ্দিন। কিছুদিন আগে সৌদি আরব থেকে আসা তাঁর ভাইয়ের ছেলে নাজমুল হক গাছ বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, এসব গাছ তাঁদের। তাই এগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমরা নই, গ্রামের অনেকেই গাছ বিক্রি করেছেন।’

বিন্নাটি ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এগুলো সরকারি না ব্যক্তিগত গাছ তা তিনি জানেন না।সাবেক চেয়ারম্যান লু ৎ ফুল বারী খোকন জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান সরকারি গাছ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। নেপথ্যে তাঁর ইশারায় এসব গাছ কাটা হচ্ছে।এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, সাবেক চেয়ারম্যান তাঁর মামাকে দিয়ে এবং বর্তমান চেয়ারম্যান কৌশলে এগুলো করাচ্ছেন।

ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যানকে সরকারি গাছ রক্ষা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি কোনো ভূমিকা পালন করছেন না।ইউনিয়নের সচেতন একাধিক ব্যক্তি জানান, গত ৩১ মে ইউপি নির্বাচনের পর থেকে পরিষদের আঙিনাসহ সড়কের প্রায় ৪০টি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। সড়কের পাশে গতকাল দেখা যায়, শামসুদ্দিন ও মতি ব্যাপারী গাছ কাটার কাজে ব্যস্ত। তাঁরা জানান, অর্ধলাখ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাঁরা গাছগুলো কেটে নিচ্ছেন। আরফান উদ্দিন ভূঁইয়াকে তাঁরা টাকা দিয়েছেন।

এলাকার লোকজন জানান, আরফান উদ্দিন সাবেক চেয়ারম্যান লু ৎ ফুল বারী খোকনের মামা।বিন্নাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান, আবদুল কাইয়ুমসহ বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী জানান, প্রথমে আরফান ভূঁইয়া গাছ কাটা শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি অন্যরাও ছয় কিলোমিটার সড়কের পাশে গাছ কেটে নিয়ে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, সাবেক চেয়ারম্যান নিজেও দুই বছর আগে পরিষদের মাঠের দুটি বড় মেহগনি গাছ কেটে নিয়েছেন।বিন্নাটি ইউপি ভূমি কর্মকর্তা হারুন রশিদ বলেন, ‘গাছগুলো সরকারি সম্পত্তি। গাছ কাটার সময় আপত্তি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।’সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে বলা হয়েছে। তার পরও গাছ কাটা বন্ধ হয়নি।

বিন্নাটি ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম গাছ কাটার সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘গাছগুলো আসলে সরকারি না ব্যক্তিগত তা ঠিক আমার জানা নাই। উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় এ বিষয়ে কথা হলেও গাছ কাটা বন্ধ হয়নি।’সাবেক চেয়ারম্যান লু ৎ ফুল বারী খোকন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি লিখিত অভিযোগ করেছি। গাছ রক্ষা করতে না পারা বর্তমান চেয়ারম্যানের চরম ব্যর্থতা। না হয় তিনি সুবিধা নিয়ে নীরব।’

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গাছ কাটা বন্ধ হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশকে তদন্ত করে গাছ কাটায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, গতকালও গাছ কাটা চলছিল।

কিশোরগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মোশাররফ হোসেন জানান, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ থানায় আসেনি। তাই এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারছি না।