গত বোরো মৌসুমে অকাল বন্যায় কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার হাওরপারের কৃষকদের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে এসব এলাকার অনেক কৃষকের মধ্যে ঈদুল আজহার আনন্দ নেই। ফসল হারানোর কারণে কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের নেই। অনেকের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে তাঁরা সন্তানদের মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিতে পারছেন না।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের আক্তার হোসেন জানান, গত বোরো মৌসুমে কাঞ্চনপুর হাওরে তিনি-চার একর জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু অকাল বন্যায় খেত তলিয়ে যাওয়ায় তিনি ঘরে ধান তুলতে পারেননি। এ কারণে এবার কোরবানি দেওয়া সম্ভব হবে না।

ইটনা উপজেলা সদরের ফজলু মিয়া জানান, গত বোরো মৌসুমে ধনপুর হাওরে তাঁর ছয় একর জমির ধান আগাম বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি বিপাকে পড়েছেন। এ কারণে এবার কোরবানি দেওয়া সম্ভব হবে না।নিকলী উপজেলার দামপাড়া গ্রামের কৃষক আবু আক্কাছ জানান, ধান হারিয়ে এ গ্রামের কয়েক শ পরিবারের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই। কারণ একমাত্র বোরো ধানের ওপর নির্ভরশীল হাওরের মানুষ। ধান নেই তাই তাঁদের ঈদও নেই।

ইটনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন জানান, হাওরের চারটি উপজেলায় যেসব পরিবার আগাম বন্যায় ধান হারিয়েছে, তাদের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই। তার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করছি।মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল আহসান শাহজাহান ও ইটনা উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম রতন জানান, গত বোরো মৌসুমে সারা হাওরে ৬০ ভাগ ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। তাই হাওরপারের অনেকেই কোরবানি দিতে পারছেন না।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ফসল হারানো নলুয়ার হাওরপারে অবস্থিত চিলাউড়া-হলদিপুর ইউনিয়নের কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই। নলুয়ার হাওরপারের ভুরাখালী গ্রামের কৃষক মাসুক মিয়া বলেন, ফসল হারিয়ে খেয়ে না-খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি। ঈদ কীভাবে করব, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই।

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ বলেন, ফসল হারানোর কারণে হাওরপারের লোকজনের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই।

প্রথম আলো