কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানার পুলিশ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা এক আসামিকে গতকাল শনিবার গ্রেপ্তার করেও ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রামের একটি বাজার থেকে প্রকাশ্যে আসামি ধরেও ছেড়ে দেওয়ার ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উপজেলার পাটুলি গ্রামের নৌযান শ্রমিক হাবিবুর রহমান হত্যা মামলার আসামি আনিস মিয়াকে গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় পাটুলি বাজারের একটি চায়ের স্টল থেকে থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশরাফ ও কনস্টেবল জিয়া গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। যথারীতি আসামিকে আদালতে সোপর্দ করার প্রয়োজনীয় (চালান) কাগজপত্র তৈরি করা হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় কনস্টেবল জুরান ও কনস্টেবল ফখরুদ্দিন আসামিকে হাতকড়া পরিয়ে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। অটোরিকশাটি কটিয়াদী উপজেলা সদরে পেঁৗছার পর তাঁদের আবার থানায় ফিরিয়ে আনা হয়। সূত্র জানায়, থানা থেকে অজ্ঞাতকারণে আনিসকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে থানার গেট থেকে মোটরসাইকেলে আনিস বাড়ি চলে যান।

এ ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে এএসআই আশরাফ জানান, ভুলবশত হত্যা মামলার আসামি হিসেবে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে এ ব্যক্তি হত্যা মামলার আসামি আনিস নয় জানতে পেরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। নিশ্চিত না হয়ে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিকে আদালতে চালান দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি নিজে এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারবেন না। আটক করা ব্যক্তিটি কে_এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি ওই ব্যক্তির নাম বা পরিচয় না বলে ডিউটি অফিসারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। থানার গতকালের ডিউটি অফিসার এএসআই সাখাওয়াত হোসেন জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।

জানা যায়, আনিসকে চালান দেওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে থেকেই বাজিতপুর থানার ওসি হাম্মাদ হোসেন থানায় উপস্থিত ছিলেন। ওসি হাম্মাদ হোসেনের কাছে হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন! স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র অভিযোগ করে, মোটা অঙ্কের টাকায় হত্যা মামলাটি আপস হয়। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশকেও ম্যানেজ করা হয়। কিছুদিন আগে বাজিতপুর থেকে বদলি হয়ে যাওয়া ওসি গোলাম রহমান নিজে আপসরফা করে যান। সমপ্রতি স্ট্যান্ড রিলিজ হওয়ার আগে ওসি গোলাম রহমান নতুন আসা ওসি হাম্মাদ হোসেনকে আপসরফা চূড়ান্ত করার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যান।

হত্যা মামলাটি মীমাংসার কথা স্বীকার করে নিহত হাবিবের মামা সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল হাই জানান, আনিসের নামে ওয়ারেন্ট থাকায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে উভয় পক্ষের লোকজন থানায় গিয়ে আনিসকে ছাড়িয়ে আনে। তবে তিনি এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২ মে নতুন পাটুলি বালুরমাঠ এলাকায় ধান ওড়ানো নিয়ে ঝগড়াকে উপলক্ষ করে প্রতিপক্ষের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় হাবিবুর রহমান (৩০) খুন হন। এ ঘটনায় হাবিবের ভাই রুহুল আমিন বাদী হয়ে ৪০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পাঁচজন আসামি বাদে অন্যরা আগেই জামিন পান। আনিস জামিন না পাওয়া আসামিদের একজন। গত বছরের ৩ মে কালের কণ্ঠে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মীর রেজাউল আলম গতকাল রাতে এ অভিযোগ সম্পর্কে জানান, হত্যা মামলা আপস করার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশও এজাহারভুক্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করে ছেড়ে দিতে পারে না। অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য, ‘বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নাসরুল আনোয়ার, হাওড়াঞ্জল থেকে