রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তাঁর নিজ উপজেলা ভৈরবকে জেলায় উন্নীত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করায় কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বাজিতপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। বাজিতপুর আলোছায়া মোড়ের সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি একটি দেশের সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার প্রতীক। তিনি কোনো একটি বিশেষ এলাকার প্রতি পক্ষপাত দেখাতে পারেন না। কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রপতি সে কাজটি করে নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। তাঁর এ ভূমিকা প্রত্যাশিত নয়।’

সমাবেশে বলা হয়_বাজিতপুরকে জেলা করার দাবি শতবর্ষের। এখানে জেলা করার সব রকম উপযোগিতা, অধিগ্রহণ করা জমি, নানা অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও অন্যত্র জেলার ঘোষণা দিয়ে সরকারের হাজার কোটি টাকা গচ্চা দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। জেলা বাস্তবায়নের ন্যায়সঙ্গত ও প্রাণের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাজিতপুরবাসী ঘরে ফিরবে না। ১ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বাস্তবায়ন কমিটি পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে সমাবেশে জানানো হয়। সমাবেশে বক্তৃতা দেন আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন মাস্টার, অ্যাডভোকেট শৈলেশ্বর দাস, বিএনপি নেতা অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ দাস, বাজিতপুর বাজার শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি সানোয়ার আলী শাহ সেলিম, জাতীয় পার্টির নেতা মো. দীন ইসলাম, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রফিকুল ইসলাম, জেলা বাস্তবায়ন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রকিব পারভেজ প্রমুখ।

বাজিতপুর জেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শেখ নূরুন্নবী বাদল বলেন, ‘বাজিতপুরবাসী শতবর্ষ ধরে জেলার দাবি করছে। একটি জেলার জন্য যেসব অবকাঠামো প্রয়োজন, বাজিতপুরে এর সবই রয়েছে। নতুন করে কোনো জেলা ঘোষণা করতে হলে দেশের ৬৫তম জেলা করতে হবে বাজিতপুরকেই। বাজিতপুরে কয়েক শ কোটি টাকা মূল্যের অধিগ্রহণ করা জমি থাকায় নতুন জেলার জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন নেই। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করলে বাজিতপুরই জেলার প্রকৃত দাবিদার।’

আন্দোলনকারীরা জানান, ১৮৬৯ সালে ময়মনসিংহের আগে বাজিতপুরে পৌরসভা স্থাপিত হয়। ব্রিটিশ সরকার ১৯১২ সালে তৎকালীন কিশোরগঞ্জ মহকুমাকে ভাগ করে বাজিতপুরকে পৃথক মহকুমা করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে লক্ষ্যে ওই বছরই বাজিতপুরে প্রায় ২০৬ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে প্রশাসনিক ভবনসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়। ১৮২৩ সালে ‘বাজিতপুর’ ও ‘হয়বতনগর’ নামে দুটি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে হয়বতনগরকে কিশোরগঞ্জ ও বাজিতপুরকে ভেঙে কয়েকটি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয়।

জানা যায়, বাজিতপুরকে মহকুমা করতে ১৯২২ সালে ব্রিটিশ সরকার লেভিঞ্জ কমিশন, ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সরকার তিন সদস্যের হাসান বাউন্ডারি কমিশন ও ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সরকার অবিভক্ত ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক রাফিউল করিমের নেতৃত্বে তিনটি পৃথক কমিশন গঠন করে। তিন কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদনেই এ অঞ্চলের মধ্যবর্তী থানা বাজিতপুরে মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়। প্রায় ১৫০ বছর আগে থেকে বাজিতপুরে ভৈরবসহ পাঁচ থানার সহকারী জজ (দেওয়ানি) আদালত কার্যকর রয়েছে। ভৈরব, কুলিয়ারচর ও বাজিতপুরের পুলিশ সার্কেল (এএসপি) কার্যালয়ও বাজিতপুরেই।

ভৈরবকে নতুন জেলা করার সরকারি ঘোষণার পর গত বছর কয়েক মাস নানামুখী আন্দোলন করে কিশোরগঞ্জ জেলাবাসী। জেলা সদরবাসী জেলার ‘অখণ্ডতা’ রক্ষা, কটিয়াদী ও নিকলীবাসী ‘ভৈরবে না গিয়ে কিশোরগঞ্জের সঙ্গে’ থাকা এবং বাজিতপুর এলাকাবাসী স্বতন্ত্র জেলার দাবিতে কাফন মিছিল, রাজপথ, রেলপথ, নৌপথ অবরোধ, হরতাল, অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। অন্যদিকে ভৈরববাসী আনন্দ-উল্লাস করে।

প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২৪ অক্টোবর ভৈরবে এক সুধী সমাবেশে বলেন, ‘ভৈরবকে জেলা করার প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে এবং বাস্তবায়ন হওয়ার বিষয়টি সরকারের প্রক্রিয়াধীন আছে।’ তিনি আরো ঘোষণা করেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ভৈরবকে জেলায় উন্নীত করা হবে। এরপরই জেলাজুড়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

লিখেছেনঃ নাসরুল আনোয়ার