pro_অনিক বাসাতে নেই জানতাম; তবুও অনিচ্ছা সত্ত্বেও সন্ধ্যার সময় বাসায় ফিরলাম। সে ছাড়া রুমটা কেমন যেন খালি খালি মনে হয়। সিঙ্গেল একটি বাসাতে আমরা দুজন থাকি। অনিক আর আমি। সে আমার কলেজ জীবনের বন্ধু। এখন অবশ্য দুজনেই চাকরি করছি; ও সিটি কর্পোরেশনে, আমি ব্যাংকে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়াই। ওমা, ভেতর থেকে তো লাগানো! অনিক তো আসার কথা নয়, তাহলে ভিতরে কে হতে পারে? এক রকমের অজ্ঞাত ভীতি মনের মধ্যে দানা বাঁধতে থাকে। আমি অনিককে ফোন দেই, কিন্তু কোন রেসপন্স মিলে না। বাতাসের প্রাবল্যে মেঘ যেমন ক্রমে ঘন থেকে ঘনতর হয় ঠিক তেমনি এ মুহূর্তে সন্দেহের দানাও ঘন থেকে ঘনতর হয়ে ওঠছে।

কম্পিত হাতে দরজায় নক করি। এক দুই তিন… অনেকবার। মিনিট পাঁচেক পরে দরজা খুলল। আমি ভিতরে প্রবেশ করি। কারও কোন শব্দ নেই। আশ্চর্য কে দরজা খুলে দিল! ক্ষণপরে ভাবলাম কাজের বুয়া হবে হয়ত! রান্না ঘরে কিংবা অনিকের রুমেও তাকানোর সাহস পাচ্ছি না। ভীরু ভীরু মনে নিজের রুমে প্রবেশ করি। মিনিট দুয়েক পরে এক যুবতি অনুমতি ছাড়াই আমার রুমে প্রবেশ করে। বয়স আঠার কি বিশ হবে ঠিক বুঝা গেল না। শরীরের গড়ন বেশ সুন্দর। চোখের ভ্রুযুগলে খুব যত্ন করে কাজ করা। ঠোঁট জুড়ে লিপলাইনারের শৈল্পিক কাজ। পাখি ড্রেসের মতো কী একটা ড্রেসে মেয়েটিকে বেশ লাগছে। আমি খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকাই।

এমন সময় পাশের রুম থেকে ধীর পায়ে অনিক বের হয়ে আমার দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। একগাল হেসে আমাকে বলল- আজখের রাইতের লাগি তাইরে আনছি। এরপর সে আমাকে চোখটিপ দিয়ে বের হয়ে গেল। ওর চোখের ভাষা বুঝাতে আমার মোটেও কষ্ট হল না।

মেয়েটি তার জামা খুলছে। লাইটের আলোতে তার ধবধবে শরীর আরও ধবধবে হয়ে ওঠছে। মনে হল স্বর্গ থেকে যেন কোন হুর নামলো। সহসাই আমি আর তার দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছি না। আমার শরীরে মৃদু কম্পন দেখা দিল। হৃদপিণ্ডের গতি তখন অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে গেল। আমি তার দিক থেকে মুখ ফিরাই।

মেয়েটি আমার কাছে আসে। ফিসফিসিয়ে বলে- ”আমার শরীর ব্যবহার কর।” আমি ঠিক ঐ মুহূর্তে আসলেই কী বেঁচে আছি নাকি স্বপ্ন দেখছি ঠিক বুজতে পারলাম না। নিজেই নিজের শরীরে চিমটি কাটি। মনে হল বিষয়টা মিথ্যে নয়, কিংবা স্বপ্ন নয়। মেয়েটির ঐরূপ কথা শুনে আমার কান গরম হয়ে ওঠে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। শীতের প্রাদুর্ভাব ছাড়াই পা দুটি ঠকঠক করে কাঁপছে। মেয়েটি আমার সম্পর্কে কী বুঝলো তা সঠিক বলতে পারি না। তবে সহসাই সে আমাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। আমি একটু পিছনে সরে আসি। সে আমাকে ধরেই ফেলে। আবারও অস্ফুট স্বরে বলে- ওরে আমার লজ্জাবতি বানর, আমাকে ইউজ করলে কী হয়? হঠাৎ আমি ইস্পাতের মতো শক্ত হয়ে ওঠি। ভরাট গলায় বলি- সম্ভব নয়।
-কেন?
– আমি নীতি বহির্ভূত কাজ করি না।
– অনেকেই তো করে
– আমি করি না
– করোই না… এই তো তোমারে পাইছি।

সে এক ঝটিকায় আমার শিশ্ন ধরে ফেলে। আমি ছায়ামূর্তির মতো দাঁড়াই। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি তখন লালনের মতো দার্শনিক আর সাধু হয়ে ওঠি। ‌উদাসী স্বরে বলি- শরীরের নিয়মে শরীর জাগে, কিন্তু মন না জাগলে !!! মেয়েটি হঠাৎ কেঁদে ফেলে। কারণ জিজ্ঞেস করতেই সে বলে- আপনি আমাকে ব্যবহার না করলে তো আজকে টাকা পাবো না। মায়ের জন্য ওষুধও নেয়া হবে না, নিজের ফ্রমফিলাপের টাকাও জোগাড় হবে না। ওর মায়ের কথা শুনে মনের মধ্যে যতটুকু না রেখাপাত করলো তার চেয়ে বেশি রেখাপাত করলো ফ্রমফিলাপের কথা শুনে। বমি দেখলে যেমন বমি পায় তেমনি কান্না দেখলেও মানুষের কান্না পায়। আমি তাকে বলি- জামা পড়ো। সে চোখ মুছতে মুছতে জামা পড়ে। একটু ম্লান হেসে বললাম- কত লাগবে?
– তিন হাজার।

আমি মানিব্যাগের দিকে তাকাই। হাজার পাঁচেক রাখা ছিল। তিন হাজার টাকা দিয়ে বললাম- রাখেন। সে বিস্ময়ে আমার দিকে তাকায়। আমি বললাম- যারা দেহ ব্যবসা করে তাদের আমি ঘৃণা করি না এটা ঠিক, তবে এদের কেবল আমি সাপোর্টই করতে পারি না। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আরও অনেক মহৎ পেশাই তো রয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি আসলে পৃথিবী থেমে থাকে? কোন বিপদই স্থায়ী নয়। … হতাশার কিছু নেই। ভালো থাকবেন।

সে বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে অনেক কথাই শুনলো। তারপর ক্ষীণস্বরে বললো- সত্যিই আপনি মহাপুরুষ! পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। তার বিস্মিত দুফোটা চোখের জল আমার পায়ের ওপর পড়ে। মুহূর্তেই বিদ্যুৎগতিতে শরীর শিহরিত হয়; অবলীলায় হৃদয় দগ্ধ হতে থাকে। চলে যাওয়ার আগে কেবল মাথা নিচু করে বলল- মহাপুরুষও যেন ভালো থাকে।

২০.০২.২০১৫
মুনশি আলিম,  জাফলং, সিলেট
সার্বিক যোগাযোগ: ০১৭৪১৪৩৬৮৫১