অ্যানথুরিয়াম, অসাধারণ আকৃতি আর রঙের বাহারি পাতা ও ফুলের গাছ। বহুবর্ষজীবী কাণ্ডহীন এ গাছের ফুল দেখতে অনেকটা মানব হৃৎপিণ্ড বা হৃদয়ের মতো। এটি রাজহংস ফুল (ফ্লামিংগো ফ্লাওয়ার) বা বালক ফুল (বয় ফ্লাওয়ার) নামেও পরিচিত। দেশে খুব বেশি পরিচিত না হলেও ভিনদেশি এ ফুল চাষের জন্য আমাদের দেশের আবহাওয়া পুরোপুরি উপযোগী। দেশীয় ফুল গবেষকরা ইতোমধ্যে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের আবহাওয়া সহনশীল এই ফুলের জাতও উদ্ভাবন করেছেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, দেশে বাণিজ্যিকভাবে এই ফুল চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।

অ্যানথুরিয়াম অ্যারেসি পরিবারভূক্ত সবচে’ জটিল প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। এটি প্রধানত: মধ্য আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার আর্দ্র-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় পর্বতের গাছ হলেও অর্ধশুষ্ক পরিবেশেও এটি জন্মায়। অ্যানথুরিয়ামের বেশিরভাগ প্রজাতি পানামা, কলোম্বিয়া, ব্রাজিল, গায়ানা ও ইকুয়েডরে দেখা যায়। অ্যানথুরিয়ামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হচ্ছে পাতার পরিবর্তিত অংশ, যা স্প্যাথ নামে পরিচিত। গাঢ় লাল রঙের স্প্যাথ ও হলুদ রঙের মঞ্জরি এর অন্যতম বৈশিষ্ট। গাঢ় সবুজ রঙের হৃদয়াকৃতির পাতায় স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয় এর শিরাগুলো। চারা রোপনের পর ফুল আসতে কমপক্ষে ৯-১০ মাস সময় লাগে।

বছরে একটি অ্যানথুরিয়ামের ঝাড় থেকে ৫-৬টি ফুল পাওয়া যায়। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩ লাখ পুষ্পদণ্ড পাওয়া যায়। কমপক্ষে ২০ দিন অ্যানথুরিয়াম তার মোহনীয় রূপ ধরে রাখতে সক্ষম।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) ফুল বিজ্ঞানীরা দেশের আবহাওয়া সহনশীল ‘অ্যানথুরিয়াম-১’ জাত উদ্ভাবন করেছেন। বারি’র উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফুল বিভাগের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কবিতা আনজু-মান-আরা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, দেশে অ্যানথুরিয়াম ফুল চাষের বিস্তারিত।চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, উষ্ণ ও আর্দ্র-উভয় আবহাওয়াতেই অ্যানথুরিয়াম চাষ উপযোগী। তবে ছায়াযুক্ত স্থানে এটি ভাল জন্মায়। চারা বা সাকার লাগানোর জন্য নারকেলের ছোবড়া, নারকেল ছোবড়ার গুড়া, কাঠের গুড়া কিংবা ধানের তুষ স্তরে স্তরে বিছিয়ে প্রস্তুত করতে হবে।

তিনি আরো জানান, সাধারণত মাতৃ গাছ থেকে অ্যানথুরিয়ামের সাকার পৃথক করে বংশ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে সম্প্রতি মাতৃগাছ থেকে সংগৃহীত সাকারের মাধ্যমে বংশ বিস্তার প্রক্রিয়ার গতি মন্থর হওয়ায় টিস্যুকালচার প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। সারা বছর অ্যানথুরিয়ামের চারা লাগানো যায়, তবে জুলাই-আগস্ট মাস এর জন্য উত্তম সময়। কক্ষ তাপমাত্রায় বেশি দিন সতেজতা ধরে রাথতে অ্যানথুরিয়াম ফুল বিখ্যাত। ফুলের স্প্যাথের পুরুত্ব ও পুষ্পদণ্ডের দৃঢ়তা এর প্রধান কারণ। বাণিজ্যিকভাবে অ্যানথুরিয়াম ফুল চাষ করলে প্রচুর বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কবিতা আনজু-মান-আরা।

সুত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪