ফুল দেখতে বিস্ময়কর বটে। পাখিফুলগাছের সবুজ পাতার ওপর গোলাকার লাল ফুল আমাদের জাতীয় পতাকার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আর ফুলটি স্বাধীনতার মাস মার্চেই প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলে, যেন লাল-সবুজের বাংলাদেশ! গুচ্ছে গুচ্ছে সারা গাছে ফোটে। একে স্কারলেট ফ্লেম, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান মাউন্টেন রোজ অথবা ব্রাউনিয়া বলে অনেকে। বাংলায় কেউ কেউ ডাকে পাখিফুল, আবার কেউ কেউ ডাকে সুপ্তি নামে। আবার কারও কারও কাছে এ হচ্ছে পারিজাত। তবে আদি বাড়ি ভেনেজুয়েলায় বলে এর প্রচলিত নাম রোজ অব ভেনেজুয়েলা।

জ্যামাইকার ইতিহাস লেখক প্যাট্রিক ব্রাউনের নামানুসারে এর নামকরণ ব্রাউনিয়া ককেসিনিয়া, পরিবার caesalpiaceae.

মাঝারি ধরনের গাছ। যতটুকু বাড়ে তাও খুব ধীরে। ব্রাউনিয়া বা পাখিফুল সৌন্দর্যে যেমন অসাধারণ, তেমনই সুন্দর এর পাতা। গাছে ফুল আসার আগে এর পাতা গোলাপি ও সবুজে মিলে একে অসাধারণত্ব পায়। নতুন পাতা দেখতে আমহার্স্টিয়া নবিলিস বা রাজ অশোক পাতার মতো। গাছে ফুল ধরলে আর চোখ ফেরানো যায় না। দুঃখ হলো—রাতে ফোটে, দিনে ঝরে পড়ে। ফুল শেষ হলে গাছটি কেমন মলিন রূপ ধারণ করে। সময়টাকে ফুল হারানোর বেদনায় গাছের শোক বলেও অভিহিত করা যেতে পারে!

নিসর্গী বিপ্রদাস বড়ুয়া ব্রাউনিয়া ককেসিনিয়ার পাখিফুল নামকরণ প্রসঙ্গে বলেছেন—পাখিফুলের এক থোকা পাতা ছোট নরম ডাল থেকে চমৎকার ঝুলে থাকে, যেন ঝুলে থাকা পাখির লেজ। তারপর দ্রুত রং পাল্টে যায় এবং পরে সোজা হয়ে মসৃণ সবুজ পাতার রূপ নেয়। তাই এর নাম পাখিফুল। উত্তরা গণভবন ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ ছাড়াও পাখিফুল দেখতে হলে বসন্তে কার্জন হলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভিদ উদ্যান বাগান, রমনা পার্কের রমনা নার্সারি, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ও বলধা গার্ডেনে চোখ রাখতে পারেন। শিশু একাডেমীর বাগান মধুর ক্যানটিনের সামনে। ধানমন্ডি ও গুলশান এলাকায়ও কিছু পাখিফুল হয়। আর আছে চট্টগ্রামের বৌদ্ধবিহারগুলোতে। বৌদ্ধদের কাছে পাখিফুল খুবই প্রিয়। লিখেছেনঃ ফারুখ আহমেদ