টেনু যখন দোকানটা বন্ধ করছে, একটা ট্রেন হুইসেল দিয়ে চলে যায়, রাতের কত প্রহর সে আন্দাজ করে নেয় হুইসেলের শব্দে, দমকা হাওয়াটা তার গালে লাগে, তেল চিটচিটে মাফলার কান বরাবর প্যাঁচানো, তাই এটি একপাশ থেকে বাতাস প্রতিরোধ করে, দু’চারটে করই-এর পাতা ঝরে পড়ে, ট্রেনটা উজ্জ্বল সমান্তরাল আলোর ছুরি হেনে অতঃপর মিলিয়ে যায় অন্ধকারেই। টেনু সারের কাগজটার প্রকৃত নাম জানে না, তবে এরা তা-ই বলে, এরই পরিষ্কার এক টুকরোতে এক হালি শিঙ্গাড়া প্যাঁচানো, বেঁচে যাওয়া, কারো উদরে চালান হতে পারেনি। ফেলে দেয়ার চেয়ে বরাবরের মতো বাড়ি নিয়ে নেয়া ভালো। তবে আজকাল আর বাসি শিঙ্গাড়া পরিবারের কেউ খেতে চায় না। টেনু তবুও নেয়।

পরদিন একই ট্রেন আসার আগে আগে টেনু আড়মোড়া ভাঙ্গে। আজ বেঁচে যাওয়া শিঙ্গাড়ার সংখ্যা দ্বিগুণ। কী করবে সে? জরি বলেছিল- বাবা বাসি শিঙ্গাড়া আমি একদিনও খাই না, এই কাওয়াডারে খাওয়াই।
কাওয়ারে? অন্য কিছুরে খাওয়াইতে পারস্ না?
এইডা যে আমি পালি। খাওন না পাইলেই খালি কা কা করে।
মজার ত। তর মা-ভাইয়ে কী করে?
এরা খায়, কুনু সময় দেয়ও।
কথা সব ভাবতেই পাঁচ-ছ’জন হুড়মুড় করে দোকানে ঢুকে পড়ে। ওরা ভয়তাড়িত নয়, সময়তাড়িত। তাড়াতাড়ি ঢুকবার কসরৎ ছিল, তা’ পারলও। শেষজনের অনুপ্রবেশ সম্পন্ন হলেই সে দরজাটির খিল এঁটে দেয়। টেনু দেখল একজন মেয়ে মানুষও, বোরখা পরা, মুখ খোলা। মেয়েটির খোলা মুখমণ্ডল কেরোসিনের আলোর চেয়ে উজ্জ্বল, বিদ্যুতের আলো এখানে বিজলি চমকের মতো, তাতে এ দলটির কিছু যায় আসে না। একজন একটা ছোরার ধার পরীক্ষা করতে তাতে বাঁ’ হাতের বৃদ্ধার পেট ঘষে। সে একটা ইঙ্গিত দেয়, কোনো কথা না বলেই- তারা যেনতেন নয়। টেনু ভয় পেলেও জানান দেয় না। অনেকেই তার চেনা যে। আকরাম ভাই, আপনে পিছে যান- ছোট মাস্তানের পথ-নির্দেশনায় আকরাম ময়লাযুক্ত পর্দাটা ফাঁক করে খাটের ওপর টর্চ মারে। কী ময়লারে বাপ, ট্যানাম তর এইহানে খাট আছে, বিছ্না কই, খালি না একটা চাডি দেহি, রাইতে থাহস্ না?
মাইঝে মাইঝে- এনামের ভাই ট্যানাম যাকে সব লোকে কয় ‘টেনু’, এ রকম সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়।
চাডির ওপরে ঘুমাস্ নাহি, ব্যাডা উজবুক কুনহানের।
একটা খ্যাতা আছে, রাজাই-বালিশ কিছু নাই।
অত কতার কাম কী, আপনে বিলকিসরে লইয়া এহানেই বইন। মেজো মাস্তানের কথা শেষ হতে সেজো বলে, কিরে খাওয়ার থাকলে কিছু দে, রাইত বাজে দেড়টা-দুইডা, ভুক লাগে না?
ঠাণ্ডা শিঙ্গাড়া আছে।
তা-ই দে, সঙ্গে চা।

স্টেশনে ট্রেন ঢুকলে কিছুটা দূরবর্তী হলেও ঘরের ফাঁক-ফোঁকড় চুইয়ে আধো-আলো অন্ধকার ঘরটি অধিকতর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। বিলকিসের অস্ফুট স্বরের খিল্খিল্ হাসিতে মনে হল এটি আরও স্ফুট হলে ঘরের বেড়া-ছাদ চড়্চড়্ করে বেজে উঠবে।

ওস্তাদ বুইঝা-শুইনা… কেউ একজন এ কথা বলে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।

টেনু, যে শিঙ্গাড়া খাওয়াইলি, পেট খারাপ না অইলেই অয়।
‘ঠাণ্ডা ঠিক, নষ্ট না।’ টেনুর জবাব এরকমই সংক্ষিপ্ত।
স্টেশনে মনে হচ্ছে শেষমুহূর্তের হুড়াহুড়ি লেগে গেছে, কুলিরা জোরে চিৎকার করছে, চা-বিড়ি-চানাচুরওয়ালারা সুর করে কথা বলছে, অমনি ট্রেনটি হুইসেল হেঁকে দেয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিলকিসের হাসি উচ্চগ্রামে চড়ে, সে চালাক- প্রাণ খুলে হাসে অন্যকে বুঝতে না দিয়ে, হুইসেলটা বেজেই চলেছে, ওখানে তার হাসি চাপা পড়ে। বিলকিস গ্রামীণ মেয়ে, বখে যাওয়াদের কথা শুনে শুনে বড় হয়েছে, মোবাইলটা লুকিয়ে রাখে বুকের ভাঁজে, ওখান থেকে বের করে খুপরির ভেতর সাইলেন্ট কল রিসিভ করে, কখনও কেটেও দেয়। জীবনে কত শুনতে হয়েছে বখাটে বচন : ইলেভেন নাইন নাইন্টিন স্কয়ার, তবে দূরসম্পর্কের মামাতো ভাইয়ের মুখে তার নামের ব্যাখ্যা ‘বিল আফটার কিস্’ বুঝতে তার অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল, সেই বিলকিস অনেক দেরিতেই আকরামের ফাঁদে পা দেয়, যেহেতু সে পোড় খাওয়া তাই ভাবে গুয়ের কানিত্ পারা দিয়ে লাভ নাই…। কিন্তু ট্যানাম ওরফে টেনু এ সবের কিছুই জানে না, কেবল জানল শিঙ্গাড়া সব এরা আসায় তুলেমূলে বিক্রি হয়ে গেছে। ভেতর থেকে আকরাম হাঁক ছাড়ে, কিরে আমরারে চা দিলি না?

আর কিছু নাই কিন্তুক-
ঠিক আছে, খালি চা।
এই, আমারে বেশি কইরে চিনি দিস্- বিলকিসও একপ্রকার হাঁক ছেড়েই বলে।
টেনু দু’হাতে দুই কাপ নিয়ে ঢোকে। দেখল বাঁশের পালায় ঠ্যাশ দিয়ে খাটে পা’ বিছিয়ে বসে বিলকিস চুল ঠিক করছে, খোপাটা আচ্ছা করে বাঁধছে, তার বুকের ভেতর জোনাকির মতো আলো জ্বলছে-নিভছে, টেনু দেখল মুঠোফোন কীভাবে বক্ষফোন হয়ে গেল, তবে সে রিসিভ করছে না। পাশেই আকরাম কনুইয়ে ভর দিয়ে হাতের তালুতে মাথা রেখে কাত হয়ে আলাপ করছে, ঠ্যাকা দেয়া হাতেই জ্বলন্ত সিগারেট, ছাই ঝরে পড়ছে। তার অন্য হাত বিলকিসের এক পায়ের পাতায়। তার মানে ভঙ্গিটা উল্টাপাল্টা সিক্সটি নাইন। টেনু চা দিয়ে ফিরে এলে বিপরীত দিক থেকে একটা মালগাড়ি আসে। সে কাস্টমারদের বলে, গুস ট্রেন। ওরা যেন ভাবল আর কি প্যাসেঞ্জার ট্রেন নেই এ রাতে? রাত কি সব লেনদেন চুকিয়ে একটু পরই দিনের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে? সত্যি সত্যি খুপরি থেকেও দু’জন বের হয়ে এল, আকরাম বলে, কোরাল পক্ষি ডাক ছাড়ে- রাইতের কারবার সারা, আজগা যাই- কালহা ফিরেবার আইতে অইবো। বিলকিস বের হতে হতে বোরখাটা গায়ে চাপিয়ে ওড়নাটা গলায় প্যাঁচায়।

পরদিন টেনু না আসলেও পারে- দুই দিন, এমনকি তিন দিনের কাজ একরাতেই সেরে ফেলেছে। ওদের একজন কেশিয়ার আছে বোঝা গেল। ‘কেশিয়ার সাব’ যাওয়ার বেলায় টেনুর হাতে অতিরিক্ত টাকা গুঁজে দিয়েছিল। তাই পরদিন না গেলে চললেও সে যায় পৈত্রিকসূত্রের প্রতি সম্মান দেখাতে, দীর্ঘদিনের অভ্যাস, এক বেলা ভাত না খেলে যেমন চলে না, তাই সারা দিন দোকানদারী করলেই কী, রাত না দিলে তার চলে না। তা’ছাড়া আকরাম ভাই, যাকে এলাকাবাসী বলে ‘আকরাম শ্যাঠ’ তিনি পাকা কথা দিয়ে গিয়েছেন আজ আসবেন, দোকান না খোলা পেলে কী বিপদ হতে পারে সে তো জানাই আছে… বিলকিস বানুর কথাও জেনে গেছে টেনু, কী ভেল্কিবাজীই না দেখিয়ে গেল অত রাইতে, অন্তত একটা আকর্ষণ তো জাগাতে পারল। বিলকিস নামের ন্যাড়া একবারই বেলতলায় গিয়েছিল, বনিবনা হয়নি- অবশেষে চলে আসে এক মাস পরই। জীবনটা আপাতত এভাবেই সে কাটাচ্ছে। টেনুর চৈতন্যে ধীরে ভর করে বিলকিস। তবে আজ যে এভাবে সুবাস ছড়িয়ে প্রবেশ করবে, তা’ টেনু জানত না, কী এক গন্ধ নাকে সুঁই মারার মতো বিঁধছে, গন্ধটা মুহূর্তেই টেনুকে উন্মাতাল করে দেয়।

আজ ঢুকেই তারা চা খেয়ে সটকে পড়তে চায়, কীসের একটা তাড়াহুড়া, একজন পেছনে উঁকি দিয়ে দেখল বিছানার মতো কিছু একটা পাতা আছে, উপরে চল্লিশ পাওয়ারের একট বাল্ব মরা আলো বিতরণ করছে, অন্যজন বলে- লাইটের দরহার কি, বাত্তি নিভা!

ঘরে একটাই সুইস- টেনুর জবাব আজও সংক্ষিপ্ত।
ঠিক আছে পরে নিভাইয়া দিস্, কুপি বাত্তিতেই তর দুকানদারি জমে ভালা। আরে চোক্ষে লাগে ত।
ওরা শেষ কথা বলে সটকে পড়ে, যেতে যেতে বলে- ওস্তাদ ডিস্টার্ব অইলে মিস কল দিয়েন, আমরা স’ মিলের পিছে।
রাতের প্রথম ট্রেনটা আজ বিলম্বে ঢুকল। একজন দরজা বন্ধ পেয়ে টোকা দেয় : টেনু, টেনু… এই টেইন্নে।

কি চাও?
এক মুডা বিড়ি দে।
নাই।
আইচ্ছে দে এক-দুইডা যা-ই থাহে…
একটাও নাই
কী? দরজা খুল্।
আজগা মাফ কর ভাই।
লোকটা চলে যায়।
বিলকিস ইতিমধ্যেই ময়লাযুক্ত তেলঝোলের দাগমিশ্রিত পর্দাটা ফাঁক করে পেছনে চলে যায়। আকরাম বলে, তর দুই জায়গায় দুইডা বাল্ব একটা ম্যাচের কাডির চাইতেও কম আলো দেয়, সাদা বাত্তি লাগা ব্যাডা, এহন আর এইগুলা চলে? টেনু কুপিটা জ্বালিয়ে সুইচে হাত দেয়, দুটো বাতি একসঙ্গে নিভে যায়। আকরাম পেছনে ঢুকলে গতকালের চিকন হাসি আজ ফিস্ফিসানিতে গড়ায়। ফিস্ফিসানির সঙ্গে মিশ্রিত হয় এক অদ্ভুত শব্দ। কিছু একটা ঘটছে বোধ হল। নাকি ইঁদুরের দৌড়াদৌড়ি? কুপিটা ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসছে, জ্বালানি দেয়া দরকার, সে ইতিউতি করে খোঁজে কেরোসিনের ডিব্বা, না পেয়ে পর্দার ফাঁক বরাবর টর্চ মারে। এই, বাত্তি মারস ক্যারে? আকরামের হুংকারের সঙ্গে তিন সেকেন্ডের চকিতদৃশ্যও মিলিয়ে যায়। টেনু যেন শেষ রাতের স্বপ্নে পেল মর্দাটার শিয়রে চকচকে ছোরা যাতে আলো পড়ে টেনুর চোখ ধাঁধিয়ে যায়, বোরখাটা একপাশে পড়ে আছে কুণ্ডলি পাকিয়ে, কোনো এক হুরপরীর ভাঁজ করা দু’টো পা মর্মর পাথরের মতো দৃশ্যমান হয়ে ধুয়াশায় মিলিয়ে গেল। দু’দিক থেকে দুটি ট্রেনের হুইসেল শুনে টেনু বোঝে এইবার ক্রসিং। ট্রেন দুটো রাতের কুয়াশা কেটে বন-জঙ্গল মাড়িয়ে প্রান্তরের হু হু বাতাস বুকে ভরে সিটি দিয়ে চলে যায় দু’দিকে… বিলীয়মান শব্দলহরীর সমাপ্তি টানে একটি শীৎকারধ্বনি… টেনু টুলের ওপর বসে দু’পায়ের মাঝখানে দু’হাত গুঁজে দিয়ে ফজিলার কথা ভাবে। অতঃপর দাঁড়িয়ে যায়। সে যে কর্মহীন হয়ে পড়ল। মুখে রা নেই, হাতের আঙ্গুল দিয়ে চায়ের কাপে চামচ পিটানো নেই, নেই এমনকি বিড়ি টানা, ভয় পেয়ে একটা কাশি দেয়াও নেই… নীরবতা ভাঙতেই হঠাৎ বলে ওঠে, আকরাম ভাই শিঙ্গাড়া কয়ডা লাগব?
র্ধু শালার পুত!
পরের এক রাতে টেনুর হিসাবে মহাগণ্ডগোল। মাস্তানকুল না আসায় অনেক খাবার বেঁচে যায়, আজ সে একটু বেশিই বানিয়েছিল। মাঝখানে টান পড়ায় একদিন ধমকও খায়। টেনু নিজেকে তাই পাকা কারবারী ভাবতে পারছে না। রাতের শেষ প্রহরে কুলি আর রিকশাওয়ালাদের সে ডেকে ডেকে শিঙ্গাড়া দেয়। কিন্তু এভাবে সেধে এনে খাওয়ানোটা তার কাছে বেমানান ঠেকে। ওরা কি কইন্যা জরির পালিত কাক তা’হলে? টেনুর অস্বস্তিটা কাটিয়ে দেয় রমজান কুলি। সে বলে, আরে র্ধ দুই টেহা অইলেও নে, পিরথিমীতে মাগনা কুনু জিনিস আছে?

আকরাম গংরা মাঝে মধ্যে বিরতি দিলেও তাদের আগমন অব্যাহত থাকে। আজ একটা উৎকট গন্ধে ঘরটা ভরে যায়। একজন বলে, ওস্তাদ কুন দিক দে লইয়া আইছেন? রাস্তা ঠিক আছে, যা’ জুতাডা পাগারে নিয়া চুবাইয়া রাখ্। যার চোখে চোখ রেখে আকরাম কথাটি বলে সে বিষ্ঠাক্রান্ত প্লাস্টিকের জুতাটা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। কিন্তু গন্ধটা দূর হল না, হয় তো মেঝেতে লেগে আছে। ক্রমে সরারচরের পরিপার্শ্বে আবার নিশি লাগে, স্টেশনে ঘণ্টা পড়লে টেনু অস্ফুট স্বরে বলে, মানিকখালিত থে ছাড়ছে। ছোট্ট এ ঘরটিতেও তখন নিশি লেগেছে, খানিক পরপর অস্ফুট শব্দ নিশিবিহঙ্গ কোরাঈগল আর কুকপক্ষির ডাকের যুগলবন্দির মতো মানিয়ে যাচ্ছে। এখন টেনু অকারণেই ক্ষুধার্ত, তাই গবাগব দু’তিনটে শিঙ্গাড়া খেয়ে নেয়, আকরামের সাগরেদরা কিছু খেয়ে গেলেও অবশিষ্ট থেকেই যায়। খাবার নষ্ট করা কি পাপ? নানামুখী চিন্তা তার মাথায় জট পাকিয়ে যায়। রাতের বাতাসে শৃঙ্গারশিল্পের অডিওটা বেজে বেজে তার উত্তেজনার সুতাটা টান টান করে ফেলে। বুকের ধুকপুকানি বাড়ে, গলায় খাবার আটকে যায়। দুই ঢোক পানি খেতেই তা’ নিচে নেমে আসে।

ভালোই চলছিল টেনুর ক্ষুদে কারবার, কিন্তু ওর ভাগ্যের চাকাটা হঠাৎ কাদায় আটকা পড়ল। আকরাম ভাই একটা কেস খায়, ভাগলপুর কোল্ডস্টোরেজের কাছে খুন হওয়ার পরদিন থেকেই সন্ত্রাসীরা গা-ঢাকা দেয়। স্টেশনের আশপাশেও থমথমে অবস্থা, বেশি রাতে অযথাই লোকজনের ঘোরাফেরা বন্ধ হয়েছে। এ দুঃসময়েই একজন ট্রেন থেকে মেয়ে মানুষ নিয়ে নামে। টেনু আশ্রয় দিতে চায় না, কিন্তু সে মাস্তানেরও মাস্তান, তাই বেশিকিছু বলতে হয় না, টেনুর ভাঙ্গা ড্রয়ারটা খুলে কিছু একটা তাতে ছুঁড়ে মারে। আজ তা’হলে বেঁচে যাওয়া খাবারগুলো পগারে ফেলে দিলেও ক্ষতিবৃদ্ধি নাই। মেয়েটি আঁচ করতে পারলে মুখটা ভয়ে নীল হয়ে আসে। সে স্পঞ্জের স্যান্ডেলটা খুলে বেঞ্চটার ওপর পা তুলে বসে। টেনু দেখে স্যান্ডেলের ওপর ময়লা পায়ের ছাপ, গোড়ালির দিকে কিঞ্চিৎ ক্ষয়ে এসেছে, পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির নিচে ময়লা দৃশ্যমান, শাড়িটা উপরে উঠে আসায় লেস দেয়া পেটিকোট ঝুলে আছে, প্রিন্টের লাল ব্লাউজে তাকে অদ্ভুত মানিয়েছে। সে চা শেষ হওয়ার আগেই সিগারেট জ্বালায়, একটার পর একটা ধুয়ার কুণ্ডলি টেনুর মুখটা ঢেকে ফেলে। অতঃপর মেয়েটি বলল, চলেন তো মিয়াভাই যাই এইবার… অনেক রাইত অইছে… হয় তো পুলিশের পেট্রোল আছে।

পরের রাতে আর কেউ আসে না। একজন বাইরে থেকেই জিজ্ঞেস করে- কিরে টেনু, খবর কী?
খুব খারাপ।
ক্যারে, রাইতে দুকান ভাড়া দিয়া তো ভালাই পেট চালাস্।
‘না জাইন্যে কতা কইও না।’
টেনু প্রতিবাদ করায় লোকটি চলে যায়।
দূরে কোথাও ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ায় আজ কোনো দিক থেকেই ট্রেন আসছে না। টেনু বড় একা। একটার পর একটা শিঙ্গাড়া খেয়ে সে হাঁফিয়ে উঠেছে। অতঃপর খাটের ওপর শুয়ে সে হারিয়ে যাওয়া যুগলদের অনুভব করে।
সকালে লোকজন ডাকাডাকি করে, এই টেনু… টেনু! ওরা বলে, সকাল ৮টায় কুনু দিন দরজা লাগানো দেহি নাই- হয় তালা, না অয় খোলা। একটু পরেই লাইন মেরামত হওয়ায় ট্রেন আবার চলতে শুরু করেছে। স্টেশনে ট্রেন ছাড়বার ঘণ্টাটি এই মাত্র পড়ল, লোকজনও ডাকছে টেনু…টেনু…টেনু!