পোকা দমনে কৃষক সবজি ক্ষেতে বিষ প্রয়োগ করছেন। আর সেই বিষ খেয়ে পোকা মারা যাচ্ছে। সেসব সবজি যাচ্ছে বাজারে। বিক্রিও হচ্ছে। মানুষ সেসব বিষযুক্ত সবজি কিনে খাচ্ছেন কিন্তু মরছেন না। অথচ বিষ খেয়ে পোকা মরছে -প্রশ্নটি অন্য আট-দশজন মানুষের মত মামুনের মনেও বার বার দোলা দেয়।

সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ছোটেন কৃষি অফিসে। পেয়েও যান। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের অধীনে তিনি বগুড়ার শেরপুর উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। এরপর মামুন ও তাঁর কৃষি পরিবার বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষে নামেন। এখনও তা সফলভাবে অব্যাহত রেখেছেন।

 এবারও এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে ৪৩ শতক জমিতে বেগুন, ১ বিঘা করে হাইব্রিড জাতের লাউ ও করলা এবং ২৬ শতক জমিতে মরিচ লাগিয়েছেন। বর্তমানে তার দেখাদেখি শেরপুর ও ধুনট উপজেলার অনেক কৃষক পরিবারই বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন। উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের ভাটরা গ্রামের বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ। বাবা সাইফুল ইসলাম। মা পেশায় একজন গৃহিণী।

বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামুন জানান, প্রথমে বিষমুক্ত পদ্ধতি সেক্স ফেরোমন সম্পর্কে উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাথমিক প্রশিড়্গণ নেই। এরপর ইস্পাহানী বায়োটেক কোম্পানির মাধ্যমে আবারও প্রশিড়্গণ গ্রহণ করি। পাশাপাশি কোম্পানির ডিলারশীপ হয়ে যাই। এভাবে সবজি চাষ করলে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ থাকে না বললেই চলে। কার্যকরি এ পদ্ধতিতে শসা, কুমড়া, মিষ্টি লাউ, লাউ, করলা, ঝিঙাতে এক ধরনের সেক্স ফেরোমন, বেগুনে আরেক ধরনের সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করতে হয়।

এছাড়া আম, লিচু, কুল চাষেও এ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন এবং আশাতীত সফলতাও পেয়েছেন। মামুনুর রশিদ আরও জানান, কুমড়া জাতীয় ফসলে সেক্স ফেরোমন টোপ প্রায় ৬ মাস ফসল ওঠার আগ পর্যনত্ম ব্যবহার করা যায়। একইভাবে বেগুনের ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি তিন মাস পর্যন্ত ব্যবহার হয়। এছাড়া তিনি ধুনট উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় এ প্রযুক্তি সরবরাহ করছেন। সেখানকার কৃষকরাও এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেগুন ক্ষেতের মাঝে-মধ্যে সারিবদ্ধভাবে দু’টি চিকন খুঁটি ব্যবহার করে একটি প্লাস্টিক কৌটা বসানো হয়েছে। কৌটার একপাশে একটি ছিদ্রও রাখা হয়েছে। এর নিচ অংশে পানি ও ওপরে সেক্স ফেরোমন ঝুলিয়ে রাখা হয়। আর ওই পানিতে সামান্য হুইলে গুঁড়ো মিশিয়ে দেওয়া আছে। কৌটায় রাখা সেক্স ফেরোমন থেকে স্ত্রী পোকার সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগ মুহূর্তে বিশেষ গন্ধ নির্গত হচ্ছে। এতে পুরুষ পোকা কৌটার সেই ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে আর রাখা পানিতে ডুবে মরছে।

 একইসাথে বিষ প্রয়োগ ছাড়াই ক্ষেতের ফসল তরতর করে বেড়ে চলছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স.ম আশরাফ আলী বিষমুক্ত পদ্ধতিতে সবজি চাষে মামুনের পরিবারটিকে উপজেলার মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, একদিন সবাইকে এ পদ্ধতিতেই ফসল চাষ করতে হবে। অবশ্য সেইদিন আর বেশি দূরে নয়। কেননা বিষযুক্ত খাবার খেয়ে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছি।

তাই বিষমুক্ত পদ্ধতিতে এ উপজেলার কৃষককে সবজিসহ অন্য ফসল চাষের ব্যাপারে নানাভাবে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।