নিজের জমিতে চাষি সুবল বিশ্বাস

আবার সেই আহসাননগর গ্রাম। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। মাঝখানে কেটে গেছে প্রায় ১০ বছর। ২০০১ সালে ঘটনার নায়ক ছিলেন হরিপদ কাপালি। এবারের নায়ক সুবল বিশ্বাস। ঘটনাটি হরিপদ কাপালির হরি ধান উদ্ভাবনের গল্পের মতোই। ওই সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার হয় হরিপদ কাপালির নতুন ধান উদ্ভাবনের খবর। দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী তাঁর সেই ধানটি পরিচিতি পায় ‘হরি ধান’ নামে। কৃষক হরিপদ কাপালি তাঁর জমিতে বিআর-১১ ধান রোপণ করেছিলেন। জমির মধ্যে অন্য রকম একটি ধানের চারা দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। সেই ধানগাছটি আলাদা করে লালন করেছিলেন। সেই গাছ থেকে পাওয়া ধানই হয়ে যায় হরি ধান।

ঠিক একই গল্পের জন্ম দিয়েছেন সুবল বিশ্বাসও। সুবল বিশ্বাসের গ্রাম ঝিনাইদহের আহসাননগরে। তিনিও বছর চারেক আগে তাঁর ক্ষেতে কাজললতা ধান রোপণ করেন। কিছুদিন পর ক্ষেতে অচেনা একটি ধানের চারা দেখতে পান। চারাটিকে আলাদাভাবে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সুবল। ধানগাছটি ফলবতী হতেই দেখা গেল এই ধানটি চিকন জাতের এবং মাঠের অন্য ধানের চেয়ে গঠন ও আকৃতিতে আলাদা। সেই এক ছড়া ধান যত্নে সংরক্ষণ করলেন সুবল। পরের বছর সেই ধান লাগিয়ে তিনি পেলেন আশাতীত ফলন। সুবলকে পেয়ে বসে এই ধানের নেশায়। আমন মৌসুমে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষেতে ছিটিয়ে দিলেন ধানের বীজ। এলাকার কৃষকদের অবাক করে দিয়ে এবারও আশাতীত ফলন পেলেন সুবল। অপরিচিত ধানটি এলাকায় পরিচিতি পেল ‘সুবল ধান’ নামে। এলাকায় এ ধানের এখন বেশ চাহিদা। সুবল বিশ্বাস এখন প্রতি মণ ধানের বীজ বিক্রি করছেন এক হাজার ৬০০ টাকায়।

আহসাননগরের পাশের গ্রাম ওলিয়ারপুরের কৃষক আবু তালেব বলেন, ‘আমি গত বছর এক বিঘা জমিতে সুবল ধানের আবাদ করেছিলাম। ইরি আবাদে প্রায় ২৮ মণ ধান পেয়েছি এবং বোরো আবাদে ১৯ মণ ধান পেয়েছি। এই ধান খুবই চিকন জাতের, বাজারে এর দামও বেশি। এ ছাড়া আউশ-আমন দুই আবাদেই এই ধান চাষ করা যাচ্ছে।’

আহসাননগর গ্রামের কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি এবার পরীক্ষামূলকভাবে সাত কাঠা জমিতে সুবল ধান চাষ করে সাত মণ ধান পেয়েছি।’ সুবল ধানের উদ্ভাবক সুবল বিশ্বাস জানান, এ ধান ইরি এবং বোরো দুই আবাদেই চাষ করা যায়। ইরি আবাদে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ মণ ফলন হচ্ছে। আর বোরো আবাদে ২০ মণ হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এত বেশি ফলনের চিকন ধান এর আগে আমরা দেখিনি। এলাকায় প্রতি মণ বীজধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ টাকায়। এলাকার মানুষ এই ধানের নাম রেখেছে সুবল ধান।’

ঝিনাইদহ কৃষি উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহমেদ হোসেন বলেন, ‘সুবল ধান নামের এক জাতের ধান এলাকায় চাষ হচ্ছে বলে শুনেছি। সরেজমিন মাঠ পরিদর্শন করে ওই ধান সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে।’ হরি ধানের উদ্ভাবক হরিপদ কাপালি বলেন, ‘সুবল ধানের বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা একটি আনন্দের সংবাদ। সুবলের ধানও এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘হরি ধানের মতো সুবল ধানও চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।’

লিখেছেনঃ এম সাইফুল মাবুদ, ঝিনাইদহ/ কালের কন্ঠ