পেরুভিয়ান-স্প্যানিশ ঔপন্যাসিক মারিও বার্গাস য়োসা এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সুইডিশ একাডেমি এই পুরস্কারের কথা ঘোষণা করে। সুইডিশ একাডেমি জানায়, সাহিত্যে ব্যক্তির প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, বিদ্রোহ ও পরাজয়ের নিপুণ চিত্রায়ণ এবং ক্ষমতাকাঠামোর সাবলীল উপস্থাপনার জন্য মারিও বার্গাসকে এই পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।

৭৪ বছর বয়সী মারিও বার্গাস তাঁর কনভারসেশন ইন দ্য ক্যাথেড্রাল এবং দ্য ফিস্ট অব দ্য গোট উপন্যাসের জন্য বিখ্যাত। ১৯৯০ সালে পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। করেছেন সাংবাদিকতাও। ১৯৮২ সালে কলম্বিয়ান লেখক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের পর তিনিই প্রথম লাতিন আমেরিকান হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করলেন।সুইডিশ একাডেমির পারমানেন্ট সেক্রেটারি পিটার ইংলান্ড বলেন, মারিও বার্গাসের রচনা পাঠকদের হূদয় ছুঁয়ে যায়। তিনি মারিওকে ‘স্বর্গ থেকে আসা গল্পকার’ বলে অভিহিত করেন। পিটার বলেন, মারিওর স্বতন্ত্র পরিপ্রেক্ষিতের লেখা ও ভিন্নধর্মী উপস্থাপনা তাঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।

পুরস্কার পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় মারিও বার্গাস বলেন, ‘পুরস্কার পেয়ে আমি আনন্দিত। তবে অবাক হয়েছি। সত্যি বলতে কি, আমি ভাবিনি, পুরস্কারটা আমি পাব। এটা আমার কাছে বিস্ময়, তবে আনন্দের বিস্ময়।’মারিও বার্গাস ৩০টিরও বেশি উপন্যাস রচনা করেছেন। তাঁর রচিত নাটক ও প্রবন্ধের সংখ্যাও অনেক। বার্গাসের প্রথম উপন্যাস দ্য টাইম অব দ্য হিরো প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। তবে ১৯৬৬ সালে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত দ্য গ্রিন হাউস উপন্যাস লিখে তিনি প্রথম কোনো বড় সফলতা পান।

এই উপন্যাসে রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা ও লাতিন আমেরিকার ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি। তাঁর অন্যতম রচনার মধ্যে রয়েছে দ্য সিটি অ্যান্ড দ্য ডগস, ক্যাপ্টেন পানতোহা অ্যান্ড দ্য স্পেশাল সার্ভিস ও আন্ট জুলিয়া অ্যান্ড দ্য স্ক্রিপ্ট রাইটার।স্প্যানিশ ভাষার লেখক হিসেবে তিনি সাহিত্যে অনেক সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে স্প্যানিশ ভাষাভাষীর কাছে সবচেয়ে সম্মানজনক সারভানতেস পুরস্কার পান ১৯৯৫ সালে।

মারিও বার্গাস ১৯৩৬ সালের ২৮ মার্চ পেরুর অ্যারিকুইপা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে বেড়ে ওঠেন বলিভিয়ার কোখাবামা নগরে। সেখানে মা ও নানির সঙ্গে ছিলেন তিনি। ১৯৪৬ সালে পেরুতে ফিরে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। মারিও বার্গাস বার্তা সংস্থা এএফপি ও ফ্রেঞ্চ টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করেন। এরই মধ্যে লেখালেখির জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।

১৯৯০ সালে পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মারিও। নির্বাচনে পরাজয় ও প্রেসিডেন্ট ফুজিমোরির একনায়কসুলভ শাসনে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। ১৯৯৩ সালে তিনি স্পেনের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।লাতিন আমেরিকার গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ও কার্লোস ফুয়েন্তেসের সমসাময়িক মারিও বার্গাসকে তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা ঔপন্যাসিক বলে গণ্য করা হয়। এএফপি, বিবিসি, সিএনএন ও এপি।

 তথ্যঃ প্রথম আলো