সে দিন ভোরে বৃষ্টি ছিল প্রচুর-
দিগন্ত উন্মোচিত আমার পৈত্রিক ভিটার সামনে দাড়িয়ে দেখেছিলাম-
অগাধ জলরাশির শেষপ্রান্তে লাগোয়া গারোপাহাড়ের নীল প্রতিচ্ছবি।

সদ্যস্নাত বর্ষার আকাশটা যে কি অদ্ভুত ছিলো!
কারো চোখের জলে বিদায় নিয়েছিলাম-আমার জন্মস্থান-।
অসময়ের বৃষ্টিতে জুবুথুবু হয়ে ত্যাগেছিলাম আমার প্রিয় বাল্য,শৈশবের খেলার স্থান-

একদল স্বার্থবিহীন প্রিয়জনদের সম্মিলিত উচ্চারনে, উচ্ছাসিত, উদ্বেলিত কন্ঠের মঙ্গল বাক্যে,
আমার নৌকার শুরু হয়ে ছিল যাত্রা।

নিদারুন ষ্ট্রোকের নির্মম চপেটাঘাতে অর্দ্ধবক্র হয়ে যাওয়া মুখে- মৃত্যু পথযাত্রী শম্ভুদার প্রশ্ন,
“কবে আইবা দাদা” ?
-বিদায় নিয়েছিলাম অনেক গুলো বছর আগে।
বিয়ের আসরে সুমন্ত দাড়িয়ে, নত চোখে, মজ্ঞল ধূলোয়-
অদ্ভুত সেই মুকুটের শীর্ষে, লটকে থাকা ঘাসের উপরের বৃষ্টি বিন্দুতে ছিলো প্রান-

বিশাল ঘোমটার নিচে একটা লাজুক মুখ ছিলো-
আরেকটা মুখ ছিলো দাঁড়িয়ে, রক্তরাঙা চোখে, বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে-
ওরনাতে চাপা মুখে, রক্তলাল চোখে-অনেক কথায়, অনেক প্রশ্নবানে, অপ্রকাশিত-
দুঃখ, ক্ষোভ, যন্ত্রনায় কাতর, সেকি অভিপ্রকাশ-
-মঙ্গল উলুধ্বনি, ছোট মোটর বোটটার ইঞ্জিনের কাপা কাপা তাল-
মিশে গিয়েছিলো কারো বক্ষের চাপা অভিমানে।

দীর্ঘঃশ্বাস, সেই পরিচিত দখিনা বাতাস-
আমার পাঠশালা, কদম গাছটার কদমফুল-
আজ থেকে ঊনিশ বছর ধরে আবক্ষ মূর্তীতে দাঁড়িয়ে থাকা গুপ্তবাবু
অর্দ্ধভগ্ন প্রাচির, প্রাসাদ।

শ্যাওলা গজিয়ে যাওয়া পাচিলে আছরে পরা “আফালের” ঢেউ-
আস্তে আস্তে ক্ষীন হয়ে যাওয়া রেইন ট্রি গুলোর সাথে,
আমার জন্মস্থান-

ধীরে ধীরে নদীকূল, শ্মশান, পশ্চিমগ্রাম, দাসহাটি, বরইবাড়ী পেড়িয়ে-
হঠাৎ করেই- যন্ত্রদানবদের সাথে মার্চ করতে করতে-
কোথায় হারিয়ে গেছে, আমার শৈশব, কৈশরের সেই দিনগুলো-

সেই মানুষগুলো-
প্রিয়জন, প্রিয়মুখ, প্রিয়চোখ, প্রিয়স্মৃতি, আর অগাধ ভালোবাসা-
যা আজও আমি খুজে ফিরি, হন্যে হয়ে বিস্মৃতির অতল গহ্ববরে-
বন্দরে, বন্দরে- বিশাল শহরে-   
বিশ্বময়-এ জগৎময়।

 -এ, জেড আসিফ ইকবাল খান
বসন্তকাল, ১৯৯৮  খ্রীষ্টাব্দ
ব্রডওয়ে কফি হাউজ, ক্যানসাস সিটি – যুক্তরাষ্ট্র