‘মরা মাইনসের আবার ঈদ কিতা। এই গাঁওয়ের সব মানুষ মরা। এই যে রুজা যাইতাছে, এক গেলেস পানি দিয়া রুজা খুলন ছাড়া আর কুছতা নাই। মনডা চাইলেও বাড়তি কুছতা খাওনের কায়দা নাই।’ গত ২৪ মার্চ হঠাৎ বন্যায় নেত্রকোনা, সিলেট ও কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ইরি ফসল তলিয়ে যায়। হাওরাঞ্চলের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম ৭ নম্বর গাগলাজুড় ইউনিয়নের মান্দারবাড়ীর সর্বস্বান্ত কৃষক আবদুল হামিদ চোখে-মুখে তীব্র হতাশার ছাপ নিয়ে কথাগুলো বলেন।

ওই গ্রামের ঈদ-ভাবনা জানতে শুক্রবার মান্দারবাড়ী খেলার মাঠে কথা হয় কৃষক আবদুল হামিদ ছাড়াও নজরুল ইসলাম, মেওয়া আক্তার, রেহেনা বেগম, গুলবানু, সম্রাজের নেছা ও সুজনের সঙ্গে।

তাঁরা জানান, গত চৈত্র মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাঁইজদা বেড়িবাঁধ ভেঙে নজরুল ইসলামের দুই একর, আবদুল হামিদের চার একর জমির ধান তলিয়ে যায় বলে জানান তাঁরা।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘এই যে ঈদ আইছে, শ দিনের একটা দিন। বাচ্চারা একটা জিনিস চাইলে দিবার মতো ক্ষেমতা নাই।’

গুলবানু বলেন, ‘ঈদের দিন সাবান দিয়া পুরান কাপরডি ধুইয়া দিতাম হেই ক্ষেমতা নাই। চইত মাসো বইন্যা অইছে, বৈশাখ মাসো নাম লেহাইছে, সাবান মাসো দিছে দশ কেজি চাউল। মাইপ্যা দেহি সাত কেজি। এ পর্যন্ত আর কুচতা ফাইছি না।’

মেওয়া আক্তার বলেন, ‘ষুল্লো আনা গাঁওই এই অবস্থা। বেকটা (সারা) গাঁও খুঁইজ্যা এক মুইট ধান ফাইতাইন না। কিতা ঈদ করতো।’ গত ২৪ মার্চ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা, খালিয়াজুরী, মদন উপজেলার হাওরাঞ্চলের সব ইরি ফসল তলিয়ে যায়। হাওরাঞ্চলের এসব গ্রামের সর্বস্বান্ত কৃষকদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হাহাকার। অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটছে তাদের। এ পর্যন্ত সাহায্য পাওয়া গেছে নিয়মমাফিক দশ-বারো কেজি চাল। হাওরের ফসলহারা এসব মানুষের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথ মাছ ধরা। কিন্তু তাতেও অর্থের প্রয়োজন।

এ এলাকার মানুষ এখনো পথ চেয়ে আছে সরকারি সাহায্যের জন্য। তা না হলে নতুন ফসল না ওঠা পর্যন্ত তাদের উপোস থাকতে হবে।