কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পৃথক ঘটনায় এক তরুণী গৃহকর্মী ও এক স্কুলছাত্রীর ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। দক্ষিণ সালুয়া গ্রামে গত বুধবার রাতে এক গৃহবধূ দা ও কাঁচি গরম করে ওই তরুণীর মুখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দিয়েছেন।এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ব আগরপুর গ্রামে স্কুলছাত্রীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে বখাটেরা।

গৃহকর্মীকে নির্যাতন: পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীর বাড়ি উপজেলার সালুয়া ইউনিয়নের মাটিকাটা খিদিরপুর গ্রামে। তাদের অভাবের সংসার চলে কোনো রকমে। কাজ দেওয়ার কথা বলে দুই বছর আগে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে দক্ষিণ সালুয়া গ্রামের মাসুদ রানার স্ত্রী লাইলী বেগম। তিনি মেয়েটিকে দেহব্যবসার প্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হয়ে মেয়েটি তখনই ওই বাড়ি থেকে চলে যায়। কাজ নেয় একই গ্রামের খলিল মিয়ার বাড়িতে। এক সপ্তাহ আগে লাইলী মেয়েটির সঙ্গে দেখা করে একই প্রস্তাব দেন, কিন্তু মেয়েটি রাজি হয়নি। গত বুধবার বাড়ির কাছে পেয়ে মেয়েটিকে ধরে এনে ঘরে আটকে রাখেন লাইলী বেগম। রাত ১২টার দিকে রশি দিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দা ও কাঁচি গরম করে মেয়েটির মুখ ও কপালসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ও গোপনাঙ্গে ছেঁকা দেন লাইলী বেগম।

রাতে নির্যাতনের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লাইলী বেগম কুলিয়ারচর থানায় যান। তিনি মেয়েটির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে মামলা করতে এজাহার জমা দেন, কিন্তু ততক্ষণে পুলিশ অন্য সূত্রের মাধ্যমে নির্যাতনের ঘটনা জেনে যায়। পুলিশ থানা থেকে লাইলী বেগমকে আটক করে। এরপর তাঁর বাড়ি থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। গতকাল বিকেলে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা গেছে, নারী ওয়ার্ডের একটি শয্যায় শুয়ে মেয়েটি কাতরাচ্ছে। কাঁপা কাঁপা গলায় মেয়েটি জানায়, কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে এমন নির্যাতন করা হয়েছে।

তবে কুলিয়ারচর থানায় আটক লাইলী বেগম নির্যাতনের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মেয়েটি দেহব্যবসা করে। আমি চেয়েছিলাম, সে যেন এ কাজ না করে, কিন্তু সে শোনেনি। এ কারণে ছেঁকা দিয়েছি।’ কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, লোহা-জাতীয় কিছু গরম করে মেয়েটির সারা শরীরে ছেঁকা দেওয়া হয়েছে।

কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল হক জানান, মেয়েটি বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছে। লাইলী বেগমকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আগামীকাল (শুক্রবার) তাঁকে আদালতে পাঠানো হবে।

স্কুলছাত্রীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন: পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব আগরপুর গ্রামের ওই স্কুলছাত্রী মঙ্গলবার বিকেলে পরীক্ষা দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় একই গ্রামের নবদ্বীপ চন্দ্র বিশ্বাসের বখাটে ছেলে দীপু চন্দ্র বিশ্বাস ও তার দুই বন্ধু মিলে ওই ছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে পাশের গোসাইয়ের জঙ্গলে নিয়ে যায়। পরে দীপু মেয়েটিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় তার হাত-পা বেঁধে গলায় পা দিয়ে চাপ দেয় বখাটেরা। এতে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়। এর পরও মেয়েটি বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বখাটেরা তাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে। পরে গলায় রশি পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে একই গ্রামের দুজন ব্যক্তি এগিয়ে এলে বখাটেরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়।

ওই স্কুলছাত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার বলে, ‘প্রতিদিন আমাকে দীপুর বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এ সময় প্রায়ই দীপু আমাকে অশালীন কথাবার্তাসহ কুপ্রস্তাব দেয়। মাস খানেক আগেও বিদ্যালয় থেকে আসার পথে দীপু আমাকে ওই জঙ্গলে নিয়ে একটি গাছে বেঁধে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে নির্যাতন করে।’

মেয়েটির বাবা বলেন, ‘লোকজন এগিয়ে না এলে বখাটেরা আমার মেয়েকে মেরেই ফেলত। আমরা গরিব মানুষ, এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
গত বুধবার বিকেলে দীপুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার ছোট বোন ছাড়া বাড়িতে কেউ নেই। কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল হক প্রথম আলোকে জানান, মেয়েটির পরিবার অভিযোগ দিয়েছে। তাদের অভিযোগ মামলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাউকে আটক করতে পারেনি। তারা গা-ঢাকা দিয়েছে।

– প্রথম আলো