মেয়েটির পরিবার পুলিশের কাছে না গিয়ে ধর্ষকের পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ছেলেটির পরিবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে লাঞ্ছিত মেয়েটিকে ‘নষ্টা মেয়ে’ বলে আরেক দফা অপমান করে। তাঁকে মারধরও করা হয়। এভাবে চরম নিগ্রহের শিকার হয়ে মেয়েটি শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।নিকলীর সিংপুর ইউনিয়নের নয়াহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে বাড়ি থেকে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মেয়েটির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় সে আত্মহত্যা করে।

হতভাগ্য মেয়েটির নাম বিফলা আক্তার। সে উপজেলার আলিয়াপাড়া এ বি এম নূরজাহান উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ত।আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে পুলিশ অভিযুক্ত ধর্ষক আতাউরের বাবা রইস উদ্দিন (৬০) ও মা শরিফাকে (৫০) আটক করেছে।

পরিবার ও নিকলী থানা সূত্রে জানা গেছে, ভাই দ্বীন ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকালে বিফলা জানায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আতাউর বাসায় এসে তাঁকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। তাঁরা বিষয়টি গ্রামের কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জানান। দ্বীন ইসলাম আরও বলেন, শুক্রবার দুপুরে তিনি ওই গণ্যমান্য লোকদের নিয়ে আতাউরের বাড়িতে যান এবং তাঁর বাবা রইস উদ্দিনকে ঘটনা জানিয়ে আতাউরের সঙ্গে বিফলার বিয়ের প্রস্তাব দেন। রইস উদ্দিন তাঁদের বলে দেন, ‘আমি এই মেয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই আতাউরের বিয়ে দেব না’

দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক অনুরোধ করলেও রইস উদ্দিন বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হননি। উল্টো আমাদের গালমন্দ করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন।’ভাই দ্বীন ইসলাম বাসায় ফিরলে তাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার কথা জানতে পারে বিফলা। বিকেলে সে একাই আতাউরের বাসায় গিয়ে তাঁর মা শরিফা বেগমকে ঘটনা জানিয়ে তাঁকে ছেলের বউ হিসেবে গ্রহণের অনুরোধ করে।

প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসী জানায়, বিফলার আকুতির জবাবে শরিফা বলেন, ‘তুই একটা নষ্টা মেয়ে। তোরে আমি ঘরে জায়গা দেব না। পারলে তুই গলায় দড়ি দিয়ে মর।’ বিফলা কাকুতিমিনতি করলেও নরম না হয়ে তাঁকে উল্টো মারধর করে তাড়িয়ে দেন শরিফা।পেশায় দিনমজুর দ্বীন ইসলাম জানান, পরদিন শনিবার সকাল সাতটার দিকে কাজে যাওয়ার সময় তিনি বিফলার ঘরে গিয়ে দেখেন সে ঘরের ধন্নার সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ঝুলে আছে।

বিফলার লাশের সুরতহাল প্রস্তুতকারী ও নিকলী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিকলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম গতকাল দুপুরে প্রথম আলোকে জানান, ধর্ষণ এবং এরপর আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বিফলার বাবা চাঁন মিয়া থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে রইস উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী শরিফাকে আটক করা হয়েছে। অভিযুক্ত ধর্ষক আতাউর পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

চাঁন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব বইলা আতাউর আমার মাইয়ারে ধর্ষণ করল। আর তার মা উল্টা আমার মাইয়ারে মারল। তাগো কারণে আমার মাইয়াডা মরল। আমরা এর বিচার চাই।’তবে অভিযুক্ত শরিফা বেগম গতকাল নিকলী থানাহাজতে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, ‘আমি বিফলারে মারি নাই। মরতেও বলি নাই। তারা মিথ্যা কথা বলছে।’ বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ছোট। তারে এত অল্প বয়সে বিয়ে দিতে চাই না।’বিফলার বাবা-মা উভয়েই নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জে দিনমজুরের কাজ করেন। বাড়িতে থাকত বিফলা ও তাঁর বড় দুই ভাই। তারাও পেশায় দিনমজুর।

-Prothom Alo