হাওর এলাকার ভাঙন প্রতিরোধ, বোরো ফসল রক্ষা এবং মাছের উৎপাদন বাড়াতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় হাওরবেষ্টিত পাঁচটি জেলায় ৪৮টি নতুন গ্রাম গড়ে তোলা হবে। এসব গ্রামে ঠাঁই পাবে ভাঙনকবলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে হাওরের কৃষকদের বাড়িগুলো আবার মাছ ও ফসলে ভরে উঠবে এবং অভাব দূর হবে। তাই প্রকল্পটি হাওরের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার আলো জ্বালিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিস্তীর্ণ হাওরের উন্নয়নে ‘কালনী-কুশিয়ারা’ নামের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় হাওরের নদী খনন, বাঁধ ও গ্রাম নির্মাণসহ নানা কাজের জন্য ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এর ৭৫ শতাংশ কাজ কিশোরগঞ্জে হবে। কিশোরগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) নির্বাহী প্রকৌশলী খুশী মোহন সরকার জানান, ২০১১ সালের মে মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি এ প্রকল্প পাস করে। ২০১৪ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। বর্তমানে জরিপ ও আনুষঙ্গিক কাজ চলছে।  এই প্রকল্পের অধীন নদী খনন ও বাঁকা নদী কেটে সোজাকরণের কাজ করা হবে। এতে একদিকে আগাম বন্যা বা পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার সুযোগ পাবে, অন্যদিকে নদী কেটে সোজা করায় স্রোতের ধাক্কায় ভাঙনের তাণ্ডবও বন্ধ হবে।

পাউবোর কিশোরগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খননের পর নদী থেকে যে মাটি উঠে আসবে, তা দিয়ে প্রকল্প এলাকার ৪৮টি স্থানে ৪৮টি নতুন গ্রাম গড়ে তোলা হবে। সেসব গ্রামে বাস্তুহারা ও হাওরের ঢেউয়ের আঘাতে ভিটেহারা মানুষদের পুনর্বাসন করা হবে। নতুন এ প্রকল্পের আওতায় হাওর এলাকা হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, করিমগঞ্জ ও তাড়াইল উপজেলা পড়েছে। জানা গেছে, একসময় ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলীতে প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন করা হতো। পাশাপাশি মাছের জন্য এ উপজেলাগুলো বিখ্যাত ছিল। কিন্তু গত তিন দশকে বর্ষাকালের ভাঙনে এসব উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বিভিন্ন উপজেলা ও রাজধানী ঢাকায় আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিবছর আকস্মিক বন্যায় বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসন এবং বোরো ফসল রক্ষায় কালনী-কুশিয়ারা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন জানান, উপজেলার ছাতিরচর গ্রামে একসময় ১৭ হাজার মানুষ বসবাস করত। অব্যাহত ভাঙনে এটি বিলীন হয়ে গেছে। এ গ্রামের মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরের বস্তিতে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছে। মিঠামইন উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল আহসান শাহজাহান জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যারা সবকিছু হারিয়ে হাওর ছেড়েছে, তারা আবার ফিরে আসবে। পাউবো কিশোরগঞ্জ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কালনী-কুশিয়ারা প্রকল্প সম্পন্ন হলে কেবল ফসল রক্ষাই হবে না, আগে থেকে যারা বর্ষার ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে যাযাবরের মতো জীবন যাপন করছে, তারাও মাথা গোঁজার নতুন ঠিকানা খুঁজে পাবে।

সুত্রঃ- পাউবো  কিশোরগঞ্জ কার্যালয় ও দৈনিক প্রথম আলো