ভূ-প্রাকৃতিক কারণে বছরের ৬ মাস জলমগ্ন থাকে কিশোরগঞ্জ জেলার সুবিশাল হাওরাঞ্চল। বর্ষায় এ জেলার প্রধান হাওর উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, তাড়াইল, করিমগঞ্জ ও নিকলী মৎস্য আহরণের উল্লেখযোগ্য স্থানে পরিণত হয়। এ সময় বিস্তীর্ণ এ হাওরাঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিল, জলমহাল ও হাওরগুলো মিঠাপানির মাছে সমৃদ্ধ হলেও বর্ষার ভাসমান পানিকে ব্যবহার করে ভাসমান পুকুরে মাছ চাষ খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। সম্ভাবনার বিষয়টি মাথায় রেখে হাওরে ভাসমান পুকুরে মাছ চাষের মাধ্যমে ইটনা উপজেলার একজন মুক্তিযোদ্ধা দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন।

গত চৈত্রের আগাম বন্যায় হাওরের অধিকাংশ কৃষকের মতো ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের করণশী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল ঠাকুর নিজের চোখের সামনে তলিয়ে যেতে দেখেন ৪ একর ধানী জমির ফসল। জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে অন্যান্যদের মতো যখন ধুঁকছিলেন, তখনই তিনি বাড়ির পাশের পুকুরটিকে ঘিরে নতুন স্বপ্নে বিভোর হন। প্রায় ১ একর আয়তনের পুকুরটিতে শুরু করেন মাছ চাষ। বর্ষার পানি থেকে পুকুরটিকে বাঁচাতে পুকুরের চারপাশে জাল দিয়ে কমপক্ষে পাঁচ হাত উঁচু জালের প্রাচীর তৈরি করে রুই, কাতলা, কার্ফু, ব্রিগেড, সিলভার, গ্রাস কার্প, বাউস প্রভৃতি মাছের ৭ হাজার পোনা ছাড়েন। কোন ধরনের সরকারি সহায়তা ছাড়া ধার-কর্জ করে পুকুরটি তিনি বাঁচিয়ে রাখছেন। এ উদ্যোগ সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল ঠাকুর বলেন, বর্ষার ভাসমান পানিতে মাছের খাবার কম লাগে অথচ মাছ বেশি বাড়ে।

এজন্য ঝুঁকি নিয়েই পরীক্ষামূলকভাবে পুকুরটি শুরু করেছি। পুকুরটি করতে আমার আনুমানিক ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৭ হাজার মাছের মধ্যে যদি ৪ হাজার মাছও টিকে তাহলেও কমপক্ষে ৪ লক্ষ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছি। পুকুরটিতে লাভ হলে এবং সরকারি সহায়তা পেলে আগামী বছরে আরো বড় আকারে পুকুর করব।

হাওরে সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনায় ভাসমান পুকুরের এ ধারণাটি লাভজনক এবং জনপ্রিয় হবে বলেই অভিজ্ঞমহল মনে করছেন। হাওরে বর্ষার মৌসুমী বেকারত্ব হ্রাসেও এটি একটি কার্যকর পদৰেপ হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। এ ব্যাপারে কার্যকর পদৰেপ গ্রহণ খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।

লিখেছেনঃ আশরাফুল ইসলাম