মাত্র ৩ বছর বয়সে অসাধারণ কম্পিউটার দক্ষতার অধিকারী এক শিশুর কথা জানতে পেরে দেশের শীর্ষ এক শিল্পপতি বিষয়টি পরখ করতে তার অফিসে বাবা-মাসহ শিশুটিকে আমন্ত্রণ জানান। অফিসে আসার পর শিশুটিকে একটি কম্পিউটারের সামনে বসিয়ে দেওয়া হল। একপর্যায়ে সে কম্পিউটারের সার্চ অপশনে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে নিচে ফাইলের কোড লিখে এন্টার বাটন পুশ করতেই পর্দায় দেখা গেল ওই ডকুমেন্টটির প্রথম পাতা। সেটি ছিল ওই প্রতিষ্ঠানের আগামী একটি প্রজেক্টের টপ সিক্রেট নথি।

ঘটনা দেখে রীতিমত বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়লেন উপস্থিত সবাই। যে কোড বা পাসওয়ার্ডটি দিয়ে শিশুটি ফাইলটি খুলেছে তা তার তো জানার কথাই নয়, এমন কি ওই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদের দু’একজন ছাড়া বাকি কেউই তা জানেন না। শিল্পপতি সাহেব যা বোঝার বুঝে গেলেন। আর কোনও পরীক্ষার দরকার নেই। তিনি তাৎক্ষণিক অত্যাধুনিক একটি ল্যাপটপ উপহার দিয়ে শিশুটিকে সম্মানিত করলেন।

রূপকথাময় কর্মকাণ্ড ঘটানো এ শিশুটির নামও রূপকথা, ভালো নাম ওয়াসিক ফারহান। তবে রূপকথা ডাকনামটিই তার গুণের প্রতি সত্যিকারের সম্মান বলে মনে হয়। সবেমাত্র বয়স ৫ বছর পেরিয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) রূপকথাকে কনিষ্ঠতম কম্পিউটার প্রোগ্রামারের স্বীকৃতি দিয়েছে। রূপকথার বাবা ওয়াসিম ফারহান জানান, গিনেস বুক অব রেকর্ডসে রূপকথার প্রোফাইল অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর রিপলি’স প্রকাশনার নতুন সংস্করণে থাকবে রূপকথা অসাধারণ সব কীর্তির ফিরিস্তি।

এই বয়সেই রূপকথা তৈরি করছে নতুন নতুন গেমস আর প্রোগ্রাম। ইন্টারনেটে জানা-অজানা নানা রকমের গেইমিং সফটওয়্যার ডাউনলোড করে নিজেই ইনস্টল করে কাজ করে রূপকথা। অনেকটা রূপকথার মতই ৭ মাস বয়স থেকে এভাবে কাজ করছে সে।

শুরুর কথা
rupktha রূপকথার মা সিনথিয়া ফারহিন রিশা। পেশায় গৃহিনী। কম্পিউটারে গেমস খেলার শখটা তার ছোটবেলা থেকেই। রূপকথা গর্ভে থাকা অবস্থায় অধিকাংশ সময় গেমস খেলেই কাটিয়েছেন। তবে সেই গেমসই যে একদিন তার গর্ভের সন্তান রূপকথা তৈরি করবে তা কখনই ভাবেননি।

রূপকথার জন্ম ২০০৬ সালের ২৭ জানুয়ারি। জন্মের পরেও রূপকথাকে কোলে নিয়ে গেমস খেলতেন তিনি। রূপকথার বয়স যখন মাত্র ৭ মাস তখন একদিনের একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে তার সন্তানের অসাধারণ প্রতিভার কথা প্রতম জানতে পারেন। অন্য সবদিনের মত কম্পিউটারে বসতেই ৭ মাস বয়সী রূপকথা আনায়াসে কম্পিউটারের কি-বোর্ডে হাত রেখে পাসওয়ার্ড লিখে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে দেয়। অর্থাৎ তার মা যে কায়দায় ইন্টারনেট ব্রাউজার ওপেন করেন অবিকল সেভাবেই এবং পাসওয়ার্ডটিও অবিকল টাইপ (নিজের অক্ষরজ্ঞঅন তখনও হয়নি) করে ইন্টারনেট পাতা খুলে বসে সে। এরপর দুই বছর বয়সে এমএস ওয়ার্ডে শুরু করে লেখালেখি। দিন যত বাড়তে থাকে ততই বাড়তে থাকে কম্পিউটারের সঙ্গে রূপকথার সম্পর্ক।

সবসময়ের সঙ্গী
দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টাই রূপকথার সঙ্গী থাকে কম্পিউটার। কারণ কম্পিউটারে মিউজিক শোনা আর গেমস খেলা ছাড়া ওর ঘুমই আসে না। কম্পিউটারে উইন্ডোজ ওপেন হওয়ার মিউজিকটি রূপকথার সবচেয়ে প্রিয়। রূপকথা অবশ্য স্কুলে যায় না। তার বাবা-মা জানালেন বিষয়টি আপাতত প্রয়োজনীয় মনে করছেন না তারা।

রূপকথার মা রিশা বলেন, ঘুম থেকে উঠেই রূপকথা কম্পিউটার খোলে। এরপর বেলকনিতে বসে বেশ কিছু সময় কাটায়। নাস্তা শেষে বসে পড়ে কম্পিউটারের সামনে। রাত ১২/১ টা পর্যন্ত চলে তার কাজ। তাকে ঘুম আনানোর জন্য অগোচরে মেইনসুচ অফ করে বলতে হয় বিদ্যুৎ চলে গেছে।

গেমস আর প্রোগ্রামিং
মিগ ২৯, হারকিউলিস, এজ অব মিথলজি, সুপার মারিও ৬৪, লক অন, প্রিন্স অব পার্সিয়া, এয়ার কনফ্লিক্টস, স্টার ডিফেন্ডারের মত গেমসগুলো রূপকথার খুবই প্রিয়। ই-মেইল পাঠানো আর ইন্টারনেট ব্রাউজিংজেও খুবই দক্ষ সে। নিজে নিজেই তৈরি করছে প্রজেক্ট টুল। কোনও ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই সি এবং সি++ প্রোগ্রামিং করছে রূপকথা।

গণমাধ্যমে রূপকথা
দেশের গণমাধ্যম ছাড়িয়ে রূপকথার কাজের খবর ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। ওয়ার্ল্ড নিউজ এজেন্সি রূপকথাকে বিশ্বের সবচেয়ে কমবয়সী প্রোগ্রামার হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া অবজারভার, নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে রূপকথাকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবেদন। রূপকথা বিভিন্ন গণমাধ্যমে মডেলও হয়েছে বলে জানান রূপকথার বাবা ওয়াসিম ফারহান।

গিনেস বুক অব রেকর্ডস-এ রূপকথা
রূপকথা সম্প্রতি ‘রিপলি’স বিলিভ ইট অর নট’ অন্তর্বুক্ত হয়েছে রূপকথা। এখন শুধুই ঘোষণার অপেক্ষা। রূপকথার বাবা ওয়াসিম ফারহান জানান, রিপলি’স কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর রিপলি’স প্রকাশনার নতুন সংস্করণে থাকবে রূপকথার অসাধারণ সব কীর্তির ফিরিস্তি।

বাবার ইচ্ছা
ছেলেকে নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
প্রশ্নের জবাবে রূপকথার ওয়াসিম ফারহান জানান, বাস্তবতার খাতিরে তাদের ছেলেকে একসময় হয়তো চলে যেতে হবে যুক্তরাষ্ট্র বা উন্নত বিশ্বের অন্য কোথাও। তবে খুবই ভালো হত রাষ্ট্র্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তার ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারলে। ওয়াসিম ফারহান জানান, তার ধারণা অন্য সবকিছুর সঙ্গে রূপকথা কসমোগ্রাফি (cosmography অর্থাৎ পৃথিবীর উৎপত্তি, বিকাশ ও বিবর্তন সম্পর্কিত তত্ত্ব)বিষয়ে মনোনিবেশ করে যুগান্তকারী কোনও আবিষ্কার করবে ভবিষ্যতে।

– সুত্রঃ বাংলা নিউজ ২৪