সোনাগুই আমাদের গুইসাপ প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে দুর্লভদর্শন প্রাণী। আমাদের দেশের একটি বিপন্ন বন্য প্রাণীও বটে। বৈজ্ঞানিক নাম Varanus flavescens| বসবাসের জায়গা কমে যাওয়ায় এবং শিকারিদের কারণে এদের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমছে। বসতবাড়ির আশপাশে তেমন চোখে পড়ে না। ছোটখাটো ঝোপঝাড়পূর্ণ এলাকায় জলাশয়ের কাছে এদের কদাচিৎ দেখা যায়। মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই লুকিয়ে পড়ে। কালো কিংবা রামগাদি গুইসাপের মতো তেড়ে আসে না।

কয়েক মাস আগে কুষ্টিয়া শহর থেকে রাজবাড়ীর পাংশায় যাওয়ার পথে গড়াই নদীর কাছাকাছি মহাসড়কের একটি পরিত্যক্ত পানিপূর্ণ ধানখেতে হলুদাভ একটি গুইসাপকে সাঁতার কাটতে দেখি। তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে নেমে ধানখেতের কাছে যেতেই দেখা মিলল আরও একটির। যত কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করি, গুইসাপ দুটি সাঁতরে ও ডুব দিয়ে দূরে চলে যেতে থাকে। একসময় রাস্তার ধারের গুল্মঝোপে লুকিয়ে পড়ে।

গত বছর নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার গোলামখালী নদীর কাছে চানপুর গ্রামে গিয়ে যে দুটি সোনাগুইয়ের দেখা পেয়েছিলাম, তাদের আচরণের বৈশিষ্ট্যও এমনই ছিল। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে রাস্তার ধারের একটি জলাশয়ের কাছের একটি গর্তের ভেতর ঢুকে গিয়েছিল। ব্যাপক কোনো গবেষণা না হওয়ায় দেশে এদের বিস্তার সম্পর্কে তেমন বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা অব বাংলাদেশ গ্রন্থে বলা হয়েছে, প্রধানত সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনে এদের দেখা যায়।

সোনাগুইয়ের দেহের বর্ণ হলুদাভ হওয়ায় এদের ইংরেজি নামকরণ হয়েছে Yellow Monitor। দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৮ সেন্টিমিটার। মাথার অংশ ছোট, শিরযুক্ত। চোয়াল বেশ ভোঁতা।শামুক, পোকামাকড়, পাখি ও পাখির ডিম, কচ্ছপের ডিম, মাছ এদের খাদ্যতালিকায় উল্লেখযোগ্য পদ। পরিত্যক্ত জলাশয়, বিল, বড় পুকুর ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় বিচরণ করে। বসবাস করে কাছাকাছি কোনো গর্তে। কখনো-সখনো বড় গাছের গুঁড়ির মধ্যেও থাকে। এরা দারুণ সাঁতারু। গাছ বাইতেও পারে দ্রুত। প্রজননকাল জুন-জুলাই।

সৌরভ মাহমুদ-Prothom Alo