শহীদ সিরাজুল ইসলাম ১৯৭১ সালে গুরুদয়াল কলেজের কলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে । মহান মুক্তিযোদ্ধে যোগদান করেন । ভারতে আসামের ইকোয়ানে প্রশিক্ষন শেষে ৫নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহন করে তিনি বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন রনাঙ্গনে অসম সাহসী ভূমিকা পালন করেন । সর্বশেষ অভিযানে কমান্ডার হিসাবে তাঁর নেতৃত্তে এক রক্তক্ষয়ী ভয়াবহ যুদ্ধের মাধ্যমে পাকবাহিনীর শক্ত ঘাটি ও নৌবন্দর সাচনা (বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলা) মুক্ত হয়। উক্ত যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৩৬ জন সৈন্য নিহত হওয়ার পাশাপাশি বিপুল ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। ৮ই আগষ্ট সাচনা জয়ের পর মূহুর্তে পলায়নরত পাক সৈন্যদের কভারিং ফায়ারে স্বাধীনতার স্লোগানরত শহীদ সিরাজ আকস্মাৎ গুলি বিদ্ধ হয়ে শাহাদৎ বরণ করেন। শহীদ সিরাজকে সীমান্তবর্তী টেকেঘাটে পূর্ন সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।

স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ন অবদানের জন্য “বীর বিক্রম” খেতাবে ভূষিত করেন। এবং সাচনার নাম করন করা হয় “সিরাজ নগর”। মরহুম মুকতোল হোসেনের পুত্র শহীদ সিরাজের বাড়ী ইটনা উপজেলার ছিলনী গ্রামে ।

গুরুদয়াল সরকারী কলেজ প্রাঙ্গনে শহীদ সিরাজের ভাস্কর্য

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধে যে সমস্ত বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে গুরু দয়াল কলেজের ছাত্র শহীদ সিরাজুল ইসলাম অন্যতম ছিলেন। যুদ্ধরত যে সকল মুক্তিযোদ্ধাগন রনাঙ্গন হতে তাদের মা বাবার কাছে চিঠি লিখেন তাদের ঐসকল চিঠি নিয়ে প্রকাশিত হয় “একাত্তরের চিঠি নামক গ্রন্থ” যেখানে শহীদ সিরাজুল ইসলামের চিঠিটি ২য় স্থান অধিকার করে । নিম্নে হুবুহু চিঠিটি উপস্থাপন করা হলো-

টেকেরহাট থেকেঃ ৩০-৭-১৯৭১ ইং

প্রিয় আব্বাজান,

আমার সালাম নিবেন । আশা করি খোদার কৃপায় ভালোই আছেন । বাড়ির সকলের কাছে আমার শ্রেণীমত সালাম ও স্নেহ রইল। বর্তমানে যুদ্ধে আছি আলী রাজা, রওশন সাত্তার, রেনু, ইব্রাহিম ফুল মিয়া সকলেই একত্রে আছি । দেশের জন্য আমরা সকলেই জান কোরবান করেছি। আমাদের জন্য ও দেশ স্বাধীন হবার জন্য দোয়া করবেন। আমি জীবন কে তুচ্ছ মনে করি । কেননা দেশ স্বাধীন না হলে জীবনের কোন মূল্য থাকবে না। তাই যুদ্ধকেই জীবনের পাথেয় হিসাবে নিলাম। আমার অনুপস্থিতিতে মাকে কষ্ট দিলে আমি আপনাদের ক্ষমা করবো না। পাগলের সব জ্বালা সহ্য করতে হবে । চাচা-মামা, বড় ভাইদের নিকট আমার সালাম। বড় ভাইকে চাকুরীতে নিয়োগ দিতে না করবেন । জীবনের চেয়ে চাকুরী বড় নয়। দাদুকে দোয়া করতে বলবেন । মৃত্যুর মুখে আছি । যে কোন সময় মৃত্যু হতে পারে এবং মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত । দোয়া করবেন মৃত্যু হলেও যেন দেশ স্বাধীন হয় । তখন দেখবেন লাখ লাখ ছেলে পুত্র হারাদের বাবা বলে ডাকবে। এই ডাকের অপেক্ষায় থাকুন । আর আমার জন্য চিন্তার কোন কারন নাই । আপনার দুই মেয়েকে পুরুষের মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন তবেই আপনার সকল সাধ মিটে যাবে ।

দেশবাসী, স্বাধীন বাংলা কায়েমের জন্য দোয়া করো। মীরজাফরী করোনা । কারন মুক্তি ফৌজ তোমাদের ক্ষমা করবে না এবং বাংলায় তোমাদের জায়গা দেবেনা ।

সালাম দেশবাসী সালাম

ইতি
সিরাজুল ইসলাম