শহীদ সেলিম পিতা মরহুম মোঃ আকবর আলী,গ্রাম বীর কাসিম নগর, উপজেলা কুলিয়াচর।রক্তভেজা কিশোরগঞ্জ নামক গ্রন্থে তার ঠিকানা ভূল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি এ পর্যন্ত কোন লেখক, সংগ্রাহক ও গবেষক তার ছবি নিয়ে কোন গ্রন্থ প্রকাশ করেনি। যাও হয়েছে তাও ভূল ঠিকানায় তাও ভূল তথ্য প্রকাশে। এই অজানাকে জানার অনুসন্ধানেই আমার সংগ্রহে এবং সংরক্ষনে অতীত এবং বর্তমান দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে আজকের বিশেষ আয়োজন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩৩ বছর পরও যে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার ছবি প্রকাশিত হয়নি তার নাম শহীদ সেলিম। কিশোরগঞ্জ সদর থানার নিকটবর্তী গ্রাম প্যারাভাঙ্গা নামক এলাকায়। সংঘটিত এক সন্মুখযুদ্ধে সহযোদ্ধা গ্রুপ কমান্ডার শহীদ কায়রুল জাহান বীর প্রতীক সহ বেশ আরও কয়েকজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বীর প্রতীক মোঃ সেলিম মিয়ার নাম অজানা ছিল অপ্রকাশিত ছিল।

শহীদ সেলিম ১৯৬৮ সনে কুলিয়ারচর হাইস্কুল থেকে এস,এস, সি পাশ করে ১৯৭০ সালে ভৈরব হাজী হাসমত কলেজ থেকে আই,এস, সি পাশ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে চাকরির জন্য এয়ারফোর্স এর ডি,ডি পাইলট হিসাবে ইন্টারভিউতে অংশগ্রহন করেন। এরিমধ্যে ২৫ মার্চ ১৯৭১ এ-পাকবাহিনী ঢাকা রাজধানীসহ সমগ্র বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল আক্রমন চালালে অকুতোভয় এই সেনানী চাকুরীর মায়া ত্যাগ করে আত্নীয় স্বজন ছেড়ে দেশের সীমান্ত পার হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন।

মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীর অন্যতম সেক্টর ২ এর সেক্টর কমান্ডার কিশোরগঞ্জের কীর্তিমান মেজর এ,টি,এম হায়দার বীর উত্তম এর নেতৃত্বে ভারতের মেঘালয় ট্রেনিং ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। শহীদ সেলিমের পিতা ছিলেন কুলিয়ারচর থানার সদর স্যানেটারী অফিসের একজন পিয়ন। তিন ছেলে এবং ছয় মেয়ের মধ্যে শহীদ সেলিম ছিলেন জৈষ্ঠ্য পুত্র। স্বাধীনতা উত্তর বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বিরত্বের জন্য তাকে ‘মরণোত্তর’বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।শহীদের মাতা শহীদ জননী মোসাম্মদ নূর বানু প্রতিবেদক গবেষককে জানান-তিন ছেলের মধ্যে একজন শহীদ অন্যজন কুলিয়ারচর থানার অফিসে বেসরকারী ভাবে একজন সহযোগী রাইটার হিসেবেকাজ করেন। বোনদের মধ্যে একজন হোসনেয়ারা বেগম বর্তমান সময়ে একজন মহিলা জর্জ হিসাবে কর্মরত আছেন। তার স্বামী মীর মোঃ রুহুল আমিন তিনিও একজন জর্জ হিসাবে বাংলাদেশে চাকুরীরত রয়েছেন। বর্তমান প্রজন্ম বীর প্রতীক শহীদ সেলিমের নাম জানেনা তার ছবি এর আগে কোথাও ছাপেননি। কুলিয়ারচর থানা ও প্রেসক্লাব সংলগ্ন স্থানে ‘শহীদ সেলিম স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও পাঠাগার স্থাপিত হয়ে নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে।

 শহীদ সেলিম স্মৃতি সংসদ এর পাশেই সরকারি অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে’শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ’। এটি উদ্ভোদন করেন তৎকালীন স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী ভৈরবের কীর্তিমান পুরুষ জিল্লুর রহমান। উল্লেখ্য যে, ২৬ নভেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর মাত্র বিজয় দিবসের ২০ দিন আগে ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর থানার নিকটবর্তী প্যারাভাঙ্গা গ্রামে যে, বীর সেনানী শহীদ হয়েছিলেন সেখানে শহীদ খায়রুলের লাশ পাওয়া গেলেও শহীদ সেলিমের লাশের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি।

লিখেছেনঃ প্রিন্স রফিক খাঁন