বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য দায়ী ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। অযোধ্যা তথা রাম জন্মভূমি মামলার রায় প্রকাশের ঠিক আগে এই মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের নামজাদা ভারত বিশেষজ্ঞ ও লেখক ক্রিস্তফ জেফ্রলে। এই মামলার রায় ভারতীয় নেতাদের সামনে মুসলিম সম্প্রদায়কে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার একটা সুযোগ বলেই মনে করেন তিনি। আবার ভারতের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ প্রসঙ্গে নেহরু-গান্ধী পরিবারের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে এই ফরাসি বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর ওই পরিবারের কেউ কংগ্রেসের নেতৃত্বে না থাকার কারণেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। একই সঙ্গে ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুল গান্ধীকেই কংগ্রেস তুলে ধরতে চায় বলেও জেফ্রলের ধারণা।

 প্যারিসের সায়েন্সেস পো প্রতিষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও ইতিহাসের অধ্যাপক ক্রিস্তফ। ভারতের রাজনীতি নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন তিনি। তার মতে, শাহ বানু মামলা থেকে শুরু করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দাবি মেনে অযোধ্যার মসজিদ খুলে দেয়া, একের পর এক জটিল সিদ্ধান্তে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটল তৈরি করেছিলেন রাজীব। তাছাড়া ফৈজাবাদে নিজের নির্বাচনী প্রচার শুরুর সময় ওই শহরকে ‘রামের জন্মভূমি’ বলে ঘোষণা করেন তিনি। তাই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য তাকেও পরোক্ষভাবে দায়ী বলাই যায়।

 ক্রিস্তফের ধারণা, অযোধ্যা মামলার রায় বেরুনের পর রাম জন্মভূমি আন্দোলন শুরুর আগে নতুনভাবে নানা দিক বিবেচনা করা উচিত সংঘ পরিবারের। কারণ, তার মতে, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেই এই আন্দোলনের ব্যাপারে নিজেদের বিরক্তি স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারতর মধ্যবিত্ত শ্রেণী। অন্যদিকে এই মামলায় মুসলিম পক্ষ পরাজিত হলে তাদেরও ফের পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রেও সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপি’র গুরুত্ব একেবারে শেষ হয়ে গেছে বলে মানতে নারাজ ক্রিস্তফ। তার মতে, কেবল সংখ্যালঘু বিরোধিতার এজেন্ডা দিয়েই বিজেপিকে বিচার করা যায় না। কংগ্রেসের দুর্বলতার কারণে বিজেপি দিল্লির ক্ষমতায় ফিরতে পারে। এ অবস্থায় বিহারের আগামী বিধানসভার নির্বাচন ওই দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইউপিএ জোট ভবিষ্যতে ফের দিল্লির ক্ষমতায় এলে রাহুল গান্ধীই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে অনুমান এই ফরাসি লেখকের। তার কথায়, কংগ্রেসের এখন আবার নেহরু-গান্ধী পরিবারের একজনকে প্রয়োজন। ওই পরিবারের সদস্যরা নেতৃত্ব না দিলে কংগ্রেসে গোষ্ঠীকোন্দল বেঁধে যায়। আর এ প্রসঙ্গেই ক্রিস্তফ উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।

তার দাবি, আত্মঘাতী হামলায় রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর নেহরু-গান্ধী পরিবারের কেউ নেতৃত্বে ছিলেন না বলেই মমতা ও শারদ পাওয়ার কংগ্রেস ছেড়েছিলেন।