কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই গ্রামের ব্যবসায়ী তরিকুল (৪৫), তাঁর বন্ধু আবদুল হকসহ পাঁচজন ঢাকায় যাবেন ব্যবসার কাজে। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর আসন-নম্বরহীন পাঁচটি টিকিট পেলেন। বাধ্য হয়ে তাঁদের কিশোরগঞ্জ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার পথ দাঁড়িয়ে ঢাকায় যেতে হবে।ব্যবসায়ী তরিকুল বলেন, ‘এমনে খাড়ইয়া খাড়ইয়া (দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে) যাইতে যাইতে আমরার জান শ্যাষ। এইডা আন্তনগর এক্সপ্রেস না, খাড়া এক্সপ্রেস নাম দিলে ভালা হইত।’ এভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন গড়ে ছয় শতাধিক যাত্রী এগারসিন্দুর আন্তনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাতায়াত করছে।

যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপে সিট পাওয়া যাত্রীরাও স্বস্তিতে ট্রেনে চড়তে পারছেন না। প্রতি মাসে প্রায় ১৮ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে, যার সিংহভাগই আসে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের কাছ থেকে। এত লাভজনক ট্রেনে যাত্রীসেবা এবং আসনসংকট দূর ও টিকিট কালোবাজারি বন্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ—এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এদিকে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন ও যাত্রী সূত্রে জানা গেছে, গত জুনে আন্তনগর ট্রেনটির একটি শোভন শ্রেণীর বগি এবং ১২ জুলাই প্রথম শ্রেণীর একমাত্র বগিটি প্রত্যাহার করার পর যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে। পরবর্তী সময়ে ২০ জুলাই প্রথম শ্রেণীর বগিটি সংযোজন করা হলেও তাতে কিশোরগঞ্জের জন্য ২৯টি সিট বরাদ্দ রাখা হয়। তার পরও যাত্রীরা প্রথম শ্রেণী, শোভন ও শোভন চেয়ার শ্রেণীর টিকিটও পাচ্ছেন না। তাঁরা অভিযোগ করেন, রেল কর্মচারীদের যোগসাজশে নির্ধারিত টিকিটের দুই-তৃতীয়াংশই কালোবাজারে চলে যায়।

এ কারণে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট উচ্চমূল্যে কিনছেন।কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না টিকিট কালোবাজারিদের। আদালতের অভিযানের কয়েক দিন কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য বন্ধ থাকে। পরে আবার চক্রটি বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে টিকিট ও বগি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এলেও গত এক বছরে ট্রেনটির বগি ও টিকিট না বাড়িয়ে উল্টো টিকিট ও বগি কমিয়ে দিয়ে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার অমৃত লাল সরকার জানান, বগি প্রত্যাহার করায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। কারণ, শোভন শ্রেণীর টিকিটের চাহিদা আছে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০টি। এর মধ্যে বরাদ্দ আছে মাত্র ১৭০টি। শোভন চেয়ারের চাহিদা আছে ১৫০ অথচ বরাদ্দ মাত্র ৭০টি। প্রথম শ্রেণীর জন্য ন্যূনতম ৬০টি আসনের বিপরীতে আছে মাত্র ২৯টি। পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দ না থাকায় যাত্রীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, ছয় শতাধিক যাত্রীকে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, টিকিটের কালোবাজারি রোধে প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী হাকিম আবদুল্লাহ আল-মাসুদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছেন।বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. সুলতান আহম্মেদ জানান, ট্রেনে বগির স্বল্পতা রয়েছে। তাই অন্য ট্রেনে বগি সংযোজন করতে গিয়ে সমস্যা ও সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম শ্রেণীর বগিটি ইতিমধ্যে সংযোজন করা হয়েছে। অন্য বগিটি কিছুদিন পর সংযোজন করা যাবে। তা ছাড়া আরও বগি সংযোজনের চিন্তাভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

-সাইফুল হক মোল্লা