এক দুঃস্বপ্নে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দু’হাত দিয়ে চোখ কচলাতে লাগলাম। ওমা! একি কাণ্ড! আমার সমস্ত মুখ জুড়ে নরম নরম কী যেন লেপ্টে রয়েছে। একটু একটু চুলকাচ্ছেও। আমি চোখ না মেলেই মুখ থেকে নরম বস্তুগুলো আনার চেষ্টা করলাম। হাত মুঠ করে চোখের সামনে আনতেই বিষ্ময়ে আমার চোখ যেন কপালে উঠার মত অবস্থা হল। এ যে কয়েক’শ ছারপোকা! হাতের মধ্যে কিলবিল করছে। ছারপোকার ওপরে ভারী রাগ হতে লাগলো। মনে মনে পরিকল্পনা করলাম সবগুলোই জ্বালিয়ে মারব। যেই কথা সেই কাজ। কাগজে মুড়িয়ে দেশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে মারলাম। কিন্তু পরক্ষণেই আমার ভিতরে একটু খটকা লাগলো-এতো ছাড়পোকা এল কোথা থেকে? এর আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হল না। যাইহোক সামান্য ছাড়পোকার জন্য মূল্যবান সময় নষ্ট করতে মোটেও ইচ্ছুক ছিলাম না।ছারপোকা

ফ্রেস হয়ে প্রাত্যহিক অফিসের কাজ সম্পন্ন করলাম। বাতরুমের আয়নার সামনে গিয়েসিগারেট ধরিয়ে গুণগুণ করে গান ধরলাম। খুব ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল ভাল একজন কণ্ঠশিল্পী হওয়ার, কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে আমার জিহ্বাটি একটু ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় আমার সে স্বপ্নটি এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। স্বপ্নপূরণ যেন আকাশ কুসুম কল্পনা! কেননা, একটি শব্দ দুবার তুতলাতে তুতলাতে উচ্চারণ করি। এখনও তো ভাল করে কথাই বলতে পারি না, আবার গান! কাজেই জাতীয় শিল্পী হতে চেয়ে হয়ে ওঠলাম বাতরুম শিল্পী!

পেট তখন ক্ষুধায় প্রচণ্ড চু চ করছিল। সকালের নাস্তা তখনো প্রস্তুত হয়ে ওঠে নি। তাই হালকা কিছু খাবার খাওয়ার জন্য চিড়ার বোয়ামে হাত দিলাম। চিড়ার লাড্ডু বের করে আনতেই পুনরায় অবাক হয়ে গেলাম। সমস্ত লাড্ডু জুড়ে ছারপোকা! এখন আর ছারপোকার ওপর নয়, বরং বোন আর মায়ের ওপর রাগ হতে লাগলো। কেন যে সবকিছু পরিষ্কার করে রাখে না! তাহলেই তো আর এসব বাসা বাঁধে না। নাস্তা না করেই বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। অফিসে বসে ফাইল দেখছি। হঠাৎ আমার চোখ পড়ল আমার পায়ের দিকে। কী পোকা যেন লাইন ধরে আমার পায়ের দিকে আসছে। প্রথমে মনে হল পিঁপড়া জাতীয় কিছু হবে। কিন্তু ভাল করে দেখলাম পিঁপড়ে নয়, ছারপোকা। এত তুচ্ছ বিষয় অফিসের অন্য কাউকে বললে খুবই খারাপ ভাববে, কিংবা আমায় নিয়ে হাসাহাসি করবে এই মনে করে আর কারও কাছে বিষয়টি শেয়ার করলাম না। অদ্ভুত ঘটনার অদ্ভুত শিহরণ নিয়ে বাসায় ফিরি।

পরদিন। সকালবেলা। অফিসে বসে গভীর মনোযোগ দিয়ে ফাইলপত্র দেখছিলাম। এমন সময় অফিসের বুয়া চা বিস্কিুট নিয়ে এল। চা হাতে নিতেই আমার চোখ পড়ল ভাঙ্গা বিস্কিটের প্রতি। দেখলাম ভাঙ্গা বিস্কিট বেয়ে বেশ কিছু ছারপোকা উপড়ে ওঠছে। আমি বুয়াকে ধমক দিয়ে বললাম- ই ই ইতা খি খিতা গো?

– কিতা অইছে ছার?
– তো তো তোমার বিস্কিটের মধ্যে উরস খেনে?
– খানো উরস?
– ঐ তো
হাত দিয়ে দেখাতেই দেখি ছারপোকা নেই। কী আশ্চর্য! এই মাত্রই তো দেখলাম। গেল কোথায়? বিস্কিট ভাল করে ওলটপালট করি, কিন্তু কোথাও আর ছারপোকা খুঁজে পেলাম না। তখন বুয়া হেসে বলে- ছার, সখালো কিচ্চু খাইছইন নি? পেটো বুগ থাখলে মানুষ চোউখো থুরা উলটপালট দেখইন।
– না রে গো। খাইছি। আইচ্ছা, তুমি চা বিস্কিট রাকিয়া যাও। সময় খরি খাইমুনে।
– জে আইচ্ছা।

বুয়া চলে যাওয়া মাত্রই মুঠোফোনে চৈতির কল আসে। ক্ষণমুহূর্তইে আমার শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। কম্পিত হাতে আমি রিসিভ করি।
– হ্যালো?
– তুমার খারনে গতখাইল … তোমার অবৈধ বাচ্চার ব্রুণ নষ্ট করছি। খিতা অপরাধ আছিল এই অনাগত বাচ্চার? জন্ম দিতায় ফাড়, পরিচয় দিতায় ফার না খেনে? খিতার লাগি চাপ দিয়া ই বাচ্চার ব্রুণ নষ্ট খরাইলায়? তুমার বালা অইতনায়। আমি মরি গেলে-

কথাটি শেষ না হতেই আমি কলটি কেটে মোবাইল বন্ধ করে দেই। কিন্তু ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড দগ্ধ হতে থাকি। রোদ্রে দৌঁড়ানো ব্যক্তির মত ঘামতে শুরু করলাম। খুব তৃষ্ণা পাচ্ছিল। টেবিলের একপাশে রাখা গ্লাসটি হাত দিতেই দেখি গ্লাসের শরীর বেয়ে ছারপোকা ওঠছে। ফাইলের দিকে তাকাই দেখি সেখানেও লাইন ধরে ছারপোকা আমার দিকে আসছে। জুতার দিতে তাকাতেই দেখি আমার সাদা প্যান্টের শরীর বেয়ে সারিবদ্ধভাবে ছারপোকারা মুখের দিকে ওঠে আসছে। অদ্ভুত অতিপ্রাকৃত ছারপোকার মুখোমুখি হতেই ভয়ার্ত স্বরে আমার মুখ থেকে বেরিয়ে গেল একটি শব্দ- উহ্!


লিখেছেনঃ  মুনশি আলিম, শিবগঞ্জ, সিলেট
২৯.১০.২০১৪