নৌকা ভাসবে পানির ওপর, এটাই নিয়ম। এই নৌকাটাও সুদূর অতীতে ভেসেছিল পানির ওপর। একসময়এসে আর পারেনি। জলের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গিয়ে ডুবে যায়। তাও শুধু পানিতে ডুবে না হয় হতো, নৌকাটি ডুবতে ডুবতে ডুবে যায় একেবারে বালুর নিচে। গত বছর জুলাইয়ের প্রথম দিকে সমুদ্রের ফুঁসে ওঠা জোয়ারে কুয়াকাটা সৈকতের ঝাউবনসংলগ্ন এলাকার বালু যখন ধুয়ে যায়, তখন আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারেনি নৌকাটি। কঙ্কালকাঠামো নিয়ে জানান দেয় নিজের উপস্থিতি। নজরে পড়ে স্থানীয় লোকজনের। খবর পৌঁছায় প্রত্নতত্ত্ববিদদের কানে। ছুটে আসেন তাঁরা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ও খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ২৪ জানুয়ারি শেষ হয় এর উদ্ধারকাজ।
নৌকা না জাহাজ?
নৌকাটি তোলার পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা এটিকে নৌকা বলতে রাজি নন। তাঁরা জানান, এটি একটি স্ক্রুনার জাহাজ (সমুদ্রগামী ছোট পালতোলা জাহাজ)। এর ওপরের অংশ আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এর দৈর্ঘ্য ৭২ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট এবং উচ্চতা সাড়ে ১০ ফুট। এর আদল বহু পুরোনো। এর উদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, এটি নির্মাণে ব্যবহূত হয়েছে গর্জন অথবা শালকাঠ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফরাসি নৌকাবিশেষজ্ঞ ইভ মারের মতে, ওকগাছের কাঠ দিয়ে এই নৌকাটি নির্মিত। দীর্ঘদিন মাটির নিচে আটকে থাকলেও এর কাঠগুলো ভালো রয়েছে। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, নৌকাটির প্রতিটি কাঠ আড়াই থেকে তিন ফুট পুরু এবং কাঠগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি জোড়া লাগানো হয়েছে দুই থেকে তিন সেন্টিমিটার পুরু পিতলের পাত দিয়ে। এতে নিদর্শন পাওয়া গেছে দুটি মাস্তুলেরও।
কী ছিল নৌকার ভেতর?
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শিরিন আখতারের নেতৃত্বে পরিচালিত খননকাজ শেষ করার পর নৌকাটির ভেতর থেকে পাওয়া গেছে লোহা ও তামার তৈরি ছোট-বড় পেরেক, নারকেলের মালা, নারকেলের ছোবড়ার তৈরি রশি, ভাঙা মৃৎপাত্রের টুকরা, লোহা আর দস্তার তৈরি ব্যালাস্ট, ধানের চিটা, পাটের তৈরি ছালার (চট) নিদর্শন, পাটকাঠি, মাদুরের অবশেষ, লোহার শিকল ও তামার পাত।
নেছারউদ্দিন আহমেদ