alternative-medicine-systemsবর্তমান সরকার ইউনানী, আয়ুর্বেদীয় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করে আন্তরিকভাবে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে ইউনানী, আয়ুর্বেদীয় ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে সরকার মূল ব্যবস্থাপনায় একীভূত করেছে। এই কার্যক্রমকে সফল করতে চিকিৎসকসহ সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার এর উদ্যোগে ইউনানী ও আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা সেবা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃতিকরণ ও উন্নয়নের লক্ষে সকল সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের সম্পৃক্ত করে অবহিতকরণ কর্মশালার মাধ্যমে এর প্রসার কর্মসূচীও বাস্তবায়িত হয়েছে।

দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি) অপারেশন প্লান্টে ২শ’ ৮৬ জন মেডিকেল অফিসার, লেকচারার ও কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য গত ১২ মার্চ ২০১৩ তারিখে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন স্বাস্থ্য জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচির (এইচপিএনএনডিপি) আলোকে অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার অপারেশন প্লান্টে চিকিৎসক নিয়োগ নিয়েও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই সেক্টরে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেও অনিয়ম দুর্নীতি আর স্বজন প্রীতির মাধ্যমে সেখানে চিকিৎসক নিয়োগেও নাকি ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। ফলে বাদ পড়েছে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ ও মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থীরাও।

নিয়োগ বঞ্চিত চিকিৎসকদের অভিযোগ ছিল,‘নিয়োগে ৭৫টি পদ শূন্য থাকলেও মেধাবী চিকিৎসকদের বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষার জন্য দেয়া প্রবেশপত্রে ৭ জুন ২০১৪ তারিখে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও ঐদিন শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। এর ফল প্রকাশ করা হয় তারও একমাস পর। তাদের মতে, অনিয়ম আর দুর্নীতি করতেই এই দীর্ঘসূত্রিতা। এমনকি ১ থেকে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের পাশ করিয়ে, অনেককে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় যাদের অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে তারা খাতা পুনঃমূ্ল্যায়নের আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পান নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১১ সালে দেশের ৪৫টি জেলা সদরের হাসপাতালের বহিঃ বিভাগ হতে মোট রোগীর ২০% রোগী অল্টারনেটিভ মেডিকেল কেয়ার (এএমসি) চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছেন।

এবার আসি মাঠ পর্যায়ের কিছু বাস্তব পর্যবেক্ষণে। একাধিক উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, অফিস চলাকালীন সময়ে হোমিও চিকিৎসক সময় কাটাচ্ছেন চায়ের স্টলে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সেবা প্রচারণার জন্য রয়েছে শুধুমাত্র একাধিক ফেস্টুন। কোন রোগী নেই। হাসপাতালে রেজিস্টার্ড হোমিও চিকিৎসকদের সেবার সম্পর্কে কমিউনিটি পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে সফলতার সাথে হোমিও প্র্যাকিটিস করে আসা কিছু বিজ্ঞজনদের সাথে কথা বললে তারা জানান,‘আমরা খুশি যে সরকার উপজেলা পর্যায়ে রেজিস্টার্ড হোমিও চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু তারা তো রোগীই পান না। আর রেজিস্টার্ড চিকিৎসক হিসেবে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মানও প্রত্যাশিত পর্যায়ে নেই।

শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে উপজেলা পর্যায়ে সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ,উপকরণও সরবরাহ নেই, নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। কমিউনিটি পর্যায়ে নেই কোন প্রচার-প্রচারণা। শুধু শুধু একজন মানুষকে বেতন দিয়ে পুষে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় কি দুর্নীতিরই নামান্তর নয়?

অবশেষে, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট নীতি-নিরার্ধকদের কাছে প্রত্যাশা, বাংলাদেশের গ্রাম-বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে চলে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে প্রান্তিক মানুষের কাছে উৎকৃষ্ট উপায়ে পৌঁছে দেবার এ শুভ উদ্যোগ যেন, কোন অব্যবস্থাপনা বা অপরিকল্পনার কারণে বিফলে না যায় বা রেজিস্টার্ড এএমসি চিকিৎসকদের সেবার মান নিয়ে যেন জনমনে কোন সন্দেহের বিস্তার না ঘটে, সে তাঁরা ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

সুমিত বণিক,
উন্নয়নকর্মী, ঢাকা।