বাংলাদেশের বন্য প্রাণীর তালিকায় আরও একটি নতুন পাখি যুক্ত হলো। এর ইংরেজি নাম ‘সাইক্সেস ওয়ার্বলার’ এবং বৈজ্ঞানিক নাম হিপোলেস রামা। পাখিটির বাংলা নাম রাখা হয়েছে ‘সাইক্সের ফুটকি’। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের উদ্যোগে বাইক্কা বিলে গবেষণা করার সময় পাখিটি ধরা হয়। পাখিটির সর্বাঙ্গের মাপজোখ ও আলোকচিত্র দেখে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিতভাবে একে সাইক্সের ফুটকি হিসেবে শনাক্ত করেছেন। এ দেশে সাইক্সের ফুটকি যে থাকতে পারে, তা এর আগে একেবারেই অজানা ছিল। বাংলাদেশকে এ পাখির আবাস হিসেবে কোনো চেক-লিস্ট, বই অথবা জার্নালে এর আগে উল্লেখ করা হয়নি।
ফেব্রুয়ারি মাসে হাকালুকি হাওরে পাখি-শুমারির সময় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ছোট ধলাকপাল রাজহাঁস দেখা যায় (প্রথম আলো, ২ মার্চ ২০১১ দ্রষ্টব্য)। শুমারি শেষে বন বিভাগের অনুমতি ও আইপ্যাকের সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব বাইক্কা বিলে পাখির পায়ে আংটি দেওয়ার কাজ শুরু করে। এ কাজের শুরুতেই আবার একটি নতুন পাখি ‘আবিষ্কার’ করাটা ছিল গবেষকদের কাছে একেবারেই আশাতীত ও অত্যন্ত উদ্দীপনাময়।
সিলভিডি পরিবারের একদল ছোট পাখির জনপ্রিয় বাংলা নাম ফুটকি এবং ইংরেজি নাম ওয়ার্বলার। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৩৩ প্রজাতির ফুটকি দেখা গেছে। সাইক্সের ফুটকি খুবই ছোট একটি পাখি; দৈর্ঘ্যে চার থেকে পাঁচ ইঞ্চি, ওজন ১০ থেকে ১১ গ্রাম। পোকামাকড় বিশেষ করে শুঁয়োপোকা ও মাকড়সা এর প্রিয় খাবার। বুটপা ফুটকির সঙ্গে অনেক মিল থাকলেও দীর্ঘতর ঠোঁট ও লেজ এবং সরু ভ্রুলেখা দেখে একে শনাক্ত করা সম্ভব, তবে সহজ নয়। পর্যবেক্ষকেরা জানিয়েছেন, দেহের ছোট ছোট স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছাড়াও আবাসস্থল, গান ও অন্যান্য আচরণে বুটপা ফুটকির সঙ্গে সাইক্সের ফুটকির পার্থক্য রয়েছে।
পাখিবিদ কর্নেল উইলিয়াম সাইক্স ১৮৩২ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত থেকে এ পাখির নমুনা এনে একে নতুন প্রজাতি হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন। তাঁর বই ক্যাটালগ অব বার্ডস অব ডেকান-এ পাখিটির কথা প্রথম লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তীকালে এটি বুটপা ফুটকি পাখির একটি উপপ্রজাতি বলে প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার পর সম্প্রতি পাখিটি আবার স্বতন্ত্র প্রজাতির স্বীকৃতি পেয়েছে এবং সাইক্সেস ওয়ার্বলার নামে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
এশিয়া ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও সাইক্সের ফুটকি নেই। এ মহাদেশেও এর বিচরণভূমি অত্যন্ত সীমিত। এত দিন দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতই পাখিটির একমাত্র শীতের আবাসস্থল বলে গণ্য করা হতো। এর সঙ্গে এখন বাংলাদেশের নাম যুক্ত হলো। গ্রীষ্মে প্রজননের উদ্দেশ্যে এ পাখি ভলগা, কাজাখস্তান, জিনজিয়াং, ইরান, আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান ও ওমান চলে যায়। এপ্রিল-জুন মাসে ঝোপঝাড়ে নরম কাঠি ও পাতা দিয়ে এরা ছোট্ট বাটির মতো বাসা বানিয়ে চার-ছয়টি ডিম পাড়ে। পারস্য উপসাগরের প্যারাবনেও এ পাখির বাস রয়েছে বলে জানা গেছে। তাই সুন্দরবনেও এর বাস থাকা অসম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব পাখি ধরে মাপজোখ নেওয়া, ছবি তোলা ও পায়ে আংটি পরানোর যে প্রক্রিয়া সম্প্রতি শুরু করেছে, এর ফলে সাইক্সের ফুটকির মতো আরও নতুন পাখি এ দেশের তালিকায় যুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।
লিখেছেন-ইনাম আল হক