কিশোরগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের অচলাবস্থা কাটেনি। প্রতিদিন বহির্বিভাগ থেকে তিন শতাধিক রোগী বিনা চিকিৎসায় ফিরে যাছে। অস্ত্রোপচারের কার্যক্রম মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে।
গত ১৫ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ২২ জন চিকিৎসককে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকে হাসপাতালের চিকিৎসাকার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে হাসপাতালের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেছেন কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালে প্রেষণে কর্মরত ২২ জন চিকিৎসককে মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে গত ১৫ মার্চ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কিন্তু কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রেষণে ঢাকায় কর্মরত পাঁচজন চিকিৎসক এখনো জেলার বাইরে অবস্থান করছেন। ফলে কিশোরগঞ্জে চিকিৎসক-সংকট বেড়ে গেছে। জানা গেছে, হোসেনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত অবেদনবিদ নাসরিন আক্তার ২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি প্রেষণে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে, অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হাবিবুল হাই মাসুদ ২০০৯ সালের ১৩ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রফিকুল ইসলাম ২০০৩ সালের ৯ আগস্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পাকুন্দিয়ায় কর্মরত এস এম শফিকুল আলম ২০০৩ সালের ৯ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনিষ্ঠ পরামর্শক (সার্জারি) ত্রিদ্বিপ কান্তি বর্মণ ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রেষণে কর্মরত রয়েছেন।
হাসপাতাল চত্বরে দেখা হয় সদর উপজেলার মহিনন্দ গ্রামের লোকমান আলীর (৪২) সঙ্গে। তিনি হূদেরাগী। চিকিৎসকের স্বল্পতা ও ভিড় দেখে চিকিৎসা না নিয়ে তিনি চলে যান।
করিমগঞ্জের মরিচখালী থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল হাই (৩৫) সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন প্রসূতি ওয়ার্ডে। চিকিৎসকের সংকট ও একাধিক অস্ত্রোপচারের রোগী দেখে তিনি ফিরে যান। তিনি জানান, বাইরে কোনো বেসরকারি ক্লিনিকে স্ত্রীকে ভর্তি করাবেন।
সরেজমিনে ৫০ জন রোগী ও দর্শণার্থীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও কর্মচারী না থাকায় রোগীরা খুব অসহায় বোধ করে। জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানায় তারা। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল মজিদ জানান, বর্তমানে চিকিৎসক-সংকটই প্রধান। কারণ, প্রতিদিন বহির্বিভাগ ও আন্তবিভাগে অন্তত দুই হাজার রোগীকে ২৪ জন চিকিৎসকের পক্ষে চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন দীন মোহাম্মদ জানান, জেলার প্রধান এই চিকিৎসাকেন্দ্র চালাতে ৮৭ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। বর্তমানে ২২ জন চিকিৎসক না থাকায় ২৪ জন চিকিৎসককেই সবকিছু সামলাতে হচ্ছে। জেলার সাংসদ, স্পিকারসহ স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্যার সমাধানের জন্য লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।