মার্কিন বিজ্ঞানীরা এইডসের ভাইরাস এইচআইভি নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা ধরণের গবেষণা৷ বছরের পর বছর ধরে চালানো এই গবেষণার সুফল কিছুটা হলেও পাওয়া গেছে৷

অ্যামেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজ সংক্ষেপে এনআইএইড-এর বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা বেশ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন জার্মান গবেষকরা৷ তাঁরা জানিয়েছেন, এ মাসের শুরুতে যে অ্যান্টিবডি মার্কিন বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন তা এইচআইভির ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাকে প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস করবে৷ সহজ কথায় এইচআইভি ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা রাখবে এই অ্যান্টিবডি৷ এইডসের ভাইরাস – এইচআইভি নিয়ে গবেষণায় নিঃসন্দেহে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেল চিকিৎসা বিজ্ঞান৷

ইন্সটিটিউটের প্রধান এ্যান্থনি ফাওসি গর্বের সঙ্গে বলেন, এইডসের প্রতিষেধক বের করায় এই গবেষণা একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে৷   

প্রশ্ন, এই অ্যান্টিবডি এতদিন পর কোথা থেকে এল ? বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন এইডস রোগী নিয়ে তারা সারাক্ষণই গবেষণা করে যাচ্ছেন৷ একজন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের দেহের কোষ থেকে এই অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করা হয়েছে৷ তবে তাঁর নাম-পরিচয় কেউ জানে না৷ বিজ্ঞানীরা তাঁকে চেনেন ডনর ৪৫ হিসেবে৷ তিনি তাঁর রক্ত দিয়েছিলেন পরীক্ষা করার জন্য৷ এইচআইভির বিস্তার রোধে মার্কিন বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন নতুন একটি অ্যান্টিবডি

জার্মানির হানোফার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজিস্ট অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিষয়ক বিজ্ঞানী গিওর্গ বেরেন্স জানালেন, এই অ্যান্টিবডি খুঁজে পাওয়া এইচআইভি গবেষণায় কোন ধরণের সাফল্য বয়ে এনেছে,‘‘ আমি মনে করি এই অ্যান্টিবডি চিহ্নিত করা এইচআইভি প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ তবে সমস্যা হল যে বা যারা এইচআইভিতে আক্রান্ত তাদের দেহেই এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয় কিন্তু তা কোন কাজ করে না৷ কারণ এইচআইভির ক্ষমতা এত বেশি যে, যে কোন ধরণের অ্যান্টিবডিকে ভাইরাসটি নষ্ট করে দিতে পারে৷”

গত কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চালানো হচ্ছে এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য৷ এই অ্যান্টিবডি এইচআইভিতে আক্রান্ত নয় এমন মানুষের শরীরেও প্রবেশ করানো হয়েছে৷ দেখা গেছে যারা এইচআইভিতে আক্রান্ত তাদের দেহেই অ্যান্টিবডি কাজ করছে৷ এক্ষেত্রে বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে গেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান কিন্তু অনেকেই মনে করছে শেষ পর্যন্ত অ্যান্টিবডি আর যাই হোক এইডস নিরাময় করতে পারবে না কারণ এইচআইভি ভাইরাস অত্যন্ত কঠিন ও জটিল এক ভাইরাস৷ এই ভাইরাসটি যে কোন ওষুধ, প্রতিষেধক এবং অ্যান্টিবডি নষ্ট করার ক্ষমতা রাখে৷

তবে মার্কিন বিজ্ঞানীরা যা আবিষ্কার করতে পেরেছেন তা হল শরীরের এমন একটি জায়গায় অ্যান্টিবডি প্রবেশ করাবেন যেখানে এইচআইভি সেলগুলো নষ্ট করতে পারে না৷ এবং সেখান থেকেই অ্যান্টিবডি তার কাজ করবে, এইচআইভি চাইলেও অ্যান্টিবডিকে বা সেলগুলোকে নষ্ট করতে পারবে না৷ তবে তা শরীরের অন্তঃস্থলে৷ একটি রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হলেই বাকি রোগীরাও বেঁচে যাবে৷

এই অ্যান্টিবডি হচ্ছে এক ধরণের প্রোটিন যা মানবদেহেই উৎপন্ন হয়৷ সে প্রসঙ্গে গেওর্গ বেরেন্স বললেন, ‘‘এটা হচ্ছে বিশেষ এক ধরণের প্রোটিন যা আমাদের শরীরেই তৈরি হয়৷ এই প্রোটিনই আমাদের অন্যান্য সব ধরণের ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখে৷ জ্বর, কাশি থেকে যে সব ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তা প্রতিরোধ করে এই প্রোটিন৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, এই প্রোটিন এইচআইভি থেকে যে কোন দেহকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে কিনা৷ এই অ্যান্টিবডি একাই যথেষ্ঠ কি না৷ খুব সম্ভবত নয়৷ তবে এই প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূ্র্ণ কারণ অনেক বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করছেন যে এই প্রোটিনই এইচআইভির সংক্রামণ রোধ করতে সক্ষম৷ ”

তবে এই প্রোটিন এইডস ধরা পরার কতদিন পর এবং রোগের কোন পর্যায়ে কাজ করবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক৷ তবে আশার কথা হল এই অ্যান্টিবডির সাহায্যেই হয়তো এমন একটি ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিস্কার করা সম্ভব হবে যা এইডস রোগীকে সুস্থ করে তুলবে৷ প্রতিষেধক আবিষ্কারে ঠিক কোন ধরণের ভূমিকা এই এন্টিবডি বা এই গবেষণা রাখবে ? গেওর্গ বেরেন্স জানান,‘‘ আমরা শুধু আশা করতে পারি৷ আমরা আশাবাদী৷ কারণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল কিভাবে অন্তত একটি মানব দেহে এক বা একাধিক অ্যান্টিবডি তৈরি করা যায়৷ কারণ সবগুলো অ্যান্টিবডি যদি একসঙ্গে  কাজ শুরু করে তাহলে যে কোন মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে আরো অনেক বেশি৷ দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে মানুষ এমন কি এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগীও৷”