বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রামের নাগের গাঁও এলাকায় জন্মগ্রহন করেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপে প্রথম হন। সপ্তম শ্রেনীতে পড়ার সময় তার বাবা মায়ের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হওয়ার কারণে তাকেও ছাড়তে হয় বাড়ি। বিভিন্ন বাড়ি লজিং থেকে ১৯৭০ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বনগ্রাম থেকে চলে গেলেন ঢাকা।

১৯৭২ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে আবারও কৃতিত্বপূর্ণ রেজাল্ট করেন। এরপরই আই,এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থ বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন। ছেলে বেলা থেকেই হুমায়ুন কবির গনিত শাস্ত্র ও গবেষনার প্রতি আকর্ষন ছিল। ফলে ১৯৭৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স পাঠ শেষ না করেই তিনি আমেরিকার পথে পা জমালেন। উদ্দেশ্য এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএস করার জন্য ভর্তি হলেন আরলিংটনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে তিনি অনার্সসহ মাষ্টার্স করেন।তার থিসিসের বিষয় ছিল এয়ারপ্লেন এরোডাইনামিক্স।

হুমায়ুন কবির অস্টিনের টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেন। তার গবেষনার বিষয় ছিল মহাশুন্যযান ও রকেট বিজ্ঞান। বনগ্রামের নাগের গাঁও অজপাড়া গ্রামের এক প্রাইমারী স্কুলে পড়ুয়া বালক বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আজ আমেরিকার আকাশ জয় করে আবিস্কার করেন নতুন নতুন বিমান আর হেলিকপ্তার।

বিশ্ববিখ্যাত এই বিজ্ঞানী তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জ জেলায় তিনি আজও অপরিচিত, অপ্রকাশিত, অনাদৃত। আমাদের সন্তান অথচ আমরা তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানিনা। তার চেহারা ছবি আমরা খুঁজিনা কিংবা চিনিনা। এ যেন চেনা মুখ অচেনা ছবি। কিশোরগঞ্জের সন্তান বাংলাদেশের নাগরিক বাঙালী বিজ্ঞানী ডঃ হুমায়ুন কবির বাংলাদেশের জন্য কিংবা কিশোরগঞ্জের মাতৃভূমির জন্য কিছুই করতে পারছেন না।

এই আক্ষেপ কি নেই তার মনে প্রানে? অবশ্যই আছে, এ বিষয়ে তিনি বাংলাদেশে এসে নিজ গ্রাম নাগের গাঁও বনগ্রামে এসে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন –  বিজ্ঞানী, যে বিষয়ে কাজ করি, সে ক্ষেত্রে আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের জন্য আমি তো অব্যবহার যোগ্য। অবশ্য বিজ্ঞান চর্চা বিষয়ে এবং বিজ্ঞানের প্রসারে আম অবশ্যই এ দেশে কাজে আসতে পারি। কিন্তু এ বাংলাদেশে সেই সুযোগ খুবই কম। আমি যখন ১৯৭৮ সালে আমেরিকায় যাই, তখন বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী ভারতের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিলনা। কিন্তু এত বছর পর দেখেন বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ৫০ বছর এগিয়ে গেছে।এর কারন ভারতবাসী জানে, কিভাবে তারা প্রতিষ্ঠিত হবে। মানব উন্নয়ন আর অর্থনীতি বিজ্ঞান চর্চায় তারা কোথায় কতটুকু যেতে হবে সেই মনসিকতা তাদের আছে যা আমাদের নেই জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় কিংবা উচ্চতর ডিগ্রী আর ব্যবসা বানিজ্যের অর্থনীতিতে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রব্যবিস্থায় সেই লক্ষ এবং পরিকল্পনার খুব প্রয়োজন।

বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আবিষ্কার করেছেন ১৯৮৬ সালে রিমোট নিয়ন্ত্রিত এইচ-৫ হায়েন্স হেলিকপ্তার। বর্তমানে হুমায়ুন কবির যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বোয়িং কোম্পানিতে উর্ধ্বতন বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত। এই দায়িত্ব থেকে তিনি আমেরিকার সরকারের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক বিচিত্র সাময়িকি গ্রন্থে একক এবং যৌথ বিজ্ঞান বিচিত্রা নামে বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবিরের ৩৫ টিরও বেশি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।বিজ্ঞানী হুমায়ুন কবির আমেরিকার আকাশে আমেরিকার হেলিকপ্তার সোসাইটির একজন বিজ্ঞানী এবং আবিস্কারক। আর আমাদের তিনি আপনজন এবং অহংকার। মাটি ও মানুষের কৃতি সন্তান কারো স্বজন , সুজন শুভার্থী।

একমাত্র পুত্র শুভ্র ও তার স্ত্রীকে নিয়ে দূর দিগন্ত বিস্তৃত বনগ্রাম নাগের গাঁও ছেড়ে তিনি আজ অবস্থান করছেন সুদূর আমেরিকা। আমরা তার আরো অনেক অনেক আবিস্কারের প্রত্যাশা করি। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই প্রথম বিজ্ঞানী চালক বিহীন হেলিকপ্তারের আবিস্কারক এবং জনক। হুমায়ুন কবির কিশোরগঞ্জের গৌরব, কিশোরগঞ্জের কীর্তিমান।