বিরলপ্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করে বাংলাদেশের প্রাণিবিদ্যা চর্চার ইতিহাসে নতুনঅধ্যায়ের সূচনা করলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কৃতি শিক্ষার্থী সাজিদ আলী হাওলাদার। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নতুন কোনো প্রাণী আবিষ্কারের রেকর্ড করে বিশ্বের বিখ্যাত বন্যপ্রাণী বিষয়ক জার্নাল জুট্যাক্সাতে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেন এ শিক্ষার্থী।২৬ বছর বয়সী এ তরুণ গবেষক চবির ক্যাম্পাসে প্রাপ্ত বিরল প্রজাতির ব্যাঙ আবিষ্কার করে পরিণত হয়েছেন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রাণী আবিষ্কারক হিসেবে। বাংলাদেশে প্রাপ্ত বা কোনো বাংলাদেশির উভচর, সরীসৃপ বা স্তন্যপায়ী প্রাণী আবিষ্কারের রেকর্ড এটিই প্রথম। তাছাড়া, কোনো সহায়তা ছাড়া একক ব্যক্তি কর্তৃক প্রাণী আবিষ্কার ও আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে লেখা প্রকাশেরও এটি প্রথম ঘটনা। গত ৯ ফেব্র“য়ারি জুট্যাক্সাতে তার প্রাপ্ত ব্যাঙ সম্পর্কিত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়।সাজিদ চবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর আসমতের নামানুসারে তার আবিষ্কৃত ব্যাঙের নাম দিয়েছেন ’ফেজারভারিয়া আসমতি’।

আবিষ্কৃত ব্যাঙ ও প্রবন্ধ প্রকাশ করায় সাজিদকে অভিনন্দন জানিয়েছেন আমেরিকান মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি’র কিউরেটর ড. ড্যারেল ফ্রস্ট। বিশ্বের সরীসৃপ প্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের ক্ষেত্রে সাজিদই সর্বকনিষ্ঠ বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্বে সমাদৃত প্রাণিবিজ্ঞানী ড. ক্রেইগ এডলার সম্পাদিত ইনডেক্স অব অথরস অব হারপেটোলজিক্যাল ট্যাক্সোনমিস্ট’র লেখক ড. জন এস এপলেগার্থ এক অভিনন্দন বার্তায় সাজিদের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানান ও সাফল্য কামনা করেছেন।

২০০৪ সালে চবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন সাজিদ। এরপর থেকে ব্যাঙ, পাখি নিয়ে তার পথচলা। ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাঙের জীবন প্রণালী ও বংশবৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চালান তিনি। এ সময় তিনি ব্যাঙের বংশবৃদ্ধির জন্য হটস্পট হিসেবে পরিচিত চবির কাটাপাহাড় রাস্তার দু’পাশ থেকে বিভিন্ন ব্যাঙের নমুনা সংগ্রহ করতে থাকেন। এরমধ্যে ২০০৮ সালে একদিন পেয়ে যান বিরল প্রজাতির একটি ব্যাঙ। স্বভাবমতো সেটিকে তিনি ব্যক্তিগত সংরক্ষণাগারে নিয়ে গিয়ে এটির প্রজাতি ও প্রকৃতি উদ্ধারের কাজে লেগে যান। কিন্তু সারা বিশ্বে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও তালিকাভুক্ত সাড়ে ছয়শ প্রজাতির মধ্যেও এ ব্যাঙের অস্তিত্ব খুঁজে পাননি তিনি। তারপর শুরু হয় অন্য ধরনের গবেষণা। এ ব্যাঙের ব্যতিক্রমী ডাক ও বৈশিষ্ট্য বের করতে তিনি যোগাযোগ করেন বিশ্বের সেরা সব প্রাণিবিজ্ঞানীদের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে পর্তুগাল, ইটালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় ব্যাঙের ডাকের সাউন্ড এনালাইসিস এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে, এ ধরনের ব্যাঙের অস্তিত্ব একমাত্র বাংলাদেশেই পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে তিনি বিশ্বের সেরা প্রাণিবিজ্ঞানীদের সম্পাদনায় প্রকাশিত বন্যপ্রাণীর শ্রেণীবিন্যাসের কাজে নিয়োজিত জার্নাল জুট্যাক্সাতে এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধ পাঠান। ওই সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষ তার আবিষ্কারের সত্যাসত্য যাচাইয়ের পর চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি প্রবন্ধটি গ্রহণ করেন। এরপর গত ৯ ফেব্র“য়ারি জুট্যাক্সা’র ২৭৬১ ভলিউমে এটি প্রকাশিত হয়।

লিখেছেন ড. মশিউর রহমান