১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন জাতির পিতা নিহত হলেন, তার ঠিক আগের রাজনৈতিক মেরুকরণটা জানা জরুরী। বঙ্গবন্ধু মাইনাস আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। খন্দকার মোশতাককে দিয়ে সেটা নিশ্চিত করা হলো কয়েকমাসের জন্য। সে কয়েকটা মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্তম্ভগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার নীলনকশাটাও চূড়ান্ত হলো। মোশতাকের সিনেমা শেষ হলো নভেম্বরে। জেলে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো চার জাতীয় নেতাকে।
৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের রক্তে লাল হলো সেনানিবাস। আর সে হোলিখেলা চললো আরো ১৫টি বছর। ততদিনে গোলাম আযম ও তার জামাতে ইসলামী পুনর্বাসিত হয়ে গেছে এই বাংলায়। অধিষ্ঠিত হয়ে গেছে পাকিস্তানপন্থীরা। কাগজে কলমে না হলেও এই দেশ পাকিস্তানেরই অংশ, তাদের নির্দেশনাতেই চলে। এখানে দুটো তারিখই লক্ষণীয়। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস, ৭ নভেম্বর রুশ বিপ্লবের বার্ষিকী। মুক্তিযুদ্ধে যাদের রুশ-ভারতের দালাল বলে শ্লোগান দিতো স্বাধীনতাবিরোধীরা, দুটো ল্যান্ডমার্ক তারিখেই তাদের নিশ্চিহ্ন করা প্রায় শেষ।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার ঘোষণা দিয়ে জনগনের ম্যান্ডেট নিয়ে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলো, তখন থেকেই নতুন চক্রান্ত শুরু। বিডিআর বিদ্রোহের মাধ্যমে তাদের প্রথম প্রচেষ্টাটা ভেস্তে গেলো। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে নেই। লন্ডন এবং ওয়াশিংটনে কড়া লবিং চলছে জামাত-বিএনপির তরফে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় এলে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো লাভের গুড় কিভাবে বাটোয়ারায় নেবে তার তালিকাও চূড়ান্ত। একইভাবে আরব দেশগুলোতেও সেই ’৭৫ পূর্ববর্তী প্রচারণা গতি পেয়েছে- আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতা কায়েম করতে চায়। জাল গুটিয়ে আনছে জামাত, খালেদা জিয়ার রোডমার্চে তাই হুমকি আসে আরেকটি ১৫ আগস্ট সমাগত। আসলেই? কবে?
যদি আগের মতো উল্লেখযোগ্য তারিখগুলো আমরা আমলে নেই। তাহলে সম্ভাব্য দুটো তারিখ সামনে আসে। ৩ ডিসেম্বর, যেদিন ভারতকে আক্রমণ করে পাকিস্তান, সুবাদেই মিত্রবাহিনী ঝাপিয়ে পড়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে। ১৩ দিনের মাথায় স্বাধীন হয়ে যায় বাংলাদেশ। এবং সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ তারিখটি ১৬ ডিসেম্বর। এইদিন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের সর্বাত্মক হামলায় নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতায় চলে আসতে পারে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। নানা মাধ্যমেই এই হামলা হতে পারে। জঙ্গী হামলা,আত্মঘাতি হামলা, সেনা অভ্যুথান (মূল স্পন্সর আইএসআইর আর কোনো তরিকা নাই, প্রোপাকিদের একমাত্র ভরসা)। এর মধ্যেই ক্ষমতাসীন মহাজোটের দলগুলোর কথাবার্তায় অন্যরকম আভাস মিলছে। বামপন্থীরা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের সমালোচনায় নেমেছে। বিপন্ন এবং মরিয়া জামাতের কোটি কোটি টাকার মিশনে আওয়ামী লীগের কিছু নেতা কি বিক্রি হননি! মুজিবের ঘনিষ্ঠদের কেনা গেলে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের কেনা এমন কি কঠিন!! এরা নেত্রীর কাছে খবর পৌছতে দিচ্ছেন না। যেমন দিতেন না মুজিবের কাছে। তাকে জানাচ্ছেন সব ঠিকঠাক আছে, যেমন জানাতেন মুজিবকে। জামাতই এই কথা বাতাসে ছড়িয়ে দিচ্ছে এবার শেখ হাসিনা-শেখ রেহানা-সজীব ওয়াজেদসহ শেখ পরিবারের বাকি সদস্যদের একযোগে হামলা চালিয়ে নিশ্চিহ্ন করা হবে। আওয়ামী লীগের এসব বিক্রি হয়ে যাওয়া মাথারা প্রফেসর ইউনুসের কর্মকাণ্ড নিয়ে নেত্রীর মাথা জাম করে দিচ্ছেন। অন্যদিকে তলে তলে গোড়া কাটছে জামাত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে কোনো না কোনো ছুতায় তা স্থগিত রাখা হচ্ছে। রাখছে আওয়ামী লীগের এই বিক্রি হওয়া অংশটাই। এরা মাইনাস শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হয়ে দেশের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। সত্যি যদি জামাতের নীলনকশা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এরা সবার আগে বিবৃতি দিবে আওয়ামী লীগ কত খারাপ, শেখ হাসিনা তার বাবার মতোই স্বৈরাচার ছিলেন বলে।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও এমন একটা হামলার আশঙ্কা ছিলো। শেষ মুহূর্তে শেখ হাসিনা বাতিল করেছেন সামরিক কুচকাওয়াজে তার উপস্থিতি। ১৬ ডিসেম্বরের পরিকল্পনাটা আরো নিখুত হওয়ার কথা এসব স্বাধীনতাবিরোধীদের। মুজিব তার ডান হাতকে বিশ্বাস করে ঠকেছিলেন। আশা করি শেখ হাসিনা সাবধান হবেন। দিন বেশী বাকি নেই। ‘৭৫এ ঘটনা ঘটিয়ে রাস্তায় স্বাধীনতাবিরোধীদের নামিয়ে দিয়ে শ্লোগান দিয়ে বোঝানো হয়েছিলো জনগণ মুজিবকে চায় নি। এই তথাকথিত জনগন আসলে লুকিয়ে থাকা রাজাকার আলবদর সদস্যরা। এবারও তাদের উত্তরপ্রজন্মকে মাঠে নামানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এরা শ্লোগানে শ্লোগানে বুঝিয়ে দেবে দেশে বিপ্লব হয়েছে। ধর্মহীনতার পতন হয়েছে, বাকশালের পতন হয়েছে। দেশ ভারতের দালালমুক্ত হয়েছে। বাঙালীও যথারীতি মেনে নেবে তা। আসলেই কি!! শেখ হাসিনা আপনি সতর্ক হোন। সতর্ক হোন দেশবাসী। এ লড়াই বাচার লড়াই, হারলে মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় অর্জন ধুলোয় মিশে যাবে। এ লড়াইয়ে জিততে হবে।
লিখেছেনঃ অমি রহমান পিয়াল
You must log in to post a comment.