বলধার জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর ছিল ফুলের নেশা। তিনি দেশ-বিদেশ থেকে বহু দুষ্প্রাপ্য ফুলগাছ এনে পুরান ঢাকার ওয়ারীতে তাঁর বলধা বাগান সাজিয়েছেন। এখানে নাম না-জানা অনেক ফুলের দেখা মিলবে। তেমনই একটি চমৎকার ফুল হংসলতা। যেদিন থেকে বলধা বাগানে যাতায়াত, সেদিন থেকেই হংসলতার সঙ্গে পরিচয় আমার। একদিন বলধা গার্ডেনের সাবেক ফরেস্ট রেঞ্জার দেলোয়ার হোসেন হংসলতার সামনে নিয়ে বললেন, ‘দেখুন, কী অদ্ভুতদর্শন ফুল! আর এমন চমৎকার রংবিন্যাস রং-তুলির আঁচড়েও সম্ভব নয়।’ আসলে প্রকৃতির রূপের কাছে সবকিছুই তুচ্ছ! আজও বিস্ময় নিয়ে দেখি হংসলতার ফুল।

হংসলতা একটি চিরসবুজ লতানো গাছ। দৃষ্টিনন্দন হূদয়াকৃতির পাতা উজ্জ্বল সবুজ। গ্রীষ্মের ফুল হলেও এখন প্রায় সারা বছরই গাছে ফুল দেখা যায়। ১০ থেকে ১৫ ফুট লম্বা এই লতানো গাছের সবুজ আর সাদা রঙে মেশানো ফুল দেখতে হাঁসের মতো বলেই হয়তো বাংলায় এর নাম হংসলতা। হংসলতা এ দেশে অতিথি। আদি বাড়ি দক্ষিণ আমেরিকা। ইংরেজি নাম ‘পাইপ ভাইন’। আরেক নাম ‘ডাচ্ম্যান পাইপ’। প্রচলিত নাম ‘ক্যালিকো’। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের দেওয়া নাম Aristolochia elegans।

বলধা বাগানের সাইকি ভাগে দুটি হংসলতার গাছ আছে। একটি গাছ গ্লোব লতার পাশের পাইনগাছকে আঁকড়ে আকাশমুখী, অন্যটি নতুন অফিস ঘরের সামনে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আরণ্যক উপন্যাসে হংসলতার বর্ণনায় লিখেছেন, ‘যুগলপ্রসাদ দেখিলাম বহু ফুল এবং সুদৃশ্য বৃক্ষলতার খবর রাখে। এ বিষয়ে সে যেন একজন বিশেষজ্ঞ, তাহাতে আমার সন্দেহ রহিল না। বলিলাম, তুমি এরিস্টোকিয়া লতা চেন? তাহাকে ফুলের গড়ন বলিতেই সে বলিল, “হংসলতা? হাঁসের মতো চেহারার ফুল হয় তো? পাটনায় দেখেছি, বাবুদের বাগানে।”’ হংসলতার ফুল দেখে মন ভরাতে চাইলে আপনাকে পাটনার বাবুদের বাগানে যেতে হবে না। বলধা গার্ডেনে চলে যান। হংসলতার মুগ্ধতার সঙ্গে বলধা বাগানে বেড়ানোও হয়ে যাবে।