জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার চামড়াঘাট নৌবন্দর থেকে হাওরের পাঁচটি  জেলার ৩৩টি উপজেলার ৩৫ রুটে চলাচলকারী ইঞ্জিনচালিত নৌকার (ট্রলার) ভাড়া পাঁচ থেকে  ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। চামড়াঘাট থেকে হাওরের ইটনা উপজেলায় ৩৫ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা করা হয়েছে। চামড়াঘাট থেকে নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার সামারচরের ভাড়া ৯০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া চামড়াঘাট-সিলেটের শেরপুরের লঞ্চের ভাড়া ১৮০ টাকার স্থলে ২৫০ টাকা করা হয়েছে।
এদিকে হাওরে চলছে এখন বোরো চাষাবাদের ভরা মৌসুম। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সারা হাওরাঞ্চলের কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ইটনার ধনপুর গ্রামের কৃষক ফজলুল হক (৫৫) জানান, হাওরাঞ্চলে এখন চলছে একমাত্র ফসল বোরোর চাষাবাদ। এই বোরো ধান উৎপাদনে কৃষকেরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। কিন্তু তেলের দাম বাড়ার কারণে নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে। ফলে হাওরের কৃষকদের মধ্যে চলছে হাহাকার। বোরো চাষাবাদে হাওরের কৃষকের লাঙল-জোয়াল সুদখোর মহাজনদের হাতে বন্দী। মহাজনদের কাছ থেকে কৃষকেরা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ ও দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করছেন। ইটনার জয়সিদ্দি গ্রামের কৃষক মুখলেছ মিয়া জানান, বোরো চাষাবাদে সেচ দিতে প্রতি একর জমিতে সেচমালিককে পাঁচ মণ করে ধান দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। এখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সেচমালিকেরা ছয় মণ করে ধান দাবি করছেন।

অষ্টগ্রাম উপজেলার কাস্তল গ্রামের শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান জানান, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গোটা হাওরে প্রায় এক কোটি মানুষের বসবাস। যাদের ৯৫ শতাংশই বোরো ধান ও মৎস্য আহরণ করে জীবন চালায়। হাওরের জলমহালগুলো মধ্যস্বত্বভোগী একশ্রেণীর প্রভাবশালীর দখলে চলে যাওয়ায় হাওরের মানুষ মাছ আহরণ করতে পারছে না। ফলে জীবিকার
প্রধান মাধ্যম হলো বোরো ধান। কিন্তু জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো উৎপাদনে সেচে অধিক অর্থ ব্যয় করার পাশাপাশি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের খরচও বেড়ে গেছে। হাওরে
বেসরকারি সংস্থায় (পপি) কর্মরত শাহীন হায়দার জানান, হাওরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে মূলত মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হয়। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায়ও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

নাগরিক অভিমত:
সচেতন নাগরিক কমিটির (কিশোরগঞ্জ) আহ্বায়ক মায়া ভৌমিক বলেন,

হঠাৎ করে দুই দফা তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা ঠিক হয়নি। হাওরের কৃষকেরা বাধ্য হয়ে সুদখোর মহাজনের দ্বারস্থ হয়েছেন। বোরো ধান গোলায় তোলার আগেই পাকা ধান সেচমালিক ও সুদখোর মহাজনদের হাতে তুলে দিতে হবে।

জেলা আইনজীবী সমিতির (কিশোরগঞ্জ) সভাপতি মিয়া মোহাম্মদ ফেরদৌস বলেন,

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি কৃষকের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। বিশেষ করে, হাওরাঞ্চলের কৃষকদের ওপর এই চাপ বেশি পড়বে। কারণ, তাঁরা সেচের ওপর নির্ভরশীল।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কিশোরগঞ্জ সভাপতি আবু খালেদ পাঠান বলেন,

দেশে তেলের দাম বাড়লে হাওরের মানুষ যেভাবে আক্রান্ত হয়, অন্য এলাকায় তা দেখা যায় না। হাওর এলাকার প্রতিটি মানুষ বোরো চাষাবাদে যুক্ত। সেচ ছাড়া বোরো উৎপাদন সম্ভব নয়। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সারা হাওর এলাকায় মাতম শুরু হয়ে গেছে।

লিখেছেনঃ সাইফুল হক মোল্লা