পাষাণে বান্ধিয়া হিয়া বসিল শিওরে |
নিদ্রা যায় নদীয়ার ঠাকুর হিজল গাছের তলে ||
আশমানের চান্দ যেমন জমিনে পড়িয়া |
নিদ্রা যায় নদীয়ার চান্ অচৈতন্য হইয়া ||
একবার দুইবার তিনবার করি |
উঠাইল নামাইল কন্যা বিষলক্ষের ছুরি ||
“উঠ উঠ নদ্যাঠাকুর কত নিদ্রা যাও |
অভাগী মহুয়া ডাকে আঁখি মেইল্যা চাও ||
পাষাণ বাপে দিল ছুরি তোমায় মারিতে |
কিরূপে বধিব তোমায় নাহি লয় চিতে ||
পাষাণ আমার মা ও বাপ পাষাণ আমার হিয়া |
কেমনে ঘরে যাইবাম ফিইরা তোমারে মারিয়া ||
তুমি বন্ধুরে আমার আর লইক্ষ্যা নাই ||
তুমারে মারিয়া আমি কেমনে যাইবাম ঘরে |
পাষাণ হইয়া মা ও বাপে বধিল আমারে ||
কাজ নাই ভিন দেশী বন্ধুরে দুঃখ নাইরে করি |
আমার বুকে মারবাম আমি এই বিষলক্ষ্যের ছুরি ||”
কি কর কি কর কন্যা কি কর বসিয়া |
শিওরে বসিয়া দেখে কান্দিছে সুন্দরী |
হাতে তুইল্যা লইছে কন্যা বিষলক্ষ্যের ছুরি ||
“শুন শুন ঠাকুর আরে শুন মোর কথা |
কঠিন তোমার প্রাণ পিওয়া কঠিন মাতা পিতা ||
শানে বান্ধা হিয়া আমার পাযাণে বান্ধা প্রাণ |
তোমায় বধিতে বাপে করিল সইন্ধান ||
হাতেত আছিল মোর বিষলক্ষের ছুরি |
তোমারে ছাড়িয়া বন্ধু আমার বুকে মারি ||
পালাইয়া মায়ের ধন নিজের দেশে যাও |
সুন্দর নারী বিয়া কইরা সুখে বইসা খাও ||
বরামনের পুত্র তুমি রাজার ছাওয়াল |
তোমার সুখের ঘরে আমি হইলাম কাল ||
কি করিতে কি করিলাম নাহি পাই দিশা |
মাও ছাড়ছি বাপ ছাড়ছি ছাড়ছি জাতি কুল |
ভমর হইলাম আমি তুমি বনের ফুল ||
তোমার লাগিয়া কন্যা ফিরি দেশে বিদেশে |
তোমারে ছাড়িয়া কন্যা আর না যাইবাম দেশে ||
কি কইবাম বাপ মায়ে কেমনে যাইবাম ঘরে |
জাতি নাশ করলাম কন্যা তোমারে পাইবার তরে ||
তোমায় যদি না পাই কন্যা আর না যাইবাম বাড়ী |
“পইড়া থাকুক বাপ মাও পইড়া থাকুক ঘর |
তোমারে লইয়া বন্ধু যাইবাম দেশান্তর ||
দুই আঁখি যে দিগে যায় যাইবাম সেইখানে |
আমার সঙ্গে চল বন্ধু যাইবাম গহীন বনে ||
বাপের আছে তাজি ঘোড়া ঐ না নদীর পারে |
দুইজনেতে উঠ্যা চল যাইগো দেশান্তরে ||
না জানিবে বাপ মায় না জানিবে কেহ |
চন্দ্র সূর্য সাক্ষী কইরা ছাইড়া যাইবাম দেশ ||
আবে করে ঝিলিমিলি নদীর কুলে দিয়া |
দুইজনে চলিল ভালা ঘোড়ায় সুয়ার হইয়া ||
চান্দ সূরুজ যেন ঘোড়ায় চলিল |
চাবুক খাইয়া ঘোড়া শণেতে উড়িল ||