আমাকে খেত খামারের ফুল-ধান খেতের আগাছাই বলা হয়। আমিও এ দেশের আদিম ও অকৃত্রিম গাছ। আমার অনেক খেলার সাথি আছে-মানে যারা আমার চার পাশে বসবাস করে। এদের অনেকের নামকরন করা হয়েছে তোমাদের দেশের নামে। যেমন একজনের নাম-Commelina benghalensis. রাখাল ছেলেরা যাকে বলে কানছিড়া। এর পাতা দেখতে অনেকটা মানুষের কানের মতো। আমার পাতা কিন্তু অন্যরকম- ছোট,পুরু, রসালো ও কাঁচির মতো অনেকটা বাঁকানো।
আমার ফুলের সে রকম কোণ বাহার নেই। তবে আকৃতিতে এক স্বতন্ত্রটা আছে। দেখতে অনেকটা কানের দুলের মতো। তাই হয়তো লোকে বলে কানদুলি। বৈজ্ঞানিক নাম (Cyanotis axillaris, Commelinaceae )কানাইয়া ঘাস নামেও পরিচিত। আমার ফুলের নিচের অংশ পাতার ডাঁটির ভেতর লুকিয়ে থাকে। পাপড়ি তিনটি হালকা বেগুনি রঙের। পুংকেশর ৬ টি, গোটা গায়ে সাদা সাদা নরম রোমের সারি। খুব কম সময়ের জন্য ফুটে থাকি। হেমন্তকালেই আমার ফুলের যতো সব উঁকিঝুঁকি। ধান খেতের স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় বা সেচ দেয়ার পথের আলপথেই আমার শ্রীবৃদ্ধি। আমার বাস দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব দেশের খেত-খামারে। ইন্দোনেশিয়ায় আমাকে চেনে গেওর ও তালিপাইত নামে। থাইল্যন্ডের আযুথা অঞ্চলের ধান খেতেও আমার দেখা মেলে প্রচুর। ওখানে আমার নাম পাক-পরপ্।
আমি অতি সাধারণ ঘাস ফুল হলে কি হবে, আমার বেশ ঔষধি গুন আছে। গ্রামে গঞ্জে কারো হাত পা কেটে রক্ত বেরুলে গাঁদা ফুলের পাতার রস দিয়ে থাকে কাটা ঘায়ে। সেটা শুধু শীত কালে। অন্য সময়েও খেত খামারে কেটে গেলে আমার গাছের কস স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ গাঢ়, ঘায়ের উপর লাগিয়ে দেয়। কারণ আমার কষ জীবানুনাশক। কুষ্ঠ রোগে এমনকি সাপের কামড়েও আমার পাতার রস ব্যহবহার করে থাকে ইন্দোনেশিয়ায়। আমার গাছের রসে আছে গ্লাইকোসাইড, কুমারিক এসিড, আওয়াবেনল ওও এক রকমের তিক্ত পদার্থ।
শিকড় মাথা বেদনা, জ্বর ও পিত্তজ্বরে বেশ উপকারী। ভারত বর্ষের আসামে আমার কান্ডের গিট থেকে তৈরী ঔষুধ মেয়েদের বন্ধ্যাত্বে ব্যবহৃত হয়। এতো সব রোগের ফর্দ দিলাম, ভাবছো বুঝি ভেষজ পন্ডিতেরা খেতের ফুল বলে আমাকে অবহেলা করে গেছেন! না, তারাও আমাকে বেশ কটা নামে বিভূষিত করে গেছেন। যেমন ত্রিপুটা, চিত্রপর্নী, চন্দ্রিকা, অর্ধচন্দ্রিকা, কর্নস্ফোটা ইত্যাদি।
তথ্যসূত্রঃ নওয়াজেশ আহমেদ