করমচার মতো আমার ফুল দেখে চিনতে অসুবিধা হতে পারে।কিন্তু আমার ফল সবাই শনাক্ত করতে পারবে।আমার ৪-৫ শিরাবিশিষ্ট ফল গ্রাম ও শহরের সবার পরিচিত।আমার নাম কামরাঙা।কামরাঙা নামটা এসেছে পুর্তগীজ শব্দ ক্যারামবোলা থেকে। কারণ আমাদের আদিবাস তোমাদের দেশে নয়।আমি এসেছি সুদূর আমেরিকার কলম্বিয়া থেকে। পর্তুগিজ স্প্যানিশ মিশনারি পাদ্রীগণ ষোড়শ শতকের দিকে এ দেশে নিয়ে এসেছিলেন।আমি এখন শুধু তোমাদের উপমহাদেশেই নয়, সারা দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় সুপরিচিত।

আমার ফল খেতে একটু টক হলেও বেশ উপাদেয় ও জনপ্রিয়-কারণ আমার নানা ধরনের উপকারী সব উপাদানের জন্য। অলের রস পিপাসা নিবারক ও জ্বরে শান্তিকর। পাকা ফল অম্লমধুর, রুচিকর, বলবৃদ্ধিকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ। নব্যের সমীক্ষায় দেখা যায় জন্ডিস ও অর্শরোগে আমার ফল বেশ উপকারী। আমার ফলে আছে প্রচুর ভিটামিন সি,অক্সালিক এসিড,ক্যালসিয়াম,পটাশ ও ফসফরাস। আর ফুলে আছে ট্যানিন। তবে আমার ঔষধীগুনের কথা প্রাচীন চরক ও সুশ্রুতাদিতে উল্লেখ নেই। কারণ আমার আদিবাসতো আর এদেশে নয়, তবে সপ্তদশ শতকের ভাবপ্রকাশে আমার নাম উল্লেখ আছে।

কর্ন্মরঙ্গ,শিরাল,বৃহদ্মল,রুজাকর-এগুলো হলো আমার সমলঙ্কৃত নাম। আমার থাই নাম-মাফুয়েনং, শ্রীলংকায় তামারটা, ফিলিপিন্সে কাল্মিতাস, বার্মায় সওনগিয়া, চীনে মাপিংলাং আর মালয়েশিয়াতে বলে কোমবেলা। আমার মধ্যমাকৃতি গাছ দেখতে বেশ সুন্দর,বিশেষ করে পাতার গড়ন ও বিন্যাসের জন্য। আমার ছোট ছোট গোলাপি ফুলের আবির্ভাব হয় জুন থেকে আগষ্ট পর্যন্ত।আমার নিবিড় পাতা ও ডালের আড়াল-আবডাল অনেক ধরনেরপাখপাখালিরপ এক অভয় আশ্রয়স্থান। বিশেষ করে ঘুঘু, বুলবুলি, দোয়েল শালিকের অতি প্রিয় জায়গা। তোমাদের রূপসী বাংলার কবি আমার হলুদরাঙা ফলের বর্ণবিন্যাসকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গেছেন-

আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি এইখানে
বসে থাকি;কামরাঙ্গা লাল মেঘ যেন মৃত মুনিয়ার মতো
গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে-

-ডঃ নওয়াজেশ আহমদ