আমার ফুল দেখে চিনতে একটু কষ্ট হবে। তবে আমাদের ফল তোমাদের খুবই পরিচিত। আমি তোমাদের প্রিয় কালোজাম।গ্রাম বাংলার প্রায় বাড়িতেই ছিল আমার নিশানা। ছিল বলছি এই কারণে যে-আমার অস্থিত্ব দিন দিনই কমে যাচ্ছে। কারণ আমার গাছের লাকড়ি খুবই চাহিদা তোমাদের কাছে। আমার ফলের উৎপাদনই ক্রমেই কমে যাচ্ছে।আমার ছাল রুক্ষ হলেও আমার ঘন সবুজ প্রত্র-মঞ্জুরির ছাওনি দেখতে খুব সুন্দর।আমার বেশ ক’টা জাত আছে। যেমন-ছোট জাম,খুদি জাম,ভুঁই জাম।বাংলাদেশের প্রায় অঞ্চলেই প্রায় আমার উপস্থিতি দেখা যাবে-এক কথায় আমি বাংলার এক আত্নিক বৃক্ষ-

অর্থব বেদের কাল থেকেই আমার ছাল অ ফলের রস ঔষধি গুনের জন্য সুবিদিত ছিল। চরক ও চক্রদাও আমার অনেক গুনের কথা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। আর রাজনিঘ্টুতে আছে-

মহাজম্বু চোষ্ণা সুমধুর কষায়া শ্রমহরা
নিরস্যত্যা স্যস্থং ঝটিতি জড়িমানং স্বরকরী।

মানে গুন পর্যায়ে আমি শ্রমনাশক, ফলের রস অতিসত্বর গলার স্বরের জড়তা দূর করে। অতিসারনাশক ও কফ-কাশের প্রশমক।নব্যের সমীক্ষায় আমার পাতা, ছাল ও ফলে আছে সিটোস্টেরোল, গ্লাইকোসাইডইস, বিটুলিনিকও মাস্‌লিনিক এসিড ও ভিটামিন ডি। আর বীজে আছে ট্যানিন জামবোলিনুও গ্যালিক এসিড। পাতার রস আমাশয়ে উপকারী। পাকা ফল যকৃৎজনিত রোগে উপকারী আর বীজ ডায়াবেটিকস রোগে হাইপোগ্লাইসেমিক এজেন্ট হিসেবে বেশ কার্যকরী।

তাই আমার বীজের গুঁড়ো বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দক্ষিন পূর্ব এশিয়াতে।আমার সংস্কৃত নাম মহাজম্বু, স্বর্ণমাতা,রাজজম্বু, শুকপ্রিয়া কোকিলেষ্ঠা, মহানীলা। আমার পরিবারের অন্য গুনীরা হচ্ছে-হিজল, সমুদ্রফল, কুম্বী, গোলাপজাম, লবঙ্গ, বিলাতি মেন্দি, কাজুপটি, পেয়ারা। আমার শেষ কথা, আমাকে কেটে না ফেললে আমি বহুদিন ফলবন্ত থাকতে পারি শত বছরেরো ওপর। তাই তো বলছে-শাল সত্তুর আসন আশি জাম বলে গাছেই আছি।

ডঃ নওয়াজেশ আহমদ