কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের লোকজ জীবনেই লিলায়িত ও ধাবিত হয়েছে। কিন্তু সূচনা পর্বের কবিগানের কোন সংগ্রহ আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কবিগান পর্যালোচনায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমাদের হতাশাগ্রস্থ করেছে, কারন হারিয়ে যাওয়া কবিগান সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রখ্যাত লোকসাহিত্য সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে আক্ষেপ করেছেন, হাহাকার করেছেন বারবার।
চন্দ্রকুমার দে অন্য একটি প্রবন্ধে বলেছেন-
“অনাদরে ময়মনসিংহের বহু রত্ন হারাইয়াছে, চন্দী দাসই বল আর রাম প্রসাদই বল এ অঞ্চলে জন্মিয়াছিল সবই। জন্মে নাই কেবল রসগ্রাহী ও গুনগ্রাহী ব্যক্তি” ।
চন্দ্রকুমার দে কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের মধ্যযুগে যে সকল কবির সন্ধান পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে মনসামঙ্গলের কবি নারায়ন দেব (পনের শতক) দ্বিজবংশীদাস (ষোড়শ শতক)। সঙ্গীতাশ্রায়ী কাব্য কবিতা কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনচিত্ত রঞ্জনের পর্বটি আমাদের নিকট অত্যন্ত তাৎপর্যময়, এ জন্য যে ঐ কাব্যধারা থেকেই উৎসারিত হয়েছিল কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিগান।।
কবিগান একটি দীর্ঘতম সঙ্গীতানুষ্ঠান। কবিগানের মালসী, ভবানী, সখী সংবাদ, ভোর, গোষ্ঠ ইত্যাদি উপাঙ্গগীত আট প্রকারের সুরে চোদ্দটি স্তবকে বিন্যস্ত একটি অন্যতম প্রাচীন সঙ্গীত ।
কবিগানের উল্লেখযোগ্য অংশের বিষয়বস্তু দেব-দেবীর লীলা, বিশেষ করে রাধা-কৃষ্ণের লীলার বিভিন্ন পর্যায় থেকে গৃহীত। যেমন পূর্ব রাগ-অনুরাগ, রুপোল্লাস, অভিসার, মান, কালহান্তরন, বংশী শিক্ষা, প্রেম বৈচিত্র্য, আক্ষেপানুরাগ, মাথুর, ভাবোল্লাস, মিলন দূতী সংবাদ, সুবল সংবাদ, উদ্ভব সংবাদ, প্রভাসযঞ্জ ছাড়াও বৃন্দাদূতি, কূটবুড়ি, ললিতা, বিশাখা, রঙ্গদেবী, সুচিত্রাদি, অষ্টসখী সেই সাথে সুবল সখা অন্যদিকে প্রেমের প্রতিবাদী-আয়ান ঘোষ জটিলা- কূটিলা, চন্দাবলী ও কুব্জা প্রমূখ চরিত্রের বিষয়াবলী নিইয়ে কবিগানের বিষয়বস্তু নির্ধারিত। কিশোরগঞ্জের কবিয়ালরা তাদের রচিত গানে ঐ সকল চিত্র নানা আঙ্গিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। যে কোণ আসরে চোদ্দ আনা অংশই থাকতো ঐ সকল গান। গান ও জবাব এর মধ্যেই কবিয়ালের কবিত্ব ও কৃতিত্ব নির্ধারিত হতো।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের পনের শতকের কবি নারায়ন দেব একজন শক্তিশালী কবি ছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন পূরান ঘেঁষা কবি। তার লেখায় পৌরাণিক দেব-দেবীর লীলা বিষয়ক বর্ণনা অধিক্য লক্ষ করার মতো। ফলে প্রাক চৈতন্য যুগ থেকেই এই অঞ্চলের কবিরা দেব-দেবীর লীলা বর্ণনায় যে ভাব তৈরী করেছিলেন তা মূর্ত হয়ে উঠেছিল কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে শ্রীচৈতন্য দেবের আগমনের ফলে।
পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জের কবিয়ালরা কৃষ্ণ প্রেমের যথার্থ স্বরুপ অনুধাবন করেই তার গানের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিয়ালদের আসর পরিচালনার বিষয়বস্তুর মধ্যে ছড়া পাঁচালী পরিবেশনের রীতিটা ছিল বড়ই চমৎকার। তারা ছড়া ও পাঁচালী পরিবেশনায় ছিলেন খুবই পারদর্শী। টপ্পা পরিবেশনা ছিল কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিয়ালদের একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
উনবিংশ শতকের শেষ দুই শতক থেকে কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিয়ালদের রচিত গানে দেবদেবী ও পৌরাণিক নায়ক নায়িকাদের কীর্তিকলাপ আলোচনার পাশাপাশি লোক জীবনের সুখ দুঃখ হতাশা ও সমসায়িক ঘটনাবলীর বিবরণ উপস্থাপন করে কবিগানের বিষয়বস্তুতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তাদের রচিত গানের বিষয়বস্তুতে দেশাচার, লোকাচার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আর্থিক অনটন প্রভৃতি সন্নিবেশিত করেছেন যুগের প্রয়োজনে। নীতিশিক্ষা এবং সমাজ শিক্ষার জন্য গাওয়া গান গুলোতে এই অনক্ষর কবিরা সমাজের অভিজাত শ্রেনীর মানুষের জন্য উপদেশ বিষয়ক কাব্য নির্মাণে প্রখর মেধাশক্তির পরিচয় দিয়েছেন।
উপস্থিত রচনার জবাব, টপ্পা, ছড়া, পাঁচালী ছিল কবিগানের এক ধরনের প্রান।বিষয়বস্তুর আঙ্গিকে ফেলেই জবাব, টপ্পা,ছড়া, পাঁচালী পরিবেশন করা হতো। কারণ কবি গানের আসরে বিষয়বস্তুহীণ কোন রচনাই শ্রোতারা গ্রহন করতোনা।
কিশোরগঞ্জের অনেক ক্ষেত্রে কবি গানের বিষয়বস্তু নির্ভর করতো গানের শ্রেনী বিভাগের উপর। যে সকল গান কবিয়ালরা আসরেও পূর্বে রচনা করতেন ঐ শ্রেনীর গান ছিলঃ-
১) ডাক
২) ভবানী/ মালসী / আগমনী
৩) গোষ্ঠ / ভোর
৪) সখী সংবাদ
আসরে উপস্থিত ক্ষেত্রে কবিয়ালদের রচিত গীতগুলির মধ্যে ছিল –
১। ক) সখী সংবাদের জবাব খ) কবির জবাব গ) টপ্পা ঘ) টপ্পার জবাব
২। ধূয়া
৩। ত্রিপদী পাঁচালী
৪। ধূয়া ও সহযোগে গান
৫। পয়াব পাঁচালী
ডাক গান গুলি ছিল দু-ভাগে বিভক্ত-
১) ডাক বা আহবান বা নিবেদন
২) অন্তরা/ ঝুমুর
ভবানী, মালসী, সখী সংবাদ, ভোর এবং গোষ্ঠ গানের যে সকল অঙ্গ রয়েছে সে গুলি হলো-
১) চিতান ২) পাড়ন ৩) ফুকার ৪) মিল ৫) মুখ
৬) ডাইনা ৭) খাদ ৮) দ্বিতীয় ফুকার ৯) মিল ১০) অন্তরা
১১) পরচিতান ১২) পর- পাড়ন ১৩) পর চিতান ফুকার ১৪) মিল
কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিগান রসসমৃদ্ধ ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ছিল তার কিছু উদাহরন নিম্নে উপস্থাপন করা হলো।
ডাকঃ ডাক কবিগানের উদ্ভোদন সঙ্গীত। ডাক গান এবং সেই সাথে মালসী গান কবিগানের আসরের মঙ্গলাচরণ। কবিগানের ভক্তি ও তাত্ত্বিকগান গুলির মধ্যে ডাক গান অন্যতম।ডাক-মালসীর বাদ্য ও সুর শুনেই শ্রোতারা কবির আসরে ছুটে যেতেন। এ বিষহয়ে প্রবাদ বাক্যটি বড়ই চমৎকার।
“যদি শুন কবির কথা, ঠেইলা ফেলি গায়ের কাঁথা”
ডাক গান মূলত দুভাগে বিভক্ত- প্রস্তাবনা ও অন্তরা। ডাক গানে কোণ জবাব গাওয়া হয় না। প্রত্যেক দলেই ডাক গান দিয়ে আসর শুরু করে এবং সেই সাথে মালসী অথবা ভবানী গেয়ে আসর শেষ করে।
ভবানীঃ কবিগানের পূর্ণাঙ্গ সঙ্গীত হচ্ছে ভবানী বিষয়ক গান।ভবানী বিষয়ক সঙ্গীত আত্ম নিবেদন বা মনশিক্ষা ভাবমিশ্রিত করে গাওয়া হতো। এই গানের কোণ জবাব হতোনা। কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের অষ্টাদশ শতকের কবিয়ালরা দেবী মহামায়ার কাছে ভক্তের আকুতি ও আবেদন নিবেদন পর্যায়ে রেখেই ভবানী বিষয়ক গান গুলো গেয়েছেন। তারা, কালী, ভবানী, দশভুজা, মহামায়া প্রভৃতি দশমহাবিদ্যাকে সম্বোধন করেই রচিত হয়েছে ভবানী বিষয়ক গান।
ভবানী বিষয়ক গান-
চিতান- ভবানী ত্বং ভবরানী মহারানী ভবে কর পার
পাড়ন- আমি আসিয়ে ভবের হাটে পড়েছি ঘোর সংকটে
নাই পারের কড়ি না জানি সাঁতার।
ভোর/গোষ্টঃ
অন্ধকার আবাসনে আলোর প্রকাশ, রাখাল বালকরা তাদের পশু নিয়ে মাঠের দিকে যাত্রা। এদিকে মায়ের উদ্বেগ ইত্যাদি হচ্ছে এই গানের বিষয়। গান গুলো গাওয়া হতো খুবই মধুর সুরে। এই গানের জবাব হয়না, ভর গান নিম্নরুপ-চিতানঃ গোপাল বলে সব রাখালে নিশি ভোরে করে গাত্রোথান
পাড়ানঃ শীঘ্র সেবা করে বাল্য ভোগ করবে বলে শুভযোগ-
নন্দালয়ে আনন্দে আগুয়ান।ফুকারঃ
সবার কড়েতে পাচনী নড়ী, খুলে বৃষ গাভির দড়ি
ত্বরিতে গো-পাল তাড়ায় গো-পাল গোপাল, না দেখে দাঁড়ায়
যহোমতি ব্যস্ত হয়ে ধরা চূড়া মোহন বাঁশি দিয়ে
মোহন সাজ এ সাজাইয়া গোলক নাথেরে গোষ্ঠে পাঠায়।
সখি সংবাদঃ কবি গানের প্রান সখি সংবাদ। রাধা কৃষ্ণ লীলা ভিত্তিক সকল শ্রেনী গানকে সখি সংবাদ বলা হয়। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী অবলম্বনে অনুরাগ, পূর্বরাগ, রুপোল্লাস, মিলন, মান, মাথুর, বিরহ, বিচ্ছেদ, আক্ষেপ, বসন্ত, দশম দশা, প্রভাসযজ্ঞ, উদ্ভব সংবাদ, সুবল সংবাদ বিষয়ক গানগুলি সখি সংবাদের অন্তর্ভুক্ত।
রাধা-কৃষ্ণের চরিত্রকে সামনে নিয়ে তাদের চিত্র কল্পনার মাধ্যমে কবিয়াল সরকার সখি সংবাদ রচনা করতেন। সখি সংবাদ রচিত হয় জোড়ায় জোড়ায়। জোড়ার প্রথম গানটিকে সদর গান বলে অভিহিত করা হতো। অর্থাৎ কবিগানের প্রকৃত প্রতিদ্বন্দিতা শুরু হতো সখি সংবাদ গানের মাধ্যমে।
কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিয়ালদের এক অসাধারণ বৈশিষ্ট ছিল সখি সংবাদ গানের জবাব দেওয়ার রীতি। গানের মাধ্যমে জবাব, অপূর্ব এই রীতিতে কবিগান হয়ে উঠতো ভাব-রসসমৃদ্ধ আসর।
চিতানঃ সখি সনে স্বভবনে বসে আছেন রাই
পাড়নঃ
এমন কালে জয় রাধা শ্রীরাধা বলে
বংশী ধবনি করলেন কানাইলহরঃ
শুনে সেই বাঁশরী, ধৈর্যহারা রাই কিশোরী
পড়িলেন ধেয়ে অম্নি ধেয়ে সখি সকলে
কুলে তোলে রাই রতনে, জিজ্ঞাসে মধুর বচনে,
এমন হলে কি কারনে বল গো মন খুলে।।
টপ্পাঃ কবিগানের বিশেষ সময় অতিবাহিত হয় টপ্পা পরিবেশনায়। গানের উদ্দোক্তা বা আসরের শ্রোতাদের নির্দেশ মতো প্রথম দলের সরকার কোন বিশেষ ভুমিকা অবলম্বন করে এবং বিপক্ষ কবিয়ালকে বিপরীত ভুমিকায় রেখে টপ্পা গেয়ে থাকেন। তবে টপ্পা পরিবেশনের সময় সে সঙ্গে ধোয়া ও ছড়া পাঁচালী সহযোগে টপ্পার বিষয়বস্তুকে প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করেন কবিয়ালরা। কবিগানের এই অংশে কবিয়ালদের তাতক্ষনিক রচনা শক্তি, প্রত্যুতপন্নমতিত্ব শাস্ত্রজ্ঞান, বাকচাতুর্য ও বাকবৈদগ্ধের পরিচয় পাওয়া যায়।
কিশোরগঞ্জের কবিগানের কবিত্বঃ
কিশোরগঞ্জের কবিয়ালরা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তকে বিধিবস্তু কাঠামোতে বেধে গান রচনা করতেন। তাদের কবিত্ব শক্তি এতবেশী ছিল যে, আসরে উঠে ততক্ষনাৎ আসর উপযোগী কবিতা বা গীত রচনা করার অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন তাঁরা। কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিয়াল বেশীর ভাগ ছিলেন খুবই কম শিক্ষিত। কিন্তু তারপরেও শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত ব্যক্তিদের মতই রামায়ন মহাভারতের অধ্যায় তারা মন্থন করতেন। তাই ধর্ম সাহিত্য বা ধর্মীয় কাহিনী অবলম্বনে রচিত কবিয়াল সরকারদের গীত অথবা কবিতা অনেক ক্ষেত্রেই সাহিত্য সমৃদ্ধি হয়েছে। কবিয়ালদের গীত অথবা কবিতায় শব্দ চয়নে বাক্য নির্মাণে, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের লোকজ পরিমন্ডলের শব্দ সংযোজনে, বিশেষ করে কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের রসমিশ্রিত আঞ্চলিক শব্দ প্রয়োগে কবিগানের কবিত্ব ছিল কাব্যোর্ত্তীণ।
বিষয়টি অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, কবিগানের সৃষ্টি হয়েছিল একধরনের লৌকিক চেতনা থেকে। কারণ কবিগানের মূল বিষয়বস্তু ছিল রাধাকৃষ্ণের প্রনয়লীলা।
বিরহ পর্যায়ের গানগুলোতে কবিয়ালদের কবিত্ব কোন কোন ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থেই কাব্যোত্তীর্ণ হয়েছে। যেমন নিম্নের বিরহ গানের অংশ থেকে অনুধাবন করা যাবে –
সখি যে বনে আমায় নিয়ে করত ভ্রমন
অনুক্ষন ভুলে তথায় করি অন্বেষন
যেন তারে দেখি দেখি
ও ভুলের দেশে ভাল থাকি
ভুল ভাঙ্গিলে দেখি সখি আগুনে আবৃত বৃন্দাবন ।
কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে কবিয়ালরা বন্দনা ছাড়ায় আসর শুরু করতেন। ঐ সকল বন্দনা ছড়ার রচনা নৈপূণ্য এবং কাব্যশক্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিগানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করলে এই বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, কবিগানের আসরের জন্য বিবিন্ন উপাঙ্গের গান রচনা, উত্তর-প্রত্যুত্তর তৈরী, কবিয়াল সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে তথ্য উদঘাটনে সহযোগিতা করা এবং সুরের মুর্ছনায় আসর মাতিয়ে তোলা ইত্যাদির জন্য যেমন বাঁধণদার থাকতেন, অপরদিকে কিশোরগনজ অঞ্চলের ত্রিধাম কবিয়াল ছাড়া অনেক কবিয়ালই তাদের রচনা শক্তি থাকলেও কবিগানের রচনায় পারদর্শী কবিদের কাছ থেকে দর্শনীর বিনিময়ে গান সংগ্রহ করতেন। এই ধরনের
মাথুর লীলা বিষয়ক গান নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ
আমি বৃন্দা রাধার দাসী, চিন্বে কিহে কালো শশী ?
অনেক দিন হয় দেখাশুনা নাই,
আমিও অনেকক্ষণে, চিনিয়াছি এতক্ষণে,
তুমি মোদের ত্রিভঙ্গ কানাই
তোমারও নাই সাবেক রুপ, আমারও নাই সাবেক রুপ,
স্বরুপ কথা জানাই তোমার কাছে।
বিষয়টি উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিগানে কৃষ্ণলীলা মূলক গানে কবিয়ালদের মধ্যে ভাব সঞ্চারনের বিষয়টি খুবই তাৎপর্যময়। কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিয়ালদের কৃষ্ণলীলা বিষয়ক গীত নিম্নে উপস্থাপন করা হলোঃ
চিতান: শ্রীরাধার মানের দায়ে,
বিরাহে কাতর হয়ে, বাকা বঙশী ধারী।পারাণ- বৃন্দার উপদেশে, নবীনা নাগরীবেশে
এসে মান কুঞ্জে উদয় হইলেন, বন বিহারী ।লহর- তখন হরিকে কালিকা জ্ঞানে,
ভ্রান্ত হয়ে গোপীগণে, প্রনাম করে পায়,
সেই রুপের প্রভায়, সবে মোহ যায়,
ঘল লগ্নী কৃত বাসে, অতি মৃদু মৃদু ভাষে,
গোপীগন কয় দেবীর পাশে, স্থান দিওগো রাঙ্গা পায়।
কিশোরগঞ্জের কবিগানের সুর ও তাল
কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের কবিগান এই অঞ্চলের সাধারণ জনগনকী নিবিষ্ট ভাবে আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছিল। কবিগানের মধ্যে উপাঙ্গের গানের সমাবেশ, বিচিত্রভাবে সমারোহ, বিবিধ তালে এবং বিবিধ সুরের মুর্ছনায় শ্রোতা সাধারণকে বিমোহিত করার মল্ধ্য দিয়েই কবিগানকে উপস্থাপন করা হতো।
কবিগান মূলত সঙ্গীত, কিন্তু গ্রাম্যগীতি। গানের আসরে পরিবেশন করার জন্য রচিত হয় কবিগান। কবিয়াল সরকার গান রচনা করে সুর ও তাল তিনিই নির্দেশ করে থাকেন।
চলবে …
লিখেছেনঃ শিশির
তথ্য সুত্র গ্রন্থঃ কিশোরগঞ্জের কবিগান ও কবিয়াল, মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন শাজাহান