কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর করগাঁওয়ে ইসলামভিত্তিক সংগঠন হিযবুত তাওহীদ সংগঠিত হচ্ছে। এর নেতারা স্থানীয় ছাত্র-যুবকদের মাঝে জিহাদি বইপত্র এবং অডিও-ভিডিওর সিডি বিলি করছেন। করগাঁও, পাঁচলিপাড়া, ডাঙ্গেরগাঁও, জুক্কারপাড় ও পারদিয়াকুলসহ পাঁচ-ছয়টি গ্রামে সংগঠনটির শতাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছে। সংগঠনটির নানা কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে এলাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ চলছে। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী হিযবুত তাওহীদের তৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়েছে। এদিকে, হিযবুত তাওহীদের আটজন সদস্য জনতার চাপের মুখে সংগঠন ত্যাগ করেছে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, হিযবুত তাওহীদের তৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়ে করগাঁওবাসীর স্মারকলিপিটি তিনি হাতে পেয়েছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদনটি পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হয়েছে।পুলিশ সুপার মীর রেজাউল আলম গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে জানান, হিযবুত তাওহীদ নিষিদ্ধ না হলেও তাদের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি আরো জানান, তাদের তৎপরতা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে যথারীতি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত ২৪ জুন করগাঁও বাজারে হিযবুত তাওহীদের কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে সমাবেশ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন হাজী আব্দুল ওয়াহাব বকুল লস্কর। করগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক আফরোজ, সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান কবীর, হাজি আব্দুল করিম, মাওলানা মো. আব্দুল জব্বার প্রমুখ বক্তা সমাবেশে বলেন, হিযবুত তাওহীদের সদস্যরা এলাকার যুব সমাজকে বিপথগামী করছে।
সমাবেশে জানানো হয়, প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে হিযবুত নেতা সেলিম বাদী হয়ে চাঁদাবাজিসহ দুটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। দুটি মামলায় এলাকার ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সমাবেশে ওই সংগঠনের সদস্যদের প্রতিরোধ এবং সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি ওঠে। করগাঁও বাজারের সমাবেশে কয়েক শ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
হিযবুত তাওহীদের করগাঁওয়ের মূল নেতা পাঁচলিপাড়ার গোলাপ মিয়া। সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া জানা এই ব্যক্তি দীর্ঘদিন রাজশাহীতে থাকাকালে চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে এলাকাবাসী জানায়। সেই সময় তিনি পুলিশের হাতে কয়েকবার ধরাও পড়েন। কয়েক বছর আগে গ্রামে ফিরে হিযবুতের কার্যক্রম শুরু করেন। তাঁর অন্যতম সহযোগী পাঁচলিপাড়ার সেলিম মিয়া, চারিপাড়ার শিক্ষক জসিম উদ্দিন, পারদিয়াকুল গ্রামের ফয়জুল ওরফে শাজাহান কবিরাজ, ডাঙ্গেরগাঁওয়ের আতিক মিয়া এবং জুক্কারপাড়ের বিল্লাল মিয়া।
হিযবুত তাওহীদের নেতা মো. সেলিমের মা নাসিমা বেগম এবং স্ত্রী উম্মে সালমা সেলিমের ঘর থেকে বেশ কিছু জিহাদি বইপত্র এবং অডিও-ভিডিওর সিডি আন্দোলনকারীদের হাতে তুলে দেন। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘হিযবুত তাওহীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য’, ‘জিহাদ, কিতাল (সশস্ত্র যুদ্ধ) ও সন্ত্রাস’, ‘আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব’, ‘এই যামানার ইমামের পক্ষ থেকে মহাসত্যের আহ্বান’ প্রভৃতি। সেলিমের মা ও স্ত্রী জানান, পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও সেলিম হিযবুত তাওহীদে যোগ দেন। এরপরই সেলিমের আচরণ বদলে যায়, সংসারের শান্তি চলে যায়। উম্মে সালমা আক্ষেপ করে বলেন, ‘সোনার সংসারে ওরা (নেতারা) আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে।’
হিযবুত তাওহীদ নেতা গোলাপ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর বসতঘরেও তালা। প্রতিবেশীরা জানায়, গত ২৩ জুনই তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। আরেক নেতা মো. সেলিমও একই দিনে গা-ঢাকা দিয়েছেন। সুত্রঃ নাসরুল আনোয়ার /দৈনিক কালের কন্ঠ