গ্রামাঞ্চলে এখনো কিছু কিছু নজরে পড়ে। নিশাচর পাখি হলেও এরা ঝড়-বাদলের দিনে মাছ শিকারে বের হয়। তবে বেশির ভাগই রাতের বেলা জলাশয়ের আশপাশে ঘুরঘুর করে কিংবা জলার ওপরে হেলে পড়া গাছের ডালে বসে শিকারের প্রতিক্ষা করে। মাঝে মাঝেই গম্ভীর স্বরে ডেকে ওঠে ‘ভূত-ভূত-ভূতম’, সাঁঝের বেলা একাকী পথ চলার সময় এদের এমন ডাক শুনলে পিলে চমকে ওঠে ভয়ে। দেখতে ভয়ানক হলেও প্রকৃতপক্ষে এরা অত্যন্ত নিরীহ পাখি, লাজুকও বটে। দিনের বেলায় বড় গাছের পাতার আড়ালে কিংবা গাছের কোটরে লুকিয়ে থাকে। গেছো ইুঁদর-সাপ শিকার করে এরা মানুষের যথেষ্ট উপকার করে। মানুষও এদের খুব একটা ক্ষতি করে না, তবুও এ পাখির সংখ্যা ক্রমেই হরাস পাচ্ছে। বড় পুরানো গাছের অভাবেই মূলত ওদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে।
এ দেশেরই পাখি। বাংলা নাম: ‘খয়রা মেছো পেঁচা’, ইংরেজিতে বলে ‘ব্রাউন ফিশ আউল’ বৈজ্ঞানিক নাম: Ketupa zeylonensis, গোত্রের নাম: ‘ষ্ট্রিগিদি’ ~ এরা হুতোম পেঁচা নামেও পরিচিত।
লম্বায় ৫২-৫৫ সেন্টিমিটার। মাথা, ঘাড়, গলায় কালোর ওপর সাদা ছোপ। মাথার দু’পাশের পালক খানিকটা লম্বা হওয়ায় তা কানের মতো মনে হয়। পিঠ বাদামি-কালো টান। বুক, পেটে রয়েছে হালকা বাদামি-কালো লম্বা টানের ছিট। চোখ গোলাকার বড়সড়ো, জ্বলজ্বল করে। পা ফিকে হলদে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। প্রধান খাবার মাছ। এ ছাড়াও ব্যাঙ, ইুঁদর, ছোট সাপ শিকার করে।
প্রজনন সময় জানুয়রি থেকে এপ্রিল। বাসা বাঁধে গাছের প্রাকৃতিক খোড়লে অথবা পুরনো দালানের ফোঁকরে। ডিম পাড়ে ১-২টি। ডিম ফুটতে সময় লাগে ৩০-৩৫ দিন।
লিখেছেনঃ আলম শাইন,
দৈনিক ইত্তেফাকে প্রথম প্রকাশ