এক দলে ১২টি পাখি। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের শেষপ্রান্ত তেঁতুলিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রামের এক আখখেতে পিউ পিউ সুরে ডাকাডাকি করছিল এরা। একটি পাখি হঠাৎ উড়ে গিয়ে বসল একটি গুল্মের ঝোপে। একটি একটি করে একই পথে অন্য ১১টি পাখিও গিয়ে বসল সেই ঝোপে। এরা দাগি ছাতারে পাখি (Turdoides earlei)। দাগি ছাতারে সামাজিক পাখি। এরা দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। চলেও দলবদ্ধভাবে। দলনেতা আছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে দলের প্রথম পাখিটি যে দিকে উড়ে যাবে, অন্যরা তাকেই অনুসরণ করবে। কেউ পথ হারালে অন্যরা ডাকাডাকি করে তাকে পথ চিনতেও সাহায্য করে। এসব বৈশিষ্ট্য দর্শককে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি পাখিটি চিনতেও সাহায্য করে।
একেকটি দলের নির্দিষ্ট টেরিটরি বা বিচরণ এলাকা থাকে। প্রধানত নদী, খাল, লেক বা জলাশয়ের কাছাকাছি ঘাস-ভূমি, ঝোপ, আখখেত, নলবনে এ পাখিরা বসবাস করে। প্রধানত পোকামাকড়, ছোট শামুক এবং মাঝেমধ্যে গাছের কচি পাতা খায়। এরা কম উড়তে পারে। বরিশাল, শেরপুর, সাতক্ষীরা, পদ্মার চর (মাওয়া, মুন্সিগঞ্জ), সুনামগঞ্জ জেলায় কয়েকবার দাগি ছাতারে পাখির দেখা পেয়েছি। প্রত্যেকবারই দলবদ্ধভাবে চোখে পড়েছে।
দাগি ছাতারে মাঝারি আকারের দুর্লভ পাখি। লেজ লম্বা। দেহের দৈর্ঘ্য চার ইঞ্চি। পালক মেটে বাদামি, তার ওপর কালচে বাদামি রেখা থাকে, যা মাথা, ঘাড়, পিঠ হয়ে লেজের আগ পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। চোখের মণি হলুদ, ঠোঁট হালকা হলুদ, পা সিসা রঙের ও নখর গোলাপি। প্রজননের সময় মার্চ থেকে অক্টোবর। পানির কাছাকাছি নিচু ঝোপে, ঘাসবনে বাসা বানায়। বাসার উপকরণ ঘাস, লতাপাতা। বাসা গোলাকার ও মজবুত। তিন-চারটি ডিম পাড়ে, রং ফ্যাকাশে নীল। দলের সব পাখি ছানাদের দেখভাল, আদর-যত্ন করে।
বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমারে পাখিটি দেখা যায়। নলবন, প্রাকৃতিক ঝোপঝাড় বিনাশের ফলে পাখিটি সংখ্যায় কমে যাচ্ছে।
– সৌরভ মাহমুদ