গর্ভের সন্তান নষ্ট করাতে চাননি স্ত্রী। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামী তাঁর পেটে লাথি মারেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় স্ত্রীর।কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার দশপাখি গ্রামে গত মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত গৃহবধূর প্রতিবেশী ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য খুরশিদ আলম (৪৫) তাঁর চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হালিমা খাতুনকে (৩০) গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। এতে রাজি না হওয়ায় হালিমার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। একপর্যায়ে হালিমা বাধ্য হয়ে রাজি হন। কিন্তু অস্ত্রোপচারের খরচ মেটানো নিয়ে সৃষ্টি হয় নতুন সংকট। চিকিৎসা খরচ জোগানোর জন্য হালিমার ব্যবহূত মুঠোফোন সেটটি বিক্রি করে দেন খুরশিদ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোন সেট বিক্রির টাকা নিয়ে হালিমা ও খুরশিদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে খুরশিদ উত্তেজিত হয়ে হালিমার পেটে লাথি মারতে শুরু করেন। এতে হালিমা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে কটিয়াদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে সেখান থেকে বাজিতপুরের ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।অভিযোগ উঠেছে, হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে হালিমার মুখে বিষজাতীয় পদার্থ ঢেলে দেওয়া হয়েছে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে খুরশিদ দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন।
যোগাযোগ করা হলে নিহত গৃহবধূর মা শরীফা খাতুন বলেন, হালিমার অসুস্থতার কথা বলে খুরশিদ তাঁকে (শরীফা খাতুন) বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। কিন্তু খুরশিদ তাঁকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে না দিয়ে পথে ঝাকালিয়ায় নামিয়ে দেন।শরীফা খাতুন বলেন, হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মেয়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ সময় তাঁর মেয়ে তাঁকে বলেন, ‘খুরশিদ তাঁর পেটে লাথি মেরেছে।’ তাঁর মেয়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানান শরীফা খাতুন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশী কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, হালিমাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে খুরশিদ তাঁকেও ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেন।নিহত গৃহবধূর ছেলে আমিনুল (৯) বলে, ‘আমার মাকে পেটে, পিঠে, ঘাড়ে মারধর করেছে।’কটিয়াদী হাসপাতালের রেকর্ড থেকে জানা গেছে, ইউনুছ নামের এক ব্যক্তি হালিমাকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়ে চলে যান।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল মুক্তাদির ভূঞা বলেন, মেয়েটিকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। পরে তাঁকে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।কটিয়াদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, নিহত গৃহবধূর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
-প্রথম আলো