কিশোরগঞ্জের অধিকাংশ ধানের মোকামে ভরা মৌসুমেও বেচাকেনা নেই বললেই চলে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার বিপুল পরিমাণ জমির ধান নষ্ট হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
ধান কেনাবেচার জন্য জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার চামটা বন্দর ও এর আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক মোকাম। প্রতিবছর এ সময় কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ধান আসে এই বন্দরে। কিন্তু মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে এবার পাল্টে গেছে পুরো চিত্র।
জেলা কৃষি কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ইটনায় চাষ করা ২৯ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির বোরো ফসলের ৭৫ শতাংশ এবং মিঠামইন উপজেলায় ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির বোরো ফসলের ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া করিমগঞ্জ, নিকলী, তাড়াইল ও অষ্টগ্রাম উপজেলায়ও প্রচুর ধান নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলাতেও ফসল নষ্ট হওয়ায় চামটা বন্দরে ধানের সরবরাহ কমে গেছে।
মোকাম-মালিক আবদুল কাদির বলেন, ‘গত কয়েক বছরে এই সময়টাতে কেনাবেচার জন্য নাওয়া-খাওয়ার সময় পর্যন্ত পাওয়া যেত না। কিন্তু এবার শুয়ে-বসে সময় কাটাতে হচ্ছে। এর ফলে লাভ তো দূরের কথা, বিনিয়োগ করা টাকাও ফেরত আসবে না। এদিকে কেনাবেচা না হলেও কর্মচারীদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে।’
শ্রমিক আহম্মেদ হোসেন বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠের ভরা মৌসুমে বাজারের এমন মরা অবস্থা আর দেখি নাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি।’
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘হাওরের কয়েকটি উপজেলার ফসল নষ্ট হওয়ায় বাজারে ধানের সরবরাহ কম। ফলে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ পাঁচ হাজার ২২৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। তবে আশপাশের অন্য এলাকায় ভালো ফলন হওয়ায় খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারিভাবে জরুরি ভিত্তিতে দুস্থগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তা (ভিজিএফ) কর্মসূচি চালুসহ বিনা মূল্যে সার-বীজ সরবরাহের দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।