ভারত সেদেশের পূর্বাঞ্চলীয় বিহার রাজ্যে একটি আন্তর্জাতিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এই ইন্সটিটিউট ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে তাদের কৃষি প্রযুক্তির আধুনিকায়নে সাহায্য করবে এবং উচ্চ ফলনশীল ও বালাই-প্রতিরোধী বীজ সরবারহ করবে।
রোববার ভারতের ৬৪ তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, শিগগিরই ‘বোরলগ ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়া’ স্থাপন করা হবে। এই ইন্সটিটিউটের নামকরণ করা হবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কৃষিবিজ্ঞানী নরম্যান বোরলগ-এর নামে। মনমোহন বলেন, “এই ইন্সটিটিউট ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের কৃষকদের জন্য নতুন ও উন্নতজাতের বীজ এবং নতুন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা নিশ্চিতে অবদান রাখবে।”
নোবেলজয়ী কৃষিতত্ত্ববিদ নরম্যান বোরলগ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্ল্যান্ট প্যাথলজি ও জেনেটিক্স বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি মেক্সিকোতে উচ্চ ফলনশীল ও বালাই-প্রতিরোধী গম উদ্ভাবন করেন। এরপর বোরলগ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সহায়তায় মেক্সিকো, পাকিস্তান ও ভারতে এই উন্নতজাতের গম চাষে সহায়তা করেন। তিনি ভারত ও পাকিস্তানকে ১৯৬৫ ও ১৯৭০ সালের মধ্যে তাদের গম উৎপাদন দ্বিগুণ করতে সহায়তা করেন।
বিশ্বে খাদ্যাভাবজনিত মৃত্যুর কবল থেকে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষকে রক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে বিভিন্ন দেশকে সহায়তার মাধ্যমে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭০ সালে নরম্যান বোরলগকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এই কৃষি বিজ্ঞানী সম্পর্কে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, “ভারতের কৃষির ইতিহাসে নরম্যান বোরলগ এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বছর আগে তিনি নতুন ও অধিক ফলনশীল গমের বীজ উদ্ভাবন করেন।
“এই উন্নতজাতের বীজের মাধ্যমে ইন্ধিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতে সবুজ বিপ্লব সাধিত হয়।” নরম্যান বোরলগ অন্তত পাঁচবার বাংলাদেশ সফর করেন এবং শস্যের বহুমুখীকরণে বিশেষ গুরুত্ব আরোপে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বুদ্ধ করায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেস তাকে বিদেশি ফেলো হিসেবে সম্মানিত করে।
২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৫ বছর বয়সে এই ‘হাঙ্গার ক্রুসেডার’ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর কয়েক সপ্তাহ পর ইন্টারন্যাশনাল মেইজ অ্যান্ড হুইট ইমপ্র”ভমেন্ট সেন্টার (সিআইএমএমওয়াইটি হিসেবে সমধিক পরিচিত)-এর মহাপরিচালক টমাস লামকিন ভারত সরকারের সহযোগিতায় সেদেশে ‘বোরলগ ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়া’ স্থাপনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ভারত সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং বিহারের পুসায় এই ইন্সটিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই ইন্সটিটিউট স্থাপনের জন্য বিহার রাজ্য সরকারের কাছে ৫০০ একর জমি চেয়েছে। এটি টেক্সাস ভিত্তিক ‘নরম্যান বোরলগ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচার’ এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। এই ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠায় ভারত সরকার প্রায় ৫০০ কোটি রুপি ব্যয় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেখানে এসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য নতুন প্রযুক্তি ও উন্নত জাতের বীজ উদ্ভাবনে গবেষণায় নিয়োজিত হবেন।স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে মনমোহন সিং আরো বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সমৃদ্ধি, শান্তি ও সম্পৃতি চাই। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের যে মতবিরোধই থাকুক না কেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে সেসবের নিষ্পত্তি চাই।”