উন্নত লিচুর জন্য বিখ্যাত পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া। এবার এ গ্রামে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ছোট্ট গ্রাম মঙ্গলবাড়িয়ার লোকসংখ্যা মাত্র দুই হাজার। এ গ্রামের এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে অন্তত ৪/৫টি লিচুগাছ নেই। লিচুর চাষ করে এখানকার চাষীরা লাভ করেছেন আর্থিক সচ্ছলতা, দূরীভূত করেছেন দরিদ্রতাকে। মৌসুমের শুরুতেই এখন প্রতিশ’ লিচুর দাম উঠেছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। চাষীদের মতে, প্রতিটি গাছে ৮ থেকে ১২ হাজার লিচু উত্পাদিত হয়।

একেক মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় দেড় কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়ে থাকে। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে দুইশ’ বছর ধরে লিচু চাষ হয়ে আসছে। টক্টকে লাল রং, বড় আকৃতি ও ছোট বীচি; সেই সঙ্গে জিভে জল আসা মিষ্টি স্বাদ—এই হচ্ছে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর বৈশিষ্ট্য। এসব গুণের কারণে এখানকার লিচু এরইমধ্যে দেশের ভোজন রসিকদের মাঝে অর্জন করেছে বিরাট সুনাম। ধীরে ধীরে পাকতে শুরু করেছে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু। বাড়ি-ঘরের আঙিনা এবং রাস্তার দু’পাশে অবস্থিত গাছগুলো ছেয়ে গেছে লাল বর্ণের লিচুতে। চারদিকে রক্তরাঙা লিচুর সমারোহ মুগ্ধ করছে যে কোনো মানুষকে।

এরই মধ্যে গাছগুলো বিক্রি হয়ে গেছে দূর-দূরান্তের পাইকারদের কাছে। আর ক’দিন পরেই শুরু হবে লিচু আহরণের কাজ। পাইকারদের হাত ঘুরে এখানকার লিচু রসনা তৃপ্তি ঘটাবে ভোজন রসিকদের।

মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর গুণাগুণ বর্ণনা করে স্থানীয় গ্রামবাসী তৌহিদ মিয়া বলেন, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে দুইশ’ বছর ধরে লিচুর চাষ হয়ে আসছে। আমাদের গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে লিচুর বাগান আছে। এখানকার লিচু আকৃতিতেও বড় এবং খেতেও মজা। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু কেনার জন্য আসা ব্যবসায়ী মোঃ আবুল কাশেম বলেন, আমি একজন লিচু ব্যবসায়ী। এখান থেকে লিচু কিনে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম নিয়ে বিক্রি করি। এখানকার লিচুর চাহিদা সারা দেশেই।

লিচু বিক্রি করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা উল্লেখ করে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বিশিষ্ট লিচু চাষী মোখলেছুর রহমান দাদা ভাই বলেন, আমার বাগানে ৩০/৩২টি লিচুগাছ আছে। এই লিচু বিক্রি করে অনেক টাকা লাভ করি। এই টাকায় সংসারের খরচ চালিয়েও অনেক উদ্বৃত্ত থাকে। আমার গ্রামের অনেকেই লিচু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর আমেরিকা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরব থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে মঙ্গলবাড়িয়া থেকে লিচু বিদেশে নিয়ে থাকে।

লিচুর উত্পত্তি : পাকুন্দিয়ার মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর উত্পত্তিস্থল বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতীয় কোনো এলাকা থেকে প্রজাতিটি এখানে এসেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, দীর্ঘদিন আগে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে হাসিম মুন্সী নামে এক ব্যক্তি পাহাড়ি এলাকা থেকে একটি লিচুর চারা এনে বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। সেখান থেকে বাছির উদ্দিন নামে আরেক গ্রামবাসী কলম করে তার বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। এভাবেই মঙ্গলবাড়িয়ায় লিচুর প্রসার ঘটে।

সব লিচুই মঙ্গলবাড়িয়ার : মজার ব্যাপার হচ্ছে মঙ্গলবাড়িয়া ছাড়াও পাকুন্দিয়ার প্রায় সবক’টি ইউনিয়নে রয়েছে হাজার হাজার লিচুগাছ। হোসেন্দী ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশি। পাকুন্দিয়া উপজেলার যেখানেই লিচু হোক না কেন, এর নাম অবশ্যই মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু। প্রয়োজনীয় সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রদান করা হলে একদিকে যেমন এখানকার উত্পাদিত লিচুর আবাদ আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব, সেই সঙ্গে বাজারজাতকরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পাল্টে যেতে পারে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র—এমনটাই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।

লিখেছেনঃ মনিরুজ্জামান খান চৌধুরী সোহেল