ফাঁকা ডট কম। স্বত্বাধিকারীর নাম আউলা। আগে পিছে কিছু নেই, জাস্ট আউলা। আউলা নামের ইতিহাস বলার আগে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য জানিয়ে দেয়া প্রয়োজন- এই কাহিনীর আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত পুরাটাই আউলা মস্তিষ্কের ফসল। এর কোনো ঘটনা বা কোনো চরিত্র বাস্তবের ধারে কাছেও নেই।
তারপরও যদি কেউ বাস্তবের সাথে মেলাতে যান, নির্ঘাত তার মাথা আউলা হয়ে যাবে। অবশ্য মাথা যদি আগে থেকেই আউলা থাকে তাহলে সমস্যা নেই। আউলা মাথা আবার যার তার ঘাড়ে মানায় না। এর জন্য এই গল্পের চরিত্র আউলার মতো লোকই প্রযোজ্য।
আউলা চরিত্র কেমন?
এই যেমন, অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে নামলো আউলা। গলির মোড়ে আসতেই কয়েকটা রিকশাওয়ালা এগিয়ে এলো- কই যাবেন?
আউলার জবাব নেই, সোজা হাঁটছে। হাঁটতেই ওর পছন্দ। এগিয়ে এলো আরেক রিকশা। ভাই যাবেন না?
আবারো জবাব না দিয়ে হাঁটছে আউলা। পেছন থেকে টিটকিরি করলো এক ঝালমুড়িওয়ালা, রিকশা ভাড়া বাচায়া, টেকা লইয়া কি কয়বরে যাইবেন?
প্রচ- মেজাজ খারাপ হলো আওলার। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলো ঝালমুড়িওয়ালাকে। তারপরই মেজাজ গলে গেলো তার। ভ্যানের ওপাশে কোনোরকম ঝালমুড়িওয়ালার বড় বড় দুটো চোখ আর এক ঝাঁকড়া চুল দেখা যাচ্ছে। আর পুরো শরীরটাই ভ্যানের নিচে। অর্থাৎ লোকটা বামন।
আওলাকে তাকাতে দেখে বিশ্রীভাবে হাসতে শুরু করলো ঝালমুড়িওয়ালা। আউলা আবারো হাঁটায় মন দিলো। তবে মাথায় থেকে গেলো সেই বামন ঝালমুড়িওয়ালা। আহা বেচারার কতই না কষ্ট।
কিলবিল করতে করতে ছড়িয়ে গেলো চিন্তার জাল। আচ্ছা এই বামনটা এতো বড়ো ঝালমুড়ির ভ্যানকে ঠেলে নেয় কিভাবে? আউলাকে যে আল্লাহতায়ালা বামন বানিয়ে পাঠাননি এ কারণে শুকরিয়া আদায় করলো।
এরপরই ঘুরে যায় চিন্তার বাক। আল্লাহ যদি তাকেই বামন বানিয়ে পাঠাতো, তাহলে কি অবস্থা হতো! আর তাকে যদি ঝালমুড়ি বিক্রি করে রোজগার করতে হতো, তাহলে তো এই ভ্যনটাও ঠেলতে হতো। আগেভাগেই ভ্যান ঠেলার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করা প্রয়োজন। ভাবতে ভাবতে ২০ মিনিটের পথ এগিয়ে গেলো আউলা। কিন্তু কোনো পদ্ধতিই আবিষ্কার হলো না। চিন্তার জাল কেবল এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে।
তারচে ভালো বামনদের পজেটিভ দিক কি কি আছে, সেটা খুঁজে বের করা। আওলা এক এক করে হাঁতড়াতে লাগলো। কিন্তু এখানেও সুবিধা হচ্ছে না। একমাত্র পজেটিভ দিক পেলো, বামনরা ছোটখাটো শরীর নিয়ে খুব সহজেই খাটের নিচে লুকিয়ে পড়তে পারে।
এবার তার আউলা চিন্তা শুরু হলো খাট নিয়ে। চলে গেলো ছোটবেলার সেই পলামঞ্জরি খেলায়। খাটের নিচে লুকিয়ে বলতো ‘টুক্কুরু টুক’। আর অমনি তাকে আবিষ্কারের জন্য ঘরজুড়ে খুঁজতো খেলার ‘কাক’। যে কাক থাকতো, তার কপালে ছিলো শনি। পলামঞ্জরি খেলায় কখনো কাক হলে, ব্যাপক ধরনের আলসেমি করতো আউলা। অন্যদের মতো আন্তরিকতা নিয়ে লুকিয়ে থাকা ছেলেদের খুঁজতো না। শেষে দেখা যেতো বিরক্ত হয়ে ওরাই বেরিয়ে আসতো। কেউ লেপের কোনা থেকে, কেউ বাথরুমের দরজার আড়াল থেকে। আবার দুঃসাহসি কেউ সিলিঙের উপরে।
আউলা কোনোদিন সিলিঙের ওপর ওঠেনি। ওদের বাসার সিলিঙে রাত হলেই একটা ল্যঞ্জা ঢুকে যেতো। কখনো দেখা যেতো ওপর থেকে ওটা প্রস্রাব করে ঘর ভাসিয়ে দিয়েছে। ওহ, কি উৎকট গন্ধ।
গন্ধের তীব্রতা যেনো এখনো আউলার নাকে এসে লাগলো। সাথে সাথেই ঘোর ভেঙে তাকিয়ে দেখলো, অফিসের সামনে চলে এসেছে। নিজের ওপর বিরক্ত হলো সে। আর একটু হাঁটতে পারলে পুরো বিষয়টার একটা হেস্তনেস্ত করা যেতো।
কিন্তু আউলার এসব আউলা চিন্তার শেষ নেই। যত ভাবতে চায়, ততই ভালো লাগে। ভাবনা টাবনা শেষ করে অফিসে ঢোকামাত্রই সহকর্মীর টিপ্পনি, বাইরে কি বৃষ্টি হচ্ছে নাকি?
আউলা একটু হতভম্ব হয়। সাথে সাথেই নিজের দিকে তাকায়। তাইতো সারা শরীর ঘামের জলে একাকার। আরে ধূর, হাঁটলে তো একটু ঘাম দেবেই। এ নিয়ে আউলার ভাবনাচিন্তা নেই।
রোজই সে ঘামতে ঘামতে অফিসে যায়, রোজই সহকর্মীরা জানতে চায় বাইরে বৃষ্টি হলো কি না।
এই সহকর্মীদের নিয়েই আউলার গল্পটা। তবে শিরোনামে লেখা আছে ‘ফাঁকা ডট কম!’। ফাঁকা ডটকমের সাথে সহকর্মীদের আবার কি সম্পর্ক?
আছে, আছে। কাহিনীতে আউলা না লাগালে যুতমতো ফিনিশিং দেয়া যায় না। যুতসই একটা ফিনিশিং পাওয়ার আশায় লেখাটা চোখ বন্ধ করে পড়ে যেতে পারেন।
সত্যি সত্যিই চোখ বন্ধ করে থাকলে বেঁচে গেলেন। না হয়, আপনার মাথাটাও আউলা হওয়ার ক্ষীণ সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। তবে এ থেকে রক্ষার এক উপায়। লেখাটা পড়ার সময় আউলার কোনো কর্মকা-কে ভুল করেও পজেটিভ হিসাবে চিন্তা করা যাবে না।
আপনার সুবিধার্থে তার কিছু নেগেটিভ বিষয় তুলে ধরা হলো- নামকরনের স্বার্থকতা প্রমাণের জন্য সে প্রচ-রকম আউলা স্বভাবের, পোশাক আশাকে আর চিন্তাভাবনায় তো পুরাই আউলা।
সবাই চায় অনলাইন। আর আউলা পড়ে থাকতে চায় অফলাইনে। জ্ঞান গরিমার বালাই একেবারেই নেই। তাই লোকজন ব্যস্ত হয়ে গেলো আউলাকে বুদ্ধিতে পাকা করে গড়ে তোলার জন্য। জ্ঞানী হওয়ার জন্য সময়ের সাথেই থাকতে হয়। অর্থাৎ প্রতিমুহুর্তের খবর রাখতে হয়।
এর জন্য কি করতে হবে? এসব আউলামি ছেড়ে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে চাকরি করতে হবে। সবাই ধরে বেঁধে আউলাকে এমন একটা চাকরিও জোগাড় করে দিলো। সে এখন অনলাইন সাব এডিটর।
সাব এডিটর পদের কথা এর আগে শুনেছে আউলা। সংবাদপত্রে সম্পাদকের পক্ষে যারা সম্পাদনার কাজগুলো করেন, তাদেরকে ইংরেজীতে সাব এডিটর বলা হয়। তবে অনলাইন সাব এডিটর বলে যে কোনো শব্দ থাকতে পারে, এ ব্যাপারে ধারণা ছিলো না। আউলা নতুন একটি শব্দ শিখলো। তবে ছোটো একটা খটকা রয়েই গেলো, অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করলে যদি অনলাইন সাব এডিটর হতে হয়, তবে যারা ছাপা কাগজে কাজ করেন, তারা কি অফলাইন সাব এডিটর?
যা হোক, এসব ভেবে আউলার কোনো কাজ নেই। নিশ্চিন্তে সে জ্ঞানের মহাসমুদ্রে নিজেকে সমর্পণ করলো। আউলার দিন চললো একরকম।
কেউ কেউ হয়তো এই মুহুর্তে একটি ভুল করে বসছেন। ভাবছেন, আউলা যে অনলাইন নিউজ পোর্টালে চাকরি করছে, ওটার নামই ফাঁকা ডট কম।
কিন্তু না। শুরুতেই বলা আছে, ফাঁকা ডটকমের সত্বাধিকারির নাম আউলা। সত্বাধিকারি মানে মালিক। অর্থাৎ আউলা নিজেও একটি অনলাইনের মালিক।
তো, নিজে অনলাইনের মালিক হলে অন্য কোথাও চাকরির প্রয়োজনটা কী?
তাহলে আগে বলে নিতে হয় আউলার ফাঁকা ডটকমের হালচাল- হঠাৎ একদিন আউলার নজরে পড়লো, আলেক্সা র্যাঙ্কিংয়ে তার ফাঁকা ডটকমের বৈপ্লবিক অগ্রগতি।
কিভাবে সম্ভব?
আউলার কপাল কুঁচকালো। এই ফাঁকা ডটকম তো একমাত্র আউলা আর তার পরিচিত দু একটা ঝাউলা ছাড়া অন্য কেউ খুলে না। তাও প্রতিদিন গড়পরতায় এক দুইবারের বেশি খোলা হয় না।
কিন্তু র্যাঙ্কিং এগিয়ে গেলো কিভাবে?
পর দিন অফিসে গিয়েই এর জবাব পেয়ে গেলো আউলা। তবে সেটা বলার আগে ফাঁকা ডটকমের হালাচালটা শেষ করে নেয়া ভালো। এই ফাঁকা ডট কম হলো আউলার অফলাইন জীবনের কীর্তি।
এই কীর্তিটাই যে এতটা নাম কামাবে, তার জানা ছিলো না। হাজার পনেরোশো টাকা খরচ করে ডোমেইন ও হোস্টিং নিয়েই পুরা শুন্যের ওপর শুরু করে দিলো ফাঁকা ডট কম। ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে আউলার সাথে কয়েকজন ঝাউলাও জুটলো। শুরুতে কয়েকদিন দেদারসে পোস্ট দেয়া চললো। একেবারে প্রফেশনাল প্রফেশনাল ভাব। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে চললো ফাঁকা ডটকমের নতুন নতুন সৃষ্টি।
না, যেমন ভাবছেন তেমনটি নয়। আউলা ঝাউলাদের ফাঁকা ডট কম তখনো ছিলো নিজেদের গন্ডির ভেতর। অর্থাৎ আমরা পোস্ট দেবো। আমরাই পড়বো। ঝাউলাদের কয়েকজনের অবশ্য এই ফাঁকা ডটকমকে সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করার শখ হলো। কিন্তু সাজাতে গেলেই অলঙ্কারের প্রয়োজন হয়। আর অলঙ্কারের জন্য অর্থ।
কতটা অর্থের প্রয়োজন পড়তে পারে?
দেশের প্রথম সারির অনলাইনের জন্য তো অনেক অনেক খরচ। দ্বিতীয় সারির জন্যও অনেক। তাহলে তৃতীয় সারির?
ওহু, তৃতীয় সারি, শুনতেই ভালো লাগে না। কিন্তু এ ছাড়া তো আর পথও খোলা নেই। তবে কম খরচে বেশি লাভের একটা পদ্ধতি বের করতে হবে।
কী সেটা?
ছক আঁকা শুরু করলো আউলা। একটি সুশৃঙ্খল ও বাস্তবসম্বত পরিকল্পনাই এনে দিতে পারে সফলতা। এমন ধরনের বস্তাপঁচা থিউরিতে বিশ্বাস করে সে। তাই ঘামতে ঘামতে একটা পরিকল্পনাও সাজালো।
আউলার পরিকল্পনার বিস্তারিত এখানে তুলে ধরা যাচ্ছে না। তবে কারো প্রয়োজন হলে মেডিটেশনে বসে আউলার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
পরিকল্পনার প্রথমেই ছিলো লক্ষ্য। সে কোন শ্রেণীর পাঠকদের জন্য, কেমন ধরনের অনলাইন পোর্টাল তৈরি করবে। যেহেতু তার পক্ষে কোটিপতি কোনো বিনিয়োগকারি পাওয়া সম্ভব নয়। তাই লক্ষ্যটাও ছোট করেই দেখতে হবে।
আর সেই ছোট লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন বড়জোর আবাসিক এলাকার চিপা গলিতে একটা সস্তা অফিস। গোটা দশ লোকবল। আর কিছু প্রয়োজনীয় অফিস সরঞ্জাম।
গোটা দশ লোক দিয়ে কি এতো কাজ সামলানো সম্ভব?
এ প্রশ্নটা আউলাকে করা হলে, সে খামোখাই বিজ্ঞের মতো জবাব দেবে কেন সম্ভব নয়?
কিভাবে সম্ভব জিজ্ঞেস করলে বলবে, সঠিকভাবে জনবলকে হ্যান্ডল করতে পারলেই সম্ভব।
সেটা কিভাবে?
এর জন্য প্রথমে প্রয়োজন দলনেতার যোগ্যতা। দলনেতার সেরা কাজটি করার যোগ্যতা তো থাকতেই হবে। পাশাপাশি তাকে অবশ্যই দল চালানোর যোগ্যতা থাকতে হবে, সে যোগ্যতাটা কেমন?
দল গঠনের জন্য দুই ধরনের লোক বাছাই করা। অভিজ্ঞতাহীন এবং অভিজ্ঞ। একেবারেই অভিজ্ঞতাহীন লোক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলনেতার যে বিষয়টি ভাবাা উচিত, সাংবাদিকতা একটি গুরুমুখি বিদ্যা। কাজ করতে করতে গুরুর হাতে হাতেই সে শিখতে থাকে। নতুন লোকটি গুরুমিখি হয়ে উঠতে পারবে কি না। মূলত সাংবাদিকতার প্রতি তার আগ্রহ কতটা। তার মাঝে কতটা সৃস্টিশীলতা আছে।
আর অভিজ্ঞ লোক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, যে কাজের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, সে কাজটি করার মতো যোগ্যতা তার আছে কি না। মুখের কথার ওপর ভিত্তি করে কাউকে অতিরিক্ত মূল্যয়ন বা অবমূল্যয়ন না করে তার অতীত কাজের রেকর্ড সম্পর্কে জানা। সে কোথায় কোথায় কাজ করেছে, কেমন ধরনের সংবাদ করেছে, কি লিখেছে, কিভাবে লিখেছে এবং কি কি অতিরিক্ত যোগ্যতা তার রয়েছে। এক বা একাধিকবার অন্তরঙ্গ সাক্ষাতকারের মাধ্যমে এসব বিষয় নিশ্চিত হয়ে উপযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে।
নিয়োগের পর দল গঠন হয়ে গেলো। এর পর অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদকীয় নীতি, বৈশিষ্ট সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সদস্যদের অবহিত করা। প্রয়োজনে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কাউকে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া।
পুর্ণ দশজনের একটি দল যদি আউলার নিয়ম মেনে গঠন করা হয়, তবে তার দাবি এ দলটি থেকে সর্বোচ্চ মেধা নিংড়ে নেয়া যাবে। অন্য বিষয়ে যাওয়ার আগে দল বিষয়েই দুটি কথা বলে নেয়া প্রােজন।
আউলা সতর্ক করে বলেছে, দল গঠন করলেই হবে না। দলের শৃঙ্খলা ঠিক রাখার জন্য দলনেতাকে অবশ্যই প্রতিটি সদস্যকে কাজ ও মেধার ভিত্তিতে মূল্যয়ন করতে হবে। আর হতে হবে ন্যয় বিচারক। বিচার নেই দেশে অবিচার চলে। সেখানে কাজের চেয়ে ফাঁকিÑঝুঁকিই বেশি হয়।
এ তো গেলো আউলার লোকবল নিয়োগের ও দলনেতার গুণাবলির কথা। এবার আসা যাক, লোকবল কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তার পরিকল্পনায়।
এ দশজনের মাত্র তিনজন থাকবে প্রতিবেদক। তবে এদের অবশ্যই সাব এডিটরের যোগ্যতাও থাকতে হবে। এরা কেবল বিশেষ বিশেষ কাজে মাঠে যাবে। আর একজন ভালো সাব এডিটরের যোগ্যতা থাকলে এরা গতানুগতিক প্রতিবেদনই তৈরি করবে না। এর বাইরের বিষয়গুলোও তুলে আনবে।
আর বাকিরা থাকবে ডেস্কে। এদের কেউ বাংলা পোর্টালগুলো মনিটরিং করে সংবাদ তৈরি করবে। যাকে খাঁটি বাংলায় বলে মারিং কাটিং। কেউ ইংরেজী থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদ তৈরি করবে। কেউ মফস্বলের সংবাদগুলো করবে। কেউ তৈরি করবে ফিচার।
তবে প্রত্যেকের কাজের মান ঠিক রাখার জন্য অবশ্যই একজনকে এক কাজের ভেতর অন্য কাজ ধরিয়ে দেয়া যাবে না। এতে মনযোগের বিঘ্ন ঘটে।
কিন্তু এ ছোট পরিসরে মফস্বলের সংবাদ পাবে কোথায়?
আউলার পরিকল্পনায় ছিলো, একবার ঠিকঠাকমতো যাত্রা শুরু করলে মফস্বলে ফাঁকা ডট কমের প্রতিনিধির কোনো অভাব হবে না।
মাথার ভেতর এমন একটা সেটআপ দেয়ার পর আউলা চিন্তা করতে বসলো পোর্টালের মানের ব্যাপারে। সে ভাবলো, এতো এতো শ্রম, এতো পরিকল্পনা সব ঢালা হবে একটি পাত্রে। আর সেই পাত্রটার তলা যদি ছিদ্র থাকে তাহলে সব শ্রমই সুর সুর করে নিচে নেমে যাবে। কাজেই প্রথম সারির না হলেও মোটামোটি লাখ টাকা খরচ করে একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরি করতে হবে। এতে কি কি কনটেইন থাকবে, কেমন মেক আপ থাকবে, সব চিন্তা ভাবনা আন্তর্জাতিক মানের। মেকআপের বিষয়ে মোটেও ঝকঝকে তকতকে কিছু আওলার পছন্দ নয়। সে কথায় কথায় বলে ধ্রুুপদি।
মনে প্রাণে পুরনোর দিকেই তার ঝোঁক। সবচে ভালো হয়, যদি পুরনো শ্যঁওলা পড়া একটি পোর্টাল তৈরি করা যায়। মাঝখান থেকে একটু শ্যঁওলা সরিয়ে লেখা থাকবে ফাঁকা ডট কম। কী চমৎকার।
আউলা ভাবে আর মনে মনে দিবা স্বপ্ন দেখে।
তবে এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কেউ আসবে না, সেটা আউলা ভালো করে জানে। ঝাউলাদের অনেকেই অবশ্য আউলার প্রতি নিরাশ নয়। কিন্তু আউলা যা বলার পস্পাপস্টি বলে দিলো। টাকা ছাড়া কোনো স্বপ্ন স্বপ্নই না।
কাজেই ওসব চিন্তাভাবনা বাদ। আউলার হাতে অর্থ নেই। দিন আনে দিন খায়। আর ঝাউলাদের দু’একজনের হাতে অর্থকড়ি কিছু থাকলেও ওগুলো একেবারে হাতের পাঁচ। অবশেষে আউলা আর ঝাউলারা মিলে সিদ্ধান্ত নিলো, কোনোক্রমেই এই অলঙ্কারবিহীন ফাঁকা ডটকমকে লোকজনের সামনে উপস্থাপন করা যাবে না।
কিন্তু মহান আল্লাহ পাকের কি কুদরত, সেই ফাঁকা ডটকম কিভাবে যেনো নিরিবিলি থেকে লোকজনের সামনেই এসে হাজির। ভাগ্যে ভালো কিছু লেখা থাকলে, সেটা আর আটকায় কে?
এমন লিকলিকে অনলাইন পোর্টালকে টেনে টুনে রীতিমতো দেশের পরিচিত একটি অনলাইনের প্রতিযোগী হিসাবে দাঁড় করানো হলো।
আর সেই পরিচিত অনলাইনটিতেই চাকরি করছে আউলা। আউলা তখনো বুঝতে পারেনি, তার অফিসের লোকজন ফাঁকা ডট কমে ঘাঁটাঘাটি করে র্যাঙ্কিং এগিয়ে নিয়ে এসেছে।
একদিন অফিসে যাওয়ার পর পরই আউলা খেয়াল করলো অফিসের আবহাওয়া গরম।
আউলা হাবা গোবা ধরনের লোক। জ্ঞান-গরিমার অভাব। এসব গরম হাওয়ার প্রতি কৌতুহল দেখালো না। কিন্তু কিছু সময় পরই আসল ঘটনাটা ধরতে পারলো। হাওয়াটা গরম হচ্ছে তাকে ঘিরেই।
আউলার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে মহা আউলা তৈরি করে দিয়েছে।
খবর শুনে আরো আউলা হয়ে গেলো সে। সর্বনাশা কা-, কি এমন করেছে?
দু’দিনব্যাপী চললো বিষয়টি। ধীরে ধীরে অভিযোগগুলো মোড় নিতে থাকে। প্রথম দিকের অভিযোগ, তাদের নিউজ পোর্টাল থেকে সব কপি করে ফাঁকা ডট কমে দিয়ে দিচ্ছে আউলা।
কী সাঙ্ঘাতিক কা-রে বাবা, এতোবড় কাজ। রই রই পড়ে গেলো সব যায়গায়। পরে শুনা গেলো ভিন্ন কথা। না সব লেখা নয়, কেবল আউলা তার নিজের লেখাগুলো ফাঁকা ডটকমে দিচ্ছে। তবে সব লেখাই পোস্ট করা হচ্ছে পরিচিত এই অনলাইন অফিসের কাজ ফাঁকি দিয়ে।
মহা সর্বনাশ! আউলার মাথা গরম। ওদিকে অফিসে হইচই। ওপর মহল থেকে তলব। এলেন আইটি বিশেষজ্ঞ। আউলা ভাবলো, অফিসের এতো এতো বিজ্ঞ ও জ্ঞানী গুণীজন যেহেতু বলছেন, তাদের কথা মিথ্যে হতে পারে না।
যথা নিয়মে আউলাকে জিজ্ঞাসাবদ। প্রথম দিকে জ্ঞানী গুণীজনের সম্মানে স্বাভাবিকই ছিলো সে। তবে একটু পর আইটি বিশেষজ্ঞের কথার ছিরিতে হাবা গোবা আউলা পর্যন্ত খ্যঁচ খ্যাঁচ করতে শুরু করলো।
একদিকে আউলার খ্যাঁচ খ্যাঁচানি, অন্যদিকে আইটি বিশেষজ্ঞর ঘর্মাক্ত টাক। আইটি বিশেষজ্ঞ বলেন, ফাঁকা ডট কম আমি সাধারণত ব্রাউজ করি না।
আউলা টাস্কি খায়, নিজের দিকে তাকায়। নিজেকে ফাঁকা ডটকমের মালিক ভেবে গর্বে বুকটা তিন ইঞ্চি ফুলে উঠে।
আইটি বিশেষজ্ঞ বলেন, ফাঁকা ডটকমে অফিস থেকেই পোস্ট দেয়া হয়েছে।
আউলা জিজ্ঞেস করে আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন?
আ.বি বলেন, একই দিনে দুই যায়গাতেই পোস্ট করা হয়েছে।
আউলা বললো, সে অফিসে থাকে দিনের ছয় ঘন্টা। আর একটি দিন হয় ২৪ ঘন্টায়। কখন পোস্ট করা হয় সেটি দেখলেন না কেন?
আ.বি বলেন, আমার কি এতো সময় আছে?
আউলা বললো, এতো সময় নেই, তো কিসের ভিত্তিতে অভিযোগ নিয়ে এলেন?
আ.বি বলেন, অফিসে বাইরে থেকে ফোন এসেছে।
আউলা বললো, ফোন এলো আর আপনি দৌড়ে চলে এলেন অভিযোগ নিয়ে?
ঘর্মাক্ত আইটি বিশেষজ্ঞর পরের কথাগুলো চাপা পড়ে গেলো আউলার খ্যাঁচখ্যাঁচানিতে।
তখন হাবাগোবা আউলাকে দেখা গেলো হাতের ডান দিকে তাকাতে। ওদিকে নিমচা ছাত্রের মতো কম্পিউটার সামনে নিয়ে যেন ইশকুলে ক্লাস করছে এক লোক। আউলার তাকানো দেখেই লোকটার শরীর জুড়ে কাঁপুনি উঠলো।
কেনো, সেটা আউলাও বুঝলো না।
অবশেষে ব্যপারখানা ডিশমিশ করার উদ্দেশে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটা মীমাংসার কথা বললেন। তারা বোঝালেন, তাদের নিউজ পোর্টাল থেকে যেনো কিছু ফাঁকা ডট কমে দেয়া না হয়।
আউলা বেবুঝের মতো উল্টো জানিয়ে দিলো, তার নিজের বিশেষ লেখাগুলো সে যেখানে খুশি সেখানে দেবে।
কর্তৃপক্ষ আইন দেখালেন।
আউলা বললো, আইনের প্রয়োগ করতে চাইলে বিশেষ বিশেষ যায়গায় নয়, সব যায়গাতেই করুন। সব যায়গাতে আইনের বাস্তবায়ন হলে বিশেষ কাউকে চাপাপাপি করতে হতো না। আর সবার আগে নিজেরা কপি পেস্ট বন্ধ করুন।
কর্তৃপক্ষ একটু নাখোশ হলেন। তবে আউলার প্রতি যথেষ্ট আন্তরিকতাও দেখালেন।
আউলা আর তার ফাঁকা ডটকমের গল্পটা আপাতত এখানেই শেষ। তবে লেখার শুরুর দিকে কথা দিয়েছিলাম, শেষ অংশটাতে একটা চমক দেবো। কিন্তু কোনো ধরনের চমক ছাড়াই আউলার গল্পটা শেষ করতে হলো।
আজকাল পাঠকদের সাথে একটু প্রতারণা না করলে চলে না।